চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে সংঘটিত আদিবাসী সাঁওতাল কৃষকদের বিদ্রোহ ইতিহাসে ‘নাচোল বিদ্রোহ’ নামে পরিচিত। এটি তেভাগা আন্দোলনেরই একটি অংশ। ৫ জানুয়ারি, ১৯৫০ পুলিশ বাহিনীর একজন কর্মকর্তার নেতৃত্বে একদল কনস্টেবল নাচোলের চন্ডীপুর গ্রামে আসে। গ্রামবাসী সংগঠিত হয়ে পুলিশ বাহিনীকে পাল্টা ঘেরাও করে বিক্ষোভ করতে থাকে। বিক্ষোভের একপর্যায়ে উম্মত্ত গ্রামবাসী ওই পুলিশ কর্মকর্তা ও পাঁচজন পুলিশ কনস্টেবলকে হত্যা করে। এর দুইদিন পর ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী অভিযান শুরু করে। ১২টি গ্রাম ঘেরাও করে তছনছ করে, ঘরবাড়ি ধ্বংস করে, চারদিকে গুলি চালিয়ে হত্যা করে অনেক গ্রামবাসীকে।
অস্ত্রে সজ্জিত সেনাবাহিনীর সঙ্গে তীর ধনুকে সজ্জিত সাঁওতাল, হিন্দু ও মুসলিম কৃষকদের বেশিক্ষণ যুদ্ধ চালানো সম্ভব ছিল না। কিছুক্ষণের মধ্যেই গ্রামবাসী পিছপা হতে শুরু করে। গ্রামবাসী সরে যাওয়ার পর আন্ডার গ্রাউন্ডের নেতাদের অব¯’ান বের করা সহজ হয়ে যায়। রমেন্দ্র মিত্র ও মাতলা মাঝি পালিয়ে ভারতে চলে যান। ইলা মিত্র ৭ জানুয়ারি সাঁওতাল বেশ ধারণ করে ভারতে যাওয়ার চেষ্টা করেন। ভারত সীমানা পার হওয়ার প্রস্তÍুতিকালে ইলা মিত্র ও তার সঙ্গীরা চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলা সদর রহনপুর রেলস্টেশনে ধরা পড়ে যান। তবে পরবর্তীসময়ে পূর্ববঙ্গ জমিদারি অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইনের আওতায় সাঁওতাল চাষীদের জমির ওপর অধিকার দেওয়া হয়। ইলা মিত্রসহ সকল বন্দি মুক্তি লাভ করেন।