চাঁপাইনবাবগঞ্জে কোটি টাকা প্রতারণার ঘটনায় প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে ৪টি মামলা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। ১ কোটি ৬৩ লাখ প্রতারণার অভিযোগে চার জন ভুক্তভোগি মামলা দায়ের করেছেন। ওই মামলায় জামিনে থাকা প্রতারকরা বাদীদের মামলা তুলে নিতে বিভিন্ন ধরনের হুমিক দিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সদর উপজেলার চরমহনপুর এলাকার প্রতারক চক্রের হোতা রেজাউল ইসলাম। তার ভাই মো. মনিরুল ইসলাম রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশে মতিহার জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার। পুলিশি ক্ষমতা ব্যবহার করে বিভিন্ন মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়ার হুমকি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগিদের। ওই চক্রের বিরুদ্ধে চার কোটি টাকা প্রতারণার অভিযোগে রয়েছে।
প্রতারণার মামলায় কারাগারে থাকা প্রতারক চক্রের নারী সদস্য প্রতারণার কৌশল ও সংঘবদ্ধ চক্রের বিষয়ে স্বীকারোক্তিমূলক এফিডেভিড দিয়েছেন। জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে কারাগার থেকে স্বাক্ষরিত ননজুডিশিয়াল স্ট্যাম্পের একটি কপি রয়েছে। এফিডেফিডে অভিযুক্ত প্রতারক চক্রের নারী সদস্য বিউটি বলেছেন, তার স্বামী রেজাউল ইসলাম রেজা, ইসলামী ব্যাংক কর্মকর্তা মিজানুর রহমান তাকে জানান, ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ৩৫ হাজার কোটি টাকা সহায়তা আসছে। সেই এনজিওতে তিনি মাঠকর্মী হিসেবে কাজ শুরু করেন। সে সময় ৫০-৬০ জনের কাছ থেকে প্রায় চার কোটি টাকা সংগ্রহ করেন তিনি। সংগৃহীত টাকা রেজাউল ও মিজানুর রহমানের কাছে আছে। তিনি আরও বলেছেন, আমাদের কর্মকান্ড গোপন রাখতে তাদের মসজিদে শপথ করানো হয়। রেজাউল ইসলাম, মিজানুর রহমান ও কাবির নিজেদের ইউরোপীয় ইউনিয়নের দাতা সংস্থার প্রতিনিধি, কখনও ব্যাংক কর্মকর্তা ও প্রশাসনের ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তার পরিচয় দেন। মিজানুর রহমান সে সময় ইসলামী ব্যাংক রাজশাহী শাখায় কর্মরত ছিলেন। তার স্বামী রেজাউলের বাড়ি, গাড়ি ও সম্পদ সবই প্রতারণার মাধ্যমে নেয়া টাকায়। বিউটির মা ও মামলার অন্যতম আসামি সেমালী বেগমও এফিডেভিটে সবকিছু স্বীকার করেছেন।
প্রতারণার মামলায় জামিনে থাকা সেমালী বেগম বলেন, আমার মেয়ে বিউটিকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিয়ে করে রেজাউল ইসলাম। তাকে দিয়ে মাঠপর্যায়ে লোকজনের কাছ থেকে টাকা আদায় করেছে। রেজা বারবার বলে আসছে, আমার ভাই এসপি আমি সব ম্যানেজ করে নেবো। তোমাদের নামে কোন মামলা থাকবে না। এসব বলে আমাদের সব জমিজমা বিক্রি করিয়ে মামলার পেছনে খরচ করিয়েছে। আমাদের পথের ভিখারি করে রেখেছে। তিনি আরও বলেন, মেয়ের সংশ্লিষ্টতার কারণে আমাকে ও আমার স্বামীকে মামলায় আসামি করা হয়েছে। আমার মেয়ে এখনও জেলে। আমাদের আবার জেলে পাঠানোর হুমকি দিচ্ছে রেজা। প্রতারণার শিকার দুরুলের স্ত্রী ফেরদৌসী বেগম বলেন, আমাদের নানাভাবে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। এলাকায় থাকতে পারছি না। মামলার বাদী মো. কালাম বলেন, টাকা না দিয়ে আদালত থেকে জামিনে থাকা অভিযুক্ত প্রতারকরা ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। ঢাকায় দুটি মিথ্যা মামলা করেছে। আবারও ৬৪ জেলায় মামলা ও বিবস্ত্র করে মারধরের হুমকি দিচ্ছে তারা।
প্রতারণার শিকার দুরুলের ছেলে আসমাউল বলেন, প্রতারক চক্রের হোতা রেজার ভাই মনিরুল ইসলাম পুলিশের এসপি। তার প্রভাবে মামলার বাদী ও সাক্ষীদের বাড়িতে লোক পাঠিয়ে নানারকম ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। এমনকি আমাদের হয়রানি করতে ঢাকায় দুটি মিথ্যা মামলাও করেছে তারা।
এ বিষয়ে কথা বলতে মামলার প্রধান আসামি রেজাউল ইসলাম রেজার বাসায় গেলেও তাকে পাওয়া যায়নি। মুঠোফোনে কল দিলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে জানতে ইসলামী ব্যাংক কর্মকর্তা অভিযুক্ত প্রতারক মিজানুর রহমানের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয়। তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামালা করা হয়েছে। ব্যাংকে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগও দিয়েছিল তারা। ব্যাংক থেকে আমাকে শোকজ করে। আমি জবাব দিয়েছি। একটি মামলা পিবিআই তদন্ত করছে। অন্য মামলাগুলো আদালতে বিচারাধীন। এ বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই।
পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন রাজশাহী কার্যালয়ের উপ-পরিদর্শক (এসআই) কুতুব উদ্দীন বলেন, মামলার বিষয় নিয়ে বাদী ও বিবাদী উভয়ের সঙ্গে কথা হয়েছে। এ মামলায় দুজন আসামি ঊর্ধ্বতন আদালতের আদেশে জামিনে আছেন। শিগগির তদন্ত শেষে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে।