‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার’ আশ্রমে থাকা অসুস্থ মানুষদের হাত-পা কেটে ‘মাদকাসক্ত ও সাইকোপ্যাথ’ মিলটন সমাদ্দার পৈশাচিক আনন্দ পেতেন বলে জানিয়েছেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। রবিবার রাজধানীর মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি।
রিমান্ডে মিলটন সমাদ্দারকে জিজ্ঞাসাবাদে ভয়ংকর ও লোমহর্ষক কাহিনী উঠে এসেছে উল্লেখ করে ডিবি প্রধান বলেন, আশ্রমে থাকা রোগীদের নিজেই অপারেশন করতেন মিলটন সমাদ্দার। এমনকি মিলটনের অপারেশন থিয়েটারে ছুরি ও ব্লেড ছাড়া কিছুই ছিল না। তিনি কখনোই অসুস্থদের কোন হাসপাতালে নিতেন না। বেশ কয়েকজন বৃদ্ধের তিনি হাত, পা ও আঙ্গুল কেটে ফেলেন। ডিবি হারুন আরও বলেন, বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধী শিশুদের শরীরে কোন কারনে ইনফেকশন হলে তা মিলটন নিজেই ছুরি ও ব্লেড দিয়ে কেটে ফেলতেন। সেসময় তাদের কান্না, যন্ত্রণা ও রক্ত দেখে মিলটন পৈশাচিক আনন্দ উপভোগ করতেন।
মিলটন সমাদ্দার মাদকাসক্ত এবং সাইকোপ্যাথ প্রকৃতির জানিয়ে হারুন অর রশীদ বলেন, মিলটন সমাদ্দার একজন মাদকাসক্ত ও সাইকোপ্যাথ মানুষ। মিলটন টর্চার সেলে মানুষজনদের পিটিয়ে নিস্তেজ করতেন। তিনি কীভাবে মানবতার ফেরিওয়ালা হলেন, তা আমাদের বোধগম্য নয়। আমরা মিলটনের বিরুদ্ধে আরও সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করব।
ডিবি প্রধান আরও বলেন, মিলটনের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের এখনো ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা আছে। তিনি মূলত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আশ্রমের মানুষদের কবর ও বৃদ্ধ, বাকপ্রতিবন্ধী, অসহায় মানুষদের আশ্রয়ের কথা বলে টাকা সংগ্রহ করতেন। কবর দেওয়ার সংখ্যা যতো বেশি টাকা সংগ্রহ ততো বেশি হতো। ৯০০ প্রাণ নিভে যাবার প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদ করলে মিলটন জানায় মিথ্যা এসব বলে মানুষের সহানুভূতি নিয়ে টাকা সংগহ করত। তিনি নাকি ১০০ জন মানুষকে কবর দিয়েছেন। তবে ১০০ কবরের তথ্য জানতে চাইলেও সেটা ডিবিকে সঠিকভাবে প্রমাণ করতে পারেন নি বলেও যোগ করেন তিনি। এর আগে, বুধবার (১ মে) রাতে রাজধানীর মিরপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে আটক করা হয় মিলটন সমাদ্দারকে। তার আগে মানবতার ফেরিওয়ালার মুখোশের আড়ালে ভয়ংকর সব প্রতারণার অভিযোগ উঠে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পরিচিত মুখ মিলটন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে। এমনকি অসহায় মানুষের নামে সংগ্রহ করা অর্থ আত্মসাৎ এবং তাদের কিডনিসহ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ চুরির মতো গা শিউরে ওঠা অভিযোগের মুখোমুখি হয়েছেন মিলটন সমাদ্দার।
এছাড়া জাল ডেথ সার্টিফিকেট তৈরি এবং জমি দখলের মতো গুরুতর সব অভিযোগ রয়েছে। অসহায়-দুস্থ মানুষের সেবার কথা বলে গড়ে তোলা ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার’ নামের একটি বৃদ্ধাশ্রম ঘিরে তার অপকর্মের ফিরিস্তি নেটদুনিয়ায় ভাইরাল। এ বিষয়ে তদন্ত করে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নিতে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার ও সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে নির্দেশ দেয় জাতীয় মানবাধিকার কমিশন।