বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ না হলেও এই সময়ে কাঁচাবাজারের গুরুত্বপূর্ণ একটি সবজি শজনে ডাটা। যাকে স্থানীয়ভাবে ছুট্টি বলে। এ বছর আমের রাজধানী নামে খ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় শজনে ডাটা ছুট্টির বাম্পার ফলন হয়েছে। এতে দেখভালসহ বিক্রি করে সংসারে অবদান রাখতে পারায় খুশি কৃষক ও গৃহিণীরা। জেলার কোথাও বাণিজ্যিকভাবে শজনে ডাটার চাষাবাদ না হলেও রাস্তার ধারে, ফাঁকা জায়গায়, বাড়ির আঙিনায়, আমবাগানের মাঝে ও জমির সীমানায় শজনে গাছে থোকায় থোকায় ঝুলছে ডাটা। বাম্পার ফলনের পাশাপাশি দাম ভালো থাকায় খুশি গৃহিণী, বাড়ির কর্তা ও সবজি বিক্রেতারা। সরেজমিনে জেলার সদর, শিবগঞ্জ, গোমস্তাপুর, নাচোল ও ভোলাহাট উপজেলায় দেখা যায়, এখনো কিছু গাছে বারমাসি শজনে ডাটার ফুল ফুটে আছে। তবে প্রায় ৯০ শতাংশ গাছেই ঝুলছে ডাটা। লাদনা (সবুজ রঙের দেশি জাত), দেশি ও রাজশাহীর (চিকন ও লম্বা) এই ৩ জাতের শজনে ডাটা দেখা যায় চাঁপাইনবাবগঞ্জে। এছাড়া সজনে ডাটা শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী এবং ভিটামিনযুক্ত একটি সবজি। সদর উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা ইউনিয়নের পলশা মিশন বাজারের সবজি বিক্রেতা সামশুল আলম জানান, এ বছর শজনে ডাটার বাম্পার ফলন হয়েছে। এখন পর্যন্ত দামও ভালো রয়েছে। বর্তমানে ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে খুচরা বাজারে শজনে ডাটা বিক্রি হয়। মাত্র ছয় থেকে সাত দিন আগেই ১২০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে। ক্রেতাদেরও ব্যাপক চাহিদা রয়েছে শজনের প্রতি। তবে যেহেতু ফলন ভালো, তাই কয়েক দিন পর আরও দাম কমতে পারে বলেও জানান তিনি। শজনে ডাটা সাধারণত বাড়ির আঙিনা বা উঠানে হয়ে থাকে। নাচোল উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের আমলাইন গ্রামের গৃহিণী শাহনাজ বেগমের বাড়ির সীমানা ও গলিতে পাঁচটি মাঝারি সাইজের শজনে গাছ রয়েছে। তিনি বলেন, এ বছর গাছে পরিপূর্ণ হয়ে আছে শজনে ডাটায়। একদিকে, বাম্পার ফলন, অন্যদিকে দামও ভালো। এখন পর্যন্ত এলাকার এক ব্যবসায়ীর কাছে দুই দফায় সাত কেজি শজনে ডাটা ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছি। ধারণা করছি, গাছে যে পরিমাণ ফলন রয়েছে, তাতে আরও ৩০ থেকে ৩৫ কেজি শজনে ডাটা হতে পারে। ভোলাহাটের গৃহিণী নাজমা খাতুন জানান, বাড়ির আশপাশে চারটা গাছ থাকায় কয়েক দিন থেকে তরকারির চিন্তা করতে হয় না। এমনকি পাশের দোকানে বিনিময় করে অন্য তরকারি নিই। এ বছর শজনে ডাটার কিছুটা আগাম ফলন ও কোনো রোগবালাই না থাকায় বাম্পার ফলন হয়েছে। এমনকি শজনে ডাটা বিক্রি করে আঁচলে কিছু টাকা রাখতে পারছি, যা সংসারের অন্য কাজে ব্যবহার করতে পারছি। শজনে ডাটার কল্যাণে মেহমান দারিও হয় আমাদের, এমনটা বলেন কৃষক আপন রেজা। তিনি বলেন, দুই মেয়ে ও এক ছেলের শ্বশুরবাড়িতে একবার শজনে ডাটা পাঠানো হয়ে গেছে। এ ছাড়া অন্য আত্মীয়স্বজনের বাড়িতেও নিয়মিত শজনে ডাটা পাঠাই। এতে তাদের সঙ্গে সম্পর্কটাও মধুর হয়। রহনপুরের এক ক্রেতা আব্দুল্লাহ বলেন, এ বছর শজনে ডাটার শুরুতে দাম ছিল ১৬০ টাকা কেজি। পরে বাজারে সরবরাহ বাড়তে থাকলে দাম কমে এখন এসে পৌঁছেছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে। তবে ধারণা করছি, যেহেতু বাম্পার ফলন, সেহেতু বাজারে কয়েক দিনের মধ্যে সরবরাহ আরও বাড়বে এবং দামও কমবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের এক প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা বলেন, এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে এবং কোনো রোগবালাই না থাকায় শজনে ডাটার খুবই ভালো ফলন হয়েছে। শজনেগাছ খুবই নরম হওয়ায় প্রায় প্রতিবছর কালবৈশাখী ও জোরে বাতাস হলেই গাছ ও ডালপালা ভেঙে পড়ে। এতে বিপুল পরিমাণ শজনে ডাটার ফুল ও অপরিপক্ব থাকা অবস্থায় নষ্ট হয়। এ বছর এখনো তেমন কোনো ঝড় না হওয়ায় ফলনও টিকে গেছে বলে জানান তিনি।