নাটোরের গুরুদাসপুরে সীমা খাতুন (২৮) নামে এক গৃহবধূকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে স্বামীর বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় একজনকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার উপজেলার মশিন্দা ইউপির শিকারপুর বাহাদুরপাড়া এলাকায় এ ঘটনাটি ঘটেছে। ঘটনায় রাতেই নিহতের ভাই রুবেল আহমেদ বাদি হয়ে ৫ জনের বিরুদ্ধে গুরুদাসপুর থানায় মামলা দায়ের করেছেন। নিহত সীমা খাতুন উপজেলার রানীগ্রাম ফকিরপাড়া এলাকার মো. আছাদ আলীর মেয়ে এবং বাহাদুরপাড়া মো. ইছর আলীর ছেলে মো. রতন ওরফে কালুর স্ত্রী। নিহত সীমা খাতুনের পাঁচ বছরের এক মেয়ে ও তিন বছরের এক ছেলে আছে। নিহতের খালাতো ভাই সোহেল রানা অভিযোগ করে বলেন, “আমার বোনের স্বামী রতনের সাথে গুরুদাসপুরের এক মেয়ের সাথে দীর্ঘদিন ধরে পরকীয়ার সম্পর্ক ছিল। ওই মেয়ের সাথে সে স্থানীয়দের হাতে আটকও হয়। পরকীয়া সম্পর্কের কথা আমার বোন জানার পর থেকেই তাকে মানসিক ও শারিরিক নির্যাতন করতে থাকে রতন। এ নিয়ে ব্যাপক দাম্পত্য কলহ চলছিল। দুপুরে এ বিষয় নিয়ে কথা কাটাকাটি হলে সীমাকে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম এবং মাথা ফাটিয়ে দেয়। পরে গুরুদাসপুর রতনের পরিবারের লোকজন সীমাকে গুরুদাসপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে মাথায় সেলাই দিয়ে বাড়িতে নিয়ে আসে। বিকেল বাড়িতে আসার পরে সীমা বমি করতে থাকলে রতন ও তার পরিবারের সদস্যরা স্থানীয়দের বলে বিষ খেয়েছে। সীমার অবস্থা খারাপ খারাপ হলে আবার হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহীতে নিয়ে যেতে বলে। রাজশাহী মেডিকেল কলেজে নেওয়ার সময় বড়াইগ্রামের বনপাড়ায় সীমা মারা গেলে মরদেহ নিয়ে বাড়িতে আসে রতনের পরিবার। “মরদেহ বাড়িতে আনার পরে রতনের পরিবার স্থানীয়দের জানায়, বিষ খেয়ে মারা গেছে সীমা। এসময় তারা একটি ডেথ সার্টিফিকেট দেখায় স্থানীয়দের। আমার বোনকে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখমের পরে অবস্থা খারাপ হলে বিষ খাইয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে প্রচার করে রতনের পরিবার।” এ ব্যাপার জানতে চাইলে গুরুদাসপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: মো. মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, “বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টার দিকে সীমা খাতুনকে রক্তাক্ত জখম অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসলে প্রাথমিক চিকিৎসাসহ তার মাথায় সেলাই দেওয়া হয়। এক ঘন্টা পরে আবার হাসপাতালে নিয়ে আসলে তার শরীরে বিষের উপস্থিতি পাওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ট্রান্সফার করা হয়। রাজশাহী নেওয়ার পথে মারা যান সীমা খাতুন। নিহতের স্বজনের কোনো ডের্থ সার্টিফিকেট দেওয়া হয়নি, তাদের টান্সফার সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছে।” এ ঘটনায় রাতেই নিহতের ভাই রুবেল আহমেদ বাদি হয়ে গুরুদাসপুর থানায় মামলা দায়ের করেন জানিয়ে মাজহারুল ইসলাম বাদি-বিবাদির বরাত দিয়ে বলেন, “বাদিদের অভিযোগ পিটিয়ে জখমের পরে অবস্থার অবনতি হলে সীমা খাতুন কে বিষ খাওয়ানো হয়। অভিযান চালিয়ে মামলার ৪ নম্বর আসামী মো. স্বপনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যান্য আসামীদের আটকে অভিযান অব্যহত রয়েছে। নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নাটোর সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। পোস্টমর্টেম রিপোর্ট পেলে বিস্তারিত জানা যাবে।