1. tohidulstar@gmail.com : sobuj ali : sobuj ali
  2. ronju@chapaidarpon.com : Md Ronju : Md Ronju
নিয়ামতপুরে শুরু হলো বাংলার ঐতিহ্য তালতলীতে তৃতীয়বারের মত তালপিঠা মেলা - দৈনিক চাঁপাই দর্পণ
শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ০৭:০৬ পূর্বাহ্ন

নিয়ামতপুরে শুরু হলো বাংলার ঐতিহ্য তালতলীতে তৃতীয়বারের মত তালপিঠা মেলা

নিয়ামতপুর (নওগাঁ) প্রতিনিধি
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
  • ১০৮ বার পঠিত

নিয়ামতপুরে শুরু হলো বাংলার ঐতিহ্য তালতলীতে তৃতীয়বারের মত তালপিঠা মেলা

পথের দুই ধারে সারি সারি তালগাছ। গাছের ফাঁকে ফাঁকে বসেছে হরেক রকমের পিঠার স্টল। সড়কের মাঝখানে উন্মুক্ত চলছে লোকগান আর নৃত্য। স্টলগুলোতে থরে থরে সাজানো কানমুচড়ী, ফুলঝড়ি, মুইঠা, পুলি, পাতা নকশীসহ হরেক রকমের পিঠা। হরেক রকম পিঠার মাঝে পিঠা উৎসব মাতে, ভিন্ন ভিন্ন স্বাদ পাওয়া যায় হরেক রকম হাতে। পিঠা মানেই গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য। প্রকৃতি যে কত টা সুন্দর এবং কত ধরনের সাজসজ্জায় নিজের সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলতে পারে তা কেবল নওগাঁ জেলার নিয়ামতপুর উপজেলার হাজিনগর ইউনিয়নের ঘুঘু ডাঙ্গা তালতলী আসলেই অনুধাবণ করা সম্ভব। তাইতো এই প্রকৃতির সৌন্দর্য উদযাপন করার লক্ষ্যেই টানা তৃতীয় বারের মতো অনুষ্ঠিত হচ্ছে তাল পিঠের মেলা। গত ২০২১ সাল থেকে শুরু হওয়ার এই তাল পিঠে মেলা দিন দিন আন্ত জেলা সহ আশপাশের জেলা গুলোর মধ্যে এমনকি সারা দেশে নতুন এক উৎসবের আমেজ সৃষ্টি করেছে সৌখিন মানুষেদের মাঝে। তাল পাতার বাতাসে প্রাণ জুড়িয়ে আসে, তাল পাতার তৈরি খেলনা যত স্মৃতি পটে ভাসে। তাল পাতার ঐ বাঁশির সুরে, মোদের মন উড়িতো আকাশে। মূলত এই তালগাছগুলো রোপন করেছিলেন বর্তমান খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। তখন তিনি ঐ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন। উদ্দেশ্য ছিলো বজ্রপাত থেকে রক্ষার পাশাপাশি যোগ হবে বড়তি সৌন্দর্য। কি নেই এই মেলায়! রয়েছে হরেক রকম তালের তৈরি পিঠে, তাল পাতার তৈরি বিভিন্ন রকমারি জিনিস পত্র। পিঠা প্রেমিদের জন্য রয়েছে তাল পিঠের বিভিন্ন স্টল।

নওগাঁ সাপাহার উপজেলা থেকে এসেছেন মিনা পিঠা ঘর নামক একটি স্টল। সেই খানে রয়েছে প্রায় পঁচিশ পদের নানান বাহারি তাল পিঠে। সেইখানে রয়েছে তাল মোহন, তাল বড়া, রিদয় হরণ পিঠা, তালের তৈরি ফুল পিঠা, তালের তৈরি জিলাপী সহ আরো বেশ কয়েক রকমারি পিঠা। মূলত গত ২১ সাল থেকে শুরু হওয়া এই পিঠে মেলা এবারও ২৩ ও ২৪ এ সেপ্টেম্বরে ঘুঘু ডাংঙ্গা তালতলীতে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। ২২ সালে ২৪ এ সেপ্টেম্বর মেলা টি শুরু হয়েছিল চলেছে দুদিন এবার শুরু হলো ২২ সেপ্টেম্বর চলবে ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। শুক্রবার, শনিবার ও রবিবার বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এমনি এক জমজমাট পরিবেশ দেখা যায় নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার ঘুঘুডাঙ্গা তালতলী সড়কে। সারি সারি তালগাছের মনোরম সৌন্দর্যের সড়কটিকে পর্যটকদের কাছে পরিচিত করতে তাল পিঠা উৎসবের আয়োজন করে উপজেলার পরিষদ। শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) উক্ত মেলায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইমতিয়াজ মোরশেদের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার এমপি। মনোমুগ্ধকর উপস্থাপক অবসরপ্রাপ্ত এলজিইডির উপ-সহকারী প্রকৌশলী ইঞ্জিনিয়ার বজলুর রশীদের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক গোলাম মাওলা, নওগাঁ পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রাশেদুল হক জনপ্রিয় অভিনেতা ফেরদৌস, এলজিইডি, নওগাঁর নির্বাহী প্রকৌশলী তোফায়েল আহমেদ, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফরিদ আহম্মেদ, অফিসার ইন চার্জ মাইদুল ইসলাম, নওগাঁ জেলা আওয়ামীলীগের কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক আলহাজ¦ আবেদ হোসেন মিলন, হাজিনগর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক। উক্ত পিঠা মেলাটি আয়োজন করেছেন উপজেলা পরিষদ নিয়ামতপুর নওগাঁ।

আয়োজকরা জানান, এবারে বৈরি আবহাওয়া থাকার কারণে বেশী সংগঠন ও ব্যবসায়ী পিঠা উৎসবে অংশ নিতে পারি নি। তার পরেও সাধারণ মানুষের উপস্থিতির কোন কমতি নেই। উৎসবের আয়োজন যেমন ব্যাপক তেমনি পিঠার সম্ভারও ছিল বৈচিত্রময়। প্রায় ৩০ ধরণের তাল পিঠা ছাড়াও বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে বানানো অর্ধশতাধিক রকমের পিঠা আসে উৎসবে। পাকান, পুলিসহ সচরাচর যেসব পিঠা দোকানে পাওয়া যায়, সেগুলি ছাড়াও ছিল হৃদয়হরণ, ঝিনুক পিঠা, তালের কেক, তালের ফুলঝড়ি, পাখির বাসা, তালের মাংস সিংড়াসহ বিচিত্র সব পিঠা। প্রতিটি পিঠার দাম ছিল ২০ টাকা থেকে শুরু করে ১০০ টাকা পর্যন্ত। প্রতিটি স্টলে প্রায় ২০ থেকে ৩০ রকমের পিঠা দেখা যায়। বাড়ি থেকে তৈরি করে আনা পিঠার পাশাপাশি অনেক স্টলে বিভিন্ন রকমের পিঠা তৈরিও করা হয়। পরিবার নিয়ে নওগাঁর সদর থেকে পিঠা উৎসব দেখতে আসেন আমিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, সারি সারি তালগাছের সড়কে আসলে এমনিতেই হৃদয়ে একটা প্রশান্তি অনুভব হয়। সময় পেলেই মাঝে মাঝে পরিবার নিয়ে আমি এখানে আসি। আজকে আরও ভালো অনুভূতি হচ্ছে। এখানে একসঙ্গে অনেক রকমের পিঠা পাওয়া যাচ্ছে। আমার সাত বছর বয়সী মেয়ে অনেক পিঠাই আগে চিনতো না। এখানে এসে অনেক ধরণের পিঠা দেখে ও তার স্বাদ নিতে পেরে অনেক খুশি। তাছাড়া সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান থাকায় আরও ভালো লাগছে। এবারের মেলায় বাড়তি যোগ হয়েছে জনপ্রিয় অভিনেতা ফেরদৌস এবং ত্রিসূল সাংস্কৃতি গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। পিঠা উৎসব উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির খাদ্যমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা সাধন চন্দ্র মজুমদার এমপি বলেন, সৃষ্টিতে যে এত আনন্দ। আমি আগে বুঝতে পারি নাই। আমি আবেগ আপ্লুত। আমি নিজের চোখকে ধরে রাখতে পারছি না। চোখে পানি এসে গেছে। মানুষ কাঁদে এক দুঃখে, আর এক সুখে। আমার চোখে পানি এসে গেছে আজ সুখে। হাজিনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় আশির দশকে হাজিনগর-ঘুঘুডাঙা দুই কিলোমিটার সড়ক জুড়ে এই তালগাছগুলি আমি লাগিয়েছিলাম। আজকে সেই সব তালগাছ বড় হয়ে সড়কটিকে সৌন্দর্যময় করে তুলেছে। মানুষজন এই সড়ক দিয়ে যখন যায়, তালগাছের ছায়ায় দাঁড়িয়ে একটু প্রশান্তি পায়। আমি নিজেও এলাকায় আসলে তালগাছগুলি দেখতে আসি। একটা অন্য রকম প্রাশান্তি অনুভূত হয়। মন্ত্রী আরও বলেন, সড়কটি পর্যটকদের কাছে পরিচিত করতে স্থানীয় চেয়ারম্যান তাল পিঠা উৎসবের যে আয়োজন করেছে এটা একটি ভালো উদ্যোগ। এর মাধ্যমে মানুষ একটা নির্মল বিনোদন পাচ্ছে। পাশাপাশি গ্রাম বাংলার হারিয়ে যেতে বসা অনেক ধরণের পিঠার সঙ্গে পরিচিত হচ্ছে এ প্রজন্ম। আমি হয়তো থাকবো না, কিন্তু আমার দাবী বিশেষ করে ঘুঘুডাঙ্গা গ্রামবাসীর কাছে প্রতি বছর ২২ সেপ্টেম্বর যেন তাল পিঠা উৎসব এখানে হয়। উৎসবের অন্যতম আয়োজক নিয়ামতপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইমতিয়াজ মোরশেদ বলেন, এবারের উৎসবে যে পরিমান মানুষের সাড়া পেয়েছি তাতে আমি অভিভূত। অনেক দূর-দূরান্ত থেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান হরেক রকমের পিঠার সমাহার নিয়ে এখানে স্টল দিয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
Copyright All rights reserved © 2024 Chapaidarpon.com
Theme Customized BY Sobuj Ali
error: Content is protected !!