জয়পুরহাট শহরকে যানজটমুক্ত রাখতে চার লেন সড়ক নির্মাণ করছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ। হারাইল বাস টার্মিনাল থেকে রেলগেট পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটার সড়কটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয় ২০১৮ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর। কার্যাদেশে দেড় বছরের মধ্যে প্রকল্প শেষ করার কথা থাকলেও সাড়ে পাঁচ বছরেও দৃশ্যমান হয়নি মূল সড়ক। শুধু দুই পাশের ড্রেনের কাজ হয়েছে ৬০ শতাংশ।
কারণ হিসেবে প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা বলছেন, সড়কের দুই পাশের কিছু স্থানে স্থাপনা এখনো সরানো যায়নি। এছাড়া ড্রেনের নকশা পরিবর্তন করায় দীর্ঘ সময় পার হয়েছে। প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়। মোট ব্যয় ধরা হয় ১ শত ৭৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে ভূমি অধিগ্রহণের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৯০ কোটি টাকা। তিনটি প্যাকেজে দরপত্র আহ্বান করে সওজ বিভাগ। কাজটি করার জন্য দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ২০১৭ সালের ২৪ ডিসেম্বর ও ২০১৮ সালের ২৭ জুন কার্যাদেশ দেয়া হয়। জয়পুরহাট সওজ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চার লেনের সড়কটি হবে ৬০ ফুট প্রশস্ত। মাঝখানে থাকবে চার ফুট প্রশস্ত আইল্যান্ড এবং পুরো সড়কের দুই পাশে থাকবে ড্রেনসহ চার ফুট করে আট ফুট প্রশস্ত ফুটপাত।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এক রাস্তার শহর হিসেবে গড়ে উঠেছে জয়পুরহাট। শহরের একমাত্র প্রধান সড়ক দিয়ে পার্শ্ববর্তী দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরের ভারী যানবাহনসহ জেলার অভ্যন্তরীণ যানবাহন চলাচল করে। শহরের লোকসংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি যানবাহনের সংখ্যাও বেড়েছে। দীর্ঘদিন ধরে সড়কটি প্রশস্তকরণের কাজ না হওয়ায় যানজটে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন শহরের বাসিন্দারা। তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে জয়পুরহাট-বগুড়া আঞ্চলিক মহাসড়ক প্রশস্তকরণের পরিকল্পনা নেয়া হয়। এ অবস্থায় শহরের যানজট নিরসনে হারাইল বাস টার্মিনাল এলাকা থেকে রেলগেট পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটার সড়ক চার লেন করার পরিকল্পনা নেয় সরকার। ২০১৮ সালে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হলেও সাড়ে পাঁচ বছরে দৃশ্যমান হয়নি মূল সড়ক। শুধু দুই পাশের ড্রেনের কাজ হয়েছে ৬০ শতাংশ।
রিকশাচালক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ঢাকঢোল পিটিয়ে চার লেন সড়কের কাজ উদ্বোধন করা হলেও সাড়ে পাঁচ বছরেও কোনো কিছুই হয়নি। ড্রেনের কাজ দীর্ঘদিন ধীরে ধীরে হওয়ায় যানজট বেড়েছে। এ অবস্থায় রিকশা চালিয়ে সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে।’
সুজন, কাজল, মিঠুসহ কয়েকজন ভ্যান-রিকশা ও অটোরিকশাচালক জানান, আগে অটোরিকশা চালিয়ে ছেলেমেয়েদের স্কুলের বেতন দিয়েও সংসার ভালোভাবে চলছিল। এখন তা কষ্টকর হয়ে গেছে। কবে শেষ হবে ড্রেনের কাজ তা কেউ সঠিকভাবে বলতে পারছে না।’
এদিকে, কার্যাদেশ অনুযায়ী প্রকল্পের কাজ দেড় বছরের মধ্যে শেষ করার কথা থাকলেও পাঁচ বছরেও মূল কাজ শুরু না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সচেতন নাগরিকরা। তারা বলছেন, রাস্তার দুই পাশে ভবন আর দোকানপাট ভেঙে শুধু ড্রেন নির্মাণকাজ চলছে দীর্ঘদিন ধরে। ফলে যানজট আর ধুলোবালির মধ্যে ভোগান্তি বেড়েছে পথচারীদের। বিশেষ করে স্কুলগামী শিক্ষার্থী, অফিসগামী ও সাধারণ লোকজনকে পড়তে হয় বিড়ম্বনায়। ৫ মিনিটের রাস্তা অতিক্রম করতে এখন সময় লাগছে পাঁচ-ছয় গুণ বেশি। নির্মাণকাজ চলছে দীর্ঘদিন ধরে। ফলে যানজট আর ধুলোবালির মধ্যে ভোগান্তি বেড়েছে পথচারীদের। বিশেষ করে স্কুলগামী শিক্ষার্থী, অফিসগামী ও সাধারণ লোকজনকে পড়তে হয় বিড়ম্বনায়। ৫ মিনিটের রাস্তা অতিক্রম করতে এখন সময় লাগছে পাঁচ-ছয় গুণ বেশি।
জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘এক সড়কের শহর জয়পুরহাট। এখানে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত যানজট লেগেই থাকে। ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের সাড়ে পাঁচ বছরেও চার লেনের কাজের অগ্রগতি না হওয়ায় আমরা হতাশ। এক সড়কে যানবাহন অতিরিক্ত। ফলে যানজটে ভোগান্তি শেষ হয় না।’ চার লেনের কাজ দ্রুত শেষ করার দাবি জানান তিনি। এ বিষয়ে জয়পুরহাট সওজ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মনিরুজ্জামান গণমাধ্যম কর্মীদের বলেন, ‘রাস্তার দুই পাশের কিছু কিছু স্থাপনা এখনো সরানো যায়নি। দ্রুত এসব স্থাপনা সরাতে পারলে কাজ দ্রুত শেষ করা যাবে। শহরের পানি নিষ্কাশনে ড্রেনের নকশা পরিবর্তন করা হয়েছ। নতুন নকশায় ড্রেনটি বড় করার কারণে কাজ করতে দীর্ঘ সময় পার হয়েছে। এখন ড্রেনের নকশা পরিবর্তন করে ক্যাপাসিটি ও সেকশন বাড়ানো হয়েছে। ড্রেনের কাজ প্রায় ৮০ শতাংশ শেষ হয়েছে। উন্নয়নকাজ করতে গেলে সাধারণ মানুষের কিছুটা ভোগান্তিতে পড়তে হয়। আশা করছি দ্রুত ড্রেনের কাজ শেষ করতে পারব।