আদিবাসী হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি, সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক মন্ত্রণালয় ও ভূমি কমিশন গঠনসহ ১৬ দফা দাবিতে নওগাঁয় বিক্ষোভ সমাবেশ ও জেলা প্রশাসনের (ডিসি) কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচি পালিত হয়েছে। বিক্ষোভ মিছিল ও ঘেরাও কর্মসূচি শেষে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর ১৬ দফা দাবি সংবলিত স্মারকলিপি প্রদান করে আদিবাসী নেতারা। জাতীয় আদিবাসী পরিষদ নওগাঁ জেলা শাখার আয়োজনে এই বিক্ষোভ ও ঘেরাও কর্মসূচি পালিত হয়। এই কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে মানবাধিকার সংস্থা ব্রতী ও উন্নয়ন সংস্থা পল্লী সহযোগী বিষয়ক সংস্থা (আরকো)’র কর্মীরা অংশ নেন। বুধবার সকাল থেকে নওগাঁ শহরের আব্দুল জলিল শিশু পার্কের সামনে জড়ো হয় জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী মানুষ। সেখান থেকে বেলা সাড়ে ১১টায় বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি নওগাঁ-রাজশাহী মহাসড়ক হয়ে জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে গিয়ে পৌঁছায়। এ সময় তাঁরা জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে সমাবেশ করেন। জাতীয় আদিবাসী পরিষদ নওগাঁ জেলা শাখার আহ্বায়ক নরেন পাহানের সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ নওগাঁ জেলা শাখার যুগ্ন আহ্বায়ক মহেন্দ্রনাথ পাহান, সদস্য সচিব মার্টিন মুর্মু, উপদেষ্টা ও বাসদ নেতা জয়নাল আবেদিন, ওয়ার্কার্স পার্টির সমন্বয়ক শহীদ হাসান সিদ্দিকী, নওগাঁ জেলা সিপিবির সভাপতি মহসীন রেজা প্রমুখ। বক্তারা বলেন, স্বাধীনতা পরবর্তী সকল সরকারই আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর প্রতি জাতিবিদ্বেষী ও বৈষম্যমূলক আচরণ জারি রেখেছে। এই ধরণের আচরণ তাঁদের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করেছে। সংবিধানে কোনোমতে আদিবাসীদের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হলেও আদিবাসীদের আত্মপরিচয়, স্ব স্ব ভাষা, ধর্মসহ অনেক কিছুই অস্বীকৃতি রয়ে গেছে। আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বৈচিত্র্য ও সংস্কৃতির অধিকার আদায়ে তাঁদেরকে আদিবাসী হিসেবে সংবিধানে স্বীকৃতি দিতে হবে। এছাড়া, আদিবাসীদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ ও তাঁদের প্রতি নির্যাতনের ঘটনা ঘটেই চলেছে। রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী উপজেলায় সম্প্রতি সেচের পানি না পেয়ে দুই আদিবাসী বিষপানে মৃত্যুর ঘটনা এক ধরণের হত্যাকাণ্ড। এই ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক বিচার হওয়া দরকার। এর আগে নওগাঁর বহুল আলোচিত আদিবাসী নেতা আলফ্রেড সরেন হত্যা, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্মে তিন সাঁওতাল হত্যাসহ আদিবাসীদের ওপর ঘটা বহু ঘটনার ন্যায়বিচার এখনও নিশ্চিত হয়নি। আন্দোলনকারীদের একটি প্রতিনিধি দল জেলা প্রশাসক খালিদ মেহেদী হাসানের হাতে স্মারকলিপি প্রদান করেন। স্মারকলিপি গ্রহণের পর জেলা প্রশাসক সমাবেশ উপস্থিত হয়ে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, ১৬ দফা দাবি সংবলিত স্মারকলিপি তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানোর ব্যবস্থা করবেন। যে কোনো যৌক্তিক দাবি ও অধিকার আদায়ে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের সহযোগিতার আশ্বাসও দেন তিনি।