কৃষ্ণচূড়ার রাঙা মঞ্জুরি কর্ণে- আমি ভুবন ভুলাতে আসি গন্ধে ও বর্ণে’ কবি কাজী নজরুল ইসলামের এই মনোমুগ্ধকর গানে আমরা উপলব্ধি করি কৃষ্ণচূড়ার সৌন্দর্য। গ্রীষ্মের তীব্র তাপদাহে যেখানে প্রাণ ওষ্ঠাগত এর মধ্যে যেন প্রকৃতিতে আশীর্বাদ হয়ে দেখা দেয় নানা রঙের ফুল। তার মধ্যে অনন্য কৃষ্ণচূড়া। এমন কড়া রোদে কৃষ্ণচূড়ার আবীর নিয়ে প্রকৃতি সেজে উঠেছে বর্ণিল রূপে। যেন প্রকৃতিতে কৃষ্ণচূড়ার রঙয়ে আগুন জ্বলছে। এমন গাছের নিচে দাঁড়ালে মনে হয় কোনো রক্তিম বর্ণের উৎসব চলছে। মাথার উপর লাল সবুজের চাদোয়া, পায়ের নিচে ঝরা ফুলের বিছানা। যখন কৃষ্ণচূড়া ফোটে তখন এর রুপে মুগ্ধ হয়ে পথচারীরাও চলার পথে ক্ষণিক থমকে চেয়ে থাকেন। নাটোরের পথে প্রান্তরে চোখ মেললেই দেখা যাবে, আগুন ঝড়া কৃষ্ণচূড়ার সমাহার। এ যেন চমৎকার রূপ, যেন কৃষ্ণচূড়ার ডালে ডালে আগুন লেগেছে। কৃষ্ণচূড়া যখন ফুটে এই প্রকৃতির বুকে, তখন সব বাঙ্গালীর হৃদয়ে দোলা দেয়। অনেক দেশেই কৃষ্ণচূড়ার দেখা মেলে। তবে ফুল ফোটার সময়কাল একই নয়, ভিনদেশি হওয়ার পরও কৃষ্ণচূড়া আমাদের দেশি ফুলের মাঝে জায়গা করে নিয়েছে। শাখা পল্লবে ছড়ানো চার পত্রবিশিষ্ট এ ফুল উজ্জ্বল লাল, কমলা বা এদের সংমিশ্রণে হয়। উষ্ণ আবহাওয়ার উপযুক্ত এ বৃক্ষ নিজস্ব সৌন্দর্যে অতুলনীয়। সৌন্দর্য বিলানো ছাড়াও গাছটি গ্রীষ্মকালে ছায়া দিতে বিশেষভাবে পারঙ্গম। গ্রীষ্মকাল বিশেষ করে বৈশাখ মাস কৃষ্ণচূড়া ফোটার সময়। এ সময় বাংলাদেশের সব জায়গায় থোকায় থোকায় কৃষ্ণচূড়া ফোটে তার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য নিয়ে।
নাটোরের তরুন কবি, শতক আরিফ লিখেছেন-
আগুন লেগেছে কৃষ্ণচুড়ায়
ফাগুন কেন দূরে।
সবুজ গাঁয়ে রঙ লেগেছে
পাখি ডাকছে সুরে !
কৃষ্ণচূড়া কৃষ্ণচূড়া
আহা কি চমৎকার,
কি বাহারি দেখতে তুমি
সৌন্দর্য অপার।
কৃষ্ণচুড়ার মুল আবাস মাদাগাস্কার হলেও ক্যারাবিয়ান অঞ্চল, আফ্রিকা, হংকং, তাইওয়ান, দক্ষিণ চীন, বাংলাদেশ, ভারত সহ বিশ্বের অনেক দেশে এটি জন্মে থাকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কৃষ্ণচূড়া শুধু মাত্র দক্ষিণ ফ্লোরিডা, দক্ষিণ পশ্চিম ফ্লোরিডা, টেক্সাসের রিও গ্রান্ড উপত্যকায় পাওয়া যায়। এছাড়াও কোস্টারিকা, পানামা সহ মধ্যম তাপমাত্রার দেশেও এর উপস্থিতি লক্ষনীয়। ভারত বর্ষে সাধারণত এপ্রিল-জুন সময়কালে কৃষ্ণচূড়া ফুল ফোটে। তবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কৃষ্ণচূড়ার ফুল ফোটার সময় বিভিন্ন। কৃষ্ণচূড়া একটি বৃক্ষ জাতীয় উদ্ভিদ যার বৈজ্ঞানিক নাম -উবষড়হরী ৎবমরধ। এটি ঋধনধপবধব পরিবারের অন্তর্গত একটি বৃক্ষ যা গুলমোহর নামেও পরিচিত। বাংলা সাহিত্যের পরতে পরতে কৃষ্ণচুড়ার সগর্ব উপস্থিতি ও বাঙ্গালী জীবনে এর প্রভাবই বলে দেয় কৃষ্ণচুড়ার নাম নয় এর রঙ ও রুপ-মাধুর্যে মুগ্ধ আমরা, মুগ্ধ মানুষেরা, মুগ্ধ বাঙ্গালীরা।