চাঁপাইনবাবগঞ্জের ২৫০শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের ভিতরে ছোট ছোট ফুলের বাগান ও বাহিরে আছে কাঞ্চন, নিম, কদম, পাইকড় ও কৃঞ্চচুড়া ফুলের গাছ। আর এই হাসপাতাল ক্যাম্পাসের ছাদে এবং গাছে-গাছে প্রায় দুই-থেকে আড়াই মাস ধরে আসছে লক্ষাধিক চড়ুই পাখি। হাসপাতালে ভিতরে ও বাহিরে প্রতিটি গাছে কিচিরমিচির পাখির কলরব। প্রতিদিন বিকেলের শেষ দিকে কিংবা সন্ধ্যার আগমুহুর্তে ক্যাম্পাসের উপরে করছে গাছে আশ্রয় নেয়ার মোহড়া, ঠিক মহড়া শেষে গাছে-গাছে আশ্রয় নিয়ে খুব সকালে কোথায় যেন চলে যায় আহারের ঠিকানায়। হাসপাতালে শোকাহত পরিবেশ বদলে তৈরি হয়েছে মনোরম পরিবেশ। পাখির কিচিরমিচির শব্দে ঘুম ভাঙ্গে রোগীদের, শুধু রোগী ও রোগীদের স্বজনরাই নয় ছোট ছোট এই চড়ুই পাখির ফুলছড়ি দেখতে ছুটে আসে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহর ও আশেপাশের এলাকার মানুষেরাও।
পাতি চড়ুই (বৈজ্ঞানিক নাম: Passer domestics) বা চড়ুই Passeridea (প্যাসারিডি) গোত্র বা পরিবারের অন্তর্গত Passer (প্যাসার) গণের অন্তর্ভুক্ত ২৫টি প্রজাতির একটি। অ্যান্টার্কটিকা বাদে সব মহাদেশেই এ পাখিটি কমবেশি দেখা যায়। পাতি চড়ুইয়ের বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ গৃহবাসী চড়ুই্। সারা পৃথিবীতে এক বিশাল এলাকা জুড়ে এরা বিস্তৃত, প্রায় ৩ কোটি ৪৮ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে এদের আবাস। তবে এখনও আশঙ্কাজনক পর্যায়ে যেয়ে পৌঁছেনি বলে আই. ইউ. সি. এন. এই প্রজাতিটিকে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত বলে ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয়নি। পাতি চড়ুই ছোটখাটো পাখি। সাধারণত দৈর্ঘ্যে মাত্র ১৬ সেমি (৬.৩ ইঞ্চি) ও ওজনে ২৪–-৩৯.৫ গ্রাম (০.৮৫–১.৩৯ আউন্স) হয়। অপ্রাপ্তবয়স্ক ও স্ত্রী চড়ুইের দেহ মন্দা বাদামি ও ধূসরে মেশানো। পুরুষ পাখির দেহ উজ্জ্বল কালো, বাদামি ও ধূসর চিহ্নযুক্ত।
পাতি চড়ুইয়ের আদি আবাস ইউরোপ, ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল ও এশিয়ায় হলেও বেশ কিছু অঞ্চলে দুর্ঘটনাবশত অথবা ইচ্ছাকৃতভাবে প্রজাতিটি ছড়িয়ে পড়েছে। আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া ও আফ্রিকায় এভাবেই এ পাখিটির আগমণ ঘটেছে। ফলে পৃথিবীতে বন্য পাখিদের মধ্যে পাতি চড়ুইই সবচেয়ে বেশি এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। মানববসতির আশেপাশে সহসাই পাতি চড়ুইয়ের দেখা মেলে। শহরে বা গ্রামে, মানববসতির কাছাকাছি যেকোন পরিবেশে এরা নিজেদের স্বচ্ছন্দে মানিয়ে নিতে পারে। প্রতিকূল পরিবেশে খাপখাইয়ে নেওয়ার অসাধারণ ক্ষমতা থাকলেও সাধারণত জনহীন বনভূমি, তৃণভূমি ও মরুভূমিতে এরা বসবাস করে না। শস্যদানা ও আগাছার বীজ এর প্রধান খাদ্য হলেও সুযোগ পেলে পোকামাকড়, উচ্ছিষ্ট ও নানান রকমের খাবার পেলে ছাড়ে না। বিড়াল, বাজ, প্যাঁচাসহ বিভিন্ন প্রজাতির শিকারী পাখি এবং স্তন্যপায়ী এর প্রধান শত্রু। পাতি চড়ুই কামনা, যৌনক্ষমতা, যৌনবিকৃতি ও অতি-সাধারণতার প্রতীক।
হাসপাতাল ক্যাম্পাসের মালি আব্দুল কাদের ও গ্যারেজ মালিক আনারুল ইসলাম বলেন, নিজে তারা আনন্দ উপভোগ করেন, আর এলাকার মানুষেরা এসে ছবি তুলে নিয়ে আনন্দ করেন। হাসপাতালের মেডিক্যাল এসিস্ট্যান্ট ডাঃ সাদিকুল ইসলাম সকলকে অনুরোধ করে বলেন, পাখিদের যে অবাদ বিচরণ, যেন মনোমুগ্ধকর পরিবেশ, কেউ যেন এইসব পাখিদের বিরক্ত না করে। চাপাইনবাবগঞ্জ সেভ দ্যা নেচার এর প্রধান সমন্বয়ক রবিউল হাসান ডলার বলেন, এইগুলো হচ্ছে ইউরোসিও গাছচুড়ুই, সাধারণত দলবদ্ধভাবে গাছে থাকে, চুড়ুইগুলো সূর্যদ্বয়ের সাথে সাথে মাঠে যায়। আবার সূর্য ডোবার সাথে সাথে এরা নির্দিষ্ট জায়গায় ফিরে আসে। বাংলাদেশ বন্য প্রানী সংরক্ষন নিরাপত্তা ২০১২ আইন অনুযায়ী এই পাখি শিকার আইনত দন্ডনীয় অপরাধ। তিনি সকলকে এই পাখিসহ অন্যান্য বিভিন্ন ধরেন পাখি সংরক্ষনে এগিয়ে আসার আহবান জানান।