চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার বাখের আলী বিজিবি ক্যাম্পের নিয়ন্ত্রনাধীন সীমান্ত দিয়ে চোরাই গরু আনতে গিয়ে এক রাখাল নিহত হয়েছে। নিখোঁজ আরও তিন রাখাল বলে জানা গেছে। এবিষয়ে ৫৩ বিজিবি’র বাখের আলী ক্যাম্প কমান্ডার নায়েক সুবেদার আব্দুস সামাদ কিছুই জানেন না বলে জানান। নিহত রাখাল, সদর উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের তাহের হাজির গ্রামের সোহেল (উজ্জল) (৪০)। সোহেল গোদাগাড়ী উপজেলার পুসুন্দা গ্রামের তমিজুলের ছেলে। এলাকাবাসী জানায়, আরও তিনজন রাখাল নিখোঁজ রয়েছে। তিনজনের মধ্যে একজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। সে হলো সদর উপজেলার সুন্দরপুর ইউনিয়নের বাগডাঙ্গা গ্রামের মৃত আনসার আলীর ছেলে আলম (২৯)।
নিহত রাখাল সোহেলের স্ত্রী জানায়, তাকে না জানিয়ে ২ জানুয়ারি সে কোথায় গেছে, তা তার জানা ছিলনা। গত বৃহস্পতিবার (১০ জানুয়ারি) জানতে পারে তার স্বামী ভারতে গরু আনতে গিয়ে মারা গেছে। গরু আনতে গিয়ে এর আগেও অনেক বৃহস্পতিবার (১২ জানুয়ারী) নিহতের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, অনেক লোকজনের ভিড়। জীর্নসীর্ন বাড়ি। সেখানে ভারতের এক লোকের সাথে ইমুতে কথা বলতে দেখা যায় এক যুবককে। সেই যুবক বাবু জানায়, চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নের চাকটোলা গ্রামের মৃত ফিরোজ মেম্বারের ছেলে গোল কাজলের গরু আনতে গিয়ে সোহেল ওরফে উজ্জল মারা গেছে। পরে গোল কাজলের বক্তব্য নিতে তার বাড়ি গেলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে পরে তিনি মোবাইলে জানায়, তার গরু নয়, আজিজুলের গরু আনতে গিয়েছিল সোহেল। নিহত রাখাল সোহেলের ভাই সাইফুল ইসলাম জানান, সোমবার এবিষয়ে আদালতে মামলা করা হবে। এবিষয়ে বাখের আলী বিজিবি ক্যাম্প কমান্ডার নায়েক সুবেদার আব্দুস সামাদের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনি কিছু জানেন না। কেউ মরে থাকলে বিএসএফ জানালে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, চরবাগডাঙ্গা, ইসলামপুর, নারায়নপুর, শাহজাহানপুর ও দেবীনগর ইউনিয়নে গরুপাচারকারীরা সক্রিয় রয়েছে। এরা স্থানীয়ভাবে ম্যানেজ করে ভারত থেকে এসব গরু আনে চোরাকারবারীরা। গরু চোরাকারবারী সিন্ডিকেটের কয়েকজনের নাম পরিচয় পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে কয়েকজন ভারতীয় গরু চোরাই পথে আনার কথা স্বীকার করেছে। গরু পাচারকারী চক্রের সদস্য হলেন, চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নের টিকলিচর (বাখের আলী) গ্রামের জহুর আলীর ছেলে সৈবুর রহমান ছবি (৪০), মুনতিনি পাড়ার তবজুলের ছেলে আলী হোসেন (৩৮) ও সুমন (৩৬), টিকলীচরের জালাল উদ্দীনের ছেলে বাখীদুর (৩৫), নাপিত পাড়ার আইনালের ছেলে শাহাদাত (৩৫) ও আসাম উদ্দীনের ছেলে মহসিন (৫৫), বিশ্বাস পাড়ার কসুমুদ্দীনের ছেলে শফিকুল (৩০), সাইদের ছেলে রাসেল (৩২), আমজাদের ছেলে আজিজুল (৪৫), টিকলির চরের জারদিস (মটর)’র ছেলে গোলাম মোস্তফা গুধা (৩০), মুনসুরের ছেলে শাহালাল (৩৯) ও বুধ্ধুর ছেলে শাকিল, নারায়নপুর ইউনিয়নের বেল পাড়া গ্রামের মান্নানের ছেলে মাসুদ (৩৭), শামসুলের ছেলে তরিকুল (৪২), বেলালের ছেলে জামাল (৩৫), ওবাইদুরের ছেলে মাসুদ (৩৭)সহ আরও অনেকে। রাখাল দেখ ভালের কাজ করেন, সুন্দরপুর ইউনিয়নের জোগানদার পাড়ার মৃত পোড়া কালুর ছেলে কামরুল (৪০)। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক গরু চোরাকারবারী বলেন, একজোড়া ভারতীয় গরু বাংলাদেশে এনে দিতে পারলে রাখালকে ৪০-৫০ হাজার টাকা দেয়া হয়। গরু আনার পর তারা রাজশাহীর সিটি হাট এবং তক্তীপুর হাটের ছাড়পত্র দেখিয়ে বিজিবি’র নিকট হতে দেশীয় গরু হিসেবে অনুমতি নেয়া হয়। একজোড়া গরুতে মোটা অংকের টাকা খরচ হয় বলে জানান তিনি। সর্বশেষ খবর রবিবার (১৫ জানুয়ারী) সন্ধ্যা পর্যন্ত মৃত রাখাল সোহেলের লাশ পাওয়া যায়নি বলে সোহেলের ভাই সাইফুল ইসলাম নিশ্চিত করেন। জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসী সুত্রে জানা যায়, চোরাই গরু আনতে গিয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের রঘুনাথগঞ্জ থানায় সম্প্রতি আটক হয়েছে ডজনখানেক বাংলাদেশী রাখাল। এদের মধ্যে চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নের টিকলিচর নাপিতপাড়ার সেতাবুরের ছেলে তাজেল (২৮), একই ইউনিয়নের বকরিপাড়ার হাকিমের ছেলে টিপু (৩২) এবং সুন্দরপুর ইউনিয়নের নবাবজায়গির গ্রামের মৃত ইয়াসিন মোল্লার ছেলে আব্দুল্লাহ (৪০)সহ আরোও অনেক গরুর রাখাল আটক হয়ে আছেন। এব্যাপারে চাঁপাইনবাবগঞ্জস্থ ৫৩ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেঃ কর্নেল মোঃ নাহিদ হোসেন জানান, ওই সীমান্ত দিয়ে গরু চোরাচালান হচ্ছে, অবৈধভাবে আসা গরুগুলো আমরা ধরছি, বিজিবি সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে গরু চোরাকারবারীদের বিরুদ্ধে। যেন তারা অবৈধভাবে গরু আনতে না পারে। তারপরও আমাদের চোখে ফাঁকি দিয়ে কেউ অবৈধভাবে গরু আনতে পারে। গরু চোরাকারবারীদের বাড়িতে বাড়িতে রাতেও তল্লাশী চালানো হয়, তারা বাড়িতে অবস্থান করার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য। আমাদের অভিযান অব্যহত রয়েছে। কেউ যেন অবৈধভাবে সীমান্তের ওপারে যেতে না পারে, সেজন্য সীমান্তে কড়া নজরদারী রাখা হচ্ছে।