সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে আবারও সংঘর্ষের ব্যাপকতা বেড়েছে। এতে মনে করা হচ্ছে, রাখাইন রাজ্যের জাতিগত সশস্ত্র বিদ্রোহীদের সঙ্গে দেশটির সরকারি বাহিনীর লড়াই চলছেই। আর কখনও গোলাগুলির বিকট শব্দ; কখনও মর্টারশেল এসে পড়ে- এরমধ্যেই উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিন কাটছে বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকার বাসিন্দাদের। এ আতঙ্ক কাটবে কবে জানেন না তারা। বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) ভোরেও হোয়াইক্যংয়ের লম্বাবিল ও উনচিপ্রাং সীমান্তের নাফ নদীর ওপারে থেমে থেমে এবং ঘুমধুম ইউনিয়নের বাইশফাঁড়ি সীমান্তে বিস্ফোরণের বিকট শব্দ শোনা গেছে। এর আগে মঙ্গলবারও (১৩ ফেব্রুয়ারি) প্রচণ্ড বিস্ফোরণের শব্দে সীমান্ত এলাকা থেমে থেমে কেঁপে ওঠে। স্থানীয়রা জানান, কখনও বিস্ফোরণের বিকট শব্দ; কখনও সীমান্তের এপারে নিজ বসতঘরে গুলি ও মর্টারশেল এসে পড়ছে। এ নিয়ে তারা আতঙ্কে রয়েছেন। সেই সঙ্গে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা সরকারি বাহিনী কিংবা অস্ত্রধারী রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশও তাদের আতঙ্কের কারণ। তুমব্রু পশ্চিমকূলের বাসিন্দা নুরুল ইসলাম। মিয়ানমারের গোলাগুলি, মর্টারশেলের গোলা নিক্ষেপ ও হেলিকপ্টার থেকে হামলার জেরে প্রাণ বাঁচাতে ছেড়ে ছিলেন বসতবাড়ি। এখন বাড়ি ফিরেও উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন। কবে এই আতঙ্কের শেষ হবে; সেই দিনের অপেক্ষায় রয়েছেন বলে জানান তিনি। সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য রেজাউল করিম জানান, টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ সীমান্তের নাফ নদীর ওপারে ভোর থেকে সকাল ৭টা প্রচণ্ড গোলাগুলির শব্দ পাওয়া গেছে। রাখাইনে টানা ১৫ দিনের এই অস্থিরতার কারণে উদ্বেগ জানিয়ে টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য জালাল আহমদ বলেন, এলাকাবাসীর মনে যেন স্বস্তি নেই। থেমে থেমেই গোলাগুলি আর বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে। তিনি বলেন, উদ্বেগ বা ভয়ের কারণ হলো না জানি কখন এপারে গুলি বা মর্টারশেল এসে পড়ে। তিনি সীমান্ত এলাকার মানুষকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান। হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর আহমদ আনোয়ারি জানান, নাফ নদীর ওপারে বিস্ফোরণের শব্দ সোমবারের তুলনায় মঙ্গলবার ভোর থেকে বেড়েছে। গতকাল বুধবারও এপারে গুলি-মর্টারশেল এসে পড়ার আশঙ্কার পাশাপাশি রোহিঙ্গাসহ অন্যদের অনুপ্রবেশের ঝুঁকি বেড়েছে। ঘুমধুম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ জানিয়েছেন, সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের ঢেঁকিবনিয়া এলাকা থেকে কখনও কালো ধোঁয়া দেখা যাচ্ছে, আবার কখনও রাতে গুলি বা মর্টারশেলের শব্দ শোনা যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকানোসহ সীমান্তে টহল জোরদার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিজিবির টেকনাফ-২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দীন আহমেদ। তিনি বলেন, নাফ নদী অতিক্রম করে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিকদের পাশাপাশি কোনো দুষ্কৃতকারী যাতে টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ করতে না পারে, সেজন্য অতিরিক্ত বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।