‘মফস্বল’ তকমাটা আমাদের এখনো ঘুঁচলো না! অধিকাংশ রিপোর্টই জেলার-তারপরও! কেন জানি এই উপাধিটা ঘুঁচছে না, হওতো ঘুচবেও না। মফস্বলের প্রতিনিধিদের মূল্যায়নও হলোনা কোনোদিন। আর বর্তমান পরিস্থিতিতে তো সাংবাদিকতার মহান পেশার বিষয়টি কে হারিয়ে এখন মানুষের কাছে একটা অবজ্ঞা আর ভীতির বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর থেকে বেরিয়ে আসতে হবে, সংবাদিকতা পেশাকে সম্মানের সাথে উপলদ্ধি করে এর মহোত্তকে মুল্যায়ন করতে হবে। মহান পেশার মূল্যায়ন হলেই যথাযথ সম্মান পাবে জেলার মিডিয়াকর্মীরা। ছাড়তে হবে তোষামোদি, চাটুকারিতা, যথাযথ তথ্য সংগ্রহ ও সংবাদ পরিবেশনে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। প্রকৃত সংবাদ পরিবেশন করে নিজেদের জায়গা পরিস্কার করে গণমাধ্যমকর্মীদের সম্মান ফিরিয়ে আনতে হবে। তাহলেই জেলার সাংবাদিকদের আসল মূল্যায়ন টা হবে। ১৯৮৭ সালে আমরা যখন সাংবাদিকতা জগতে অনুপ্রবেশ করি তখন দেশে হাতে গোনা মাত্র কয়েকটি জাতীয় দৈনিক ছিল। আর বিভাগীয় শহরগুলোতে দুই একটি পত্রিকা ছাড়া জেলা শহরগুলোতে এর কথা চিন্তাই করা যেত না। তবে মজার ব্যাপার হলো, অপরাধ জগতের নিউজ হলে সে সময়ে প্রশাসন নড়েচড়ে বসতেন। নিউজ এর উপর ভিত্তি করে ব্যাপক তদন্তের পর তদন্ত শুরু হয়ে যেত। ওই রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে অপরাধীদের পাকড়াও করে আইনের আওতায় এনে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হতো। এদিকে, আমরা যেভাবে সাংবাদিকতা করেছি, তার কিছু দিক তুলে না ধরলে লেখাটির অসমাপ্ততা অনুভূত হতে পারে। সে সময়ে আমরা নিউজপ্রিন্ট কাগজে নিউজগুলো হাতে লিখে তা ডাকযোগে পত্রিকা অফিসে পাঠালাম। নিউজ পৌঁছাতে প্রায় এক সপ্তাহ লেগে যেত। তারপর তা ছাপা হত। গুরুত্বপূর্ণ রিপোর্টগুলি টেলিফোনে পাঠানোর জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা টেলিফোন এক্সচেঞ্জে বসে কাটাতাম। তারপর কোনোদিন পাঠাতে পারতাম। আবার কোন কোনদিন পাঠাতেই পারতাম না। নিউজ পাঠাতে খরচ হতো ১০০ থেকে ১৫০ টাকা। তারপর এল ফ্যাক্স মেশিন। সেই মেশিনে হাতে লেখা নিউজগুলো পাঠাতাম। এই নিউজগুলো পাঠাতেও খরচ হতো প্রায় ৫০/৬০ টাকা। আর ওই সময় সাংবাদিকতা করা যেমন ছিল আদর্শিক মর্যাদার, তেমনি মানুষের মধ্যে সম্মান প্রদানে ছিল না কোন ঘাটতি। আরেকটি কথা না বলে পারছি না। আধুনিক সভ্যতায় বিশ্ব যখন দ্রুত গতিতে চরম উন্নতির শিখরে এগিয়ে যাচ্ছে। তখন এদেশের সংবাদপত্র পিছিয়েই বা থাকবে কেন? নিত্য নতুন নামে অসংখ্য পত্রিকা প্রকাশিত হয়েই চলেছে। মানদণ্ডের দিক নিয়ে আমার প্রশ্ন তোলার এখতিয়ার নেই, এটা বিচারের দায়িত্ব পাঠক মহলের। তবে আমার প্রশ্ন ওই জায়গায় মফস্বলের মূল ধারার সাংবাদিকরা দিন দিন কেন নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে কিসের আশঙ্কায় দিনাতিপাত করছেন? মূলধারার সাংবাদিকতার বাইরে যে ঘটনাগুলো ঘটছে তার খন্ডচিত্র তুলে ধরা প্রয়োজন। বর্তমান সমাজে কপি পেস্ট সাংবাদিকের অভাব নেই। আর দু’একশ টাকায় নিজেকে বিক্রি করে দেওয়ার ইতিহাস দিন দিন বেড়েই চলেছে এবং যত্রতত্র চাঁদাবাজির সাথে জড়িত ওই সাংবাদিকদের কথা নাই বা বললাম। আরো গভীরে পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, টাকার বিনিময়ে সাংবাদিকতার কার্ড সংগ্রহ করে একশ্রেণির মানুষ মোটরসাইকেলের আগা-পাছায় ‘সাংবাদিক’ বা ‘সংবাদপত্র’ লিখে নিজেদের অপরাধকে ঢেকে রাখার জন্য এই মহান পেশাকে কলুষিত করে আত্ম অহংকারের ঢেকুর তুলছে। নতুন মাত্রায় এ অবৈধ ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় সুধীজনরা রীতিমতো শঙ্কিত।
আবার ওদের একটি অংশ কুটকৌশলে প্রশাসনের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলে নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত থাকে। এটা শুধু দুঃখজনকই নয়, লজ্জাজনকও বটে! এদিকে নিউজ পাঠানোর ধরনও পাল্টিয়েছে। ৫০ পয়সা বা এক টাকা খরচ করলেই এ আধুনিক সভ্যতায় মোবাইলের মাধ্যমে ইমেইল, মেসেঞ্জার বা হোয়াটসঅ্যাপে নিউজ পাঠানো সম্ভব। সাংবাদিকতা আধুনিকতার ছোঁয়ায় গতিশীল হচ্ছে। পরিবর্তন ও বিবর্তনের ধারায় সাংবাদিকতা এক অনন্য উৎকর্ষতায় পৌঁছে গেছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় মফস্বল সাংবাদিকদের এখনো ভাগ্যের উন্নয়ন হয়নি। তাদের অবস্থা পূর্বাপর আগের মতই আছে। এখনো তাদের মূল্যায়ন করা হয় না যথাযথ। আমি মনে করি মফস্বল সাংবাদিকতাই হচ্ছে সাংবাদিকতার প্রাণ। যদিও প্রযুক্তির কল্যাণে এখন মফস্বল বলতে কোন কিছু নেই। গোটা দুনিয়াটাই এখন সদর, অর্থাৎ হাতের মুঠোয়, কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য মফস্বল তকমাটা আমাদের এখনো ঘুঁচলো না। হয়ত ঘুঁচবেও না কোনদিন। যাক, পরিশেষে প্রত্যাশা, চরিত্রকে ধরে রাখার জন্য বৈধ পথে আয়-ইনকামের প্রত্যয়ে যারা এ পেশায় জড়িত একমাত্র তারাই মূলধারার সাংবাদিকতায় টিকে থাকুন আর হলুদ সাংবাদিকতা অপসারিত হোক।