নওগাঁয় চলছে ইরি-বোরো ধান কাটা-মাড়াইয়ের ব্যস্ততা। প্রচণ্ড তাবদাহের মাঝে সোনার ফসল ঘরে তুলতে ব্যস্ত কৃষাণ-কৃষাণীরা। এরই মধ্যে হাট-বাজারে উঠতে শুরু করেছে ধান। হাটে ধানের সরবরাহ বেশি থাকায় কমেছে দাম। ৩ দিনের ব্যবধানে মণে ৪০-৫০ টাকা কমেছে। তবে সপ্তাহের ব্যবধানে ৮০-৯০ টাকা। আগামীতে ধানের দাম আরো কমার সম্ভবনা রয়েছে। এতে লোকসানের শঙ্কা করছেন কৃষকরা। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, জেলায় ১ লাখ ৯১ হাজার ৪২৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। যা থেকে ১২ লাখ ৮৫ হাজার ২১৫ টন ধান উৎপাদনের আশা। এই পরিমাণ ধান থেকে ৮ লাখ ৫৬ হাজার ৮০০ টন চাল উৎপাদন হবে। এ বছর মৌসুমের শুরু থেকে প্রচণ্ড খরা ও তীব্র তাবদাহ বিরাজ করছে। খরার মাঠ-ঘাট ফেটে চৌচির। ফসল রক্ষায় কৃষকরা বাড়তি সেচ দিতে হয়েছে। খরার কারণে ধানের জমিতে বাড়তি সেচ দিয়েও কোনো সুবিধা করা যা”েছ না। সকালে পানি দিলে বিকেলে নাই হয়ে যাচ্ছে। ব্রুডিং অবস্থায় ধানে পর্যাপ্ত পানি থাকার কথা থাকলে পানির অভাবে সেচ দেওয়া সম্ভব হয়নি। এছাড়া ধানে পোকা-মাকড়ের প্রার্দুভাব দেখা দেওয়ার সঙ্গে কিছুটা চিটা হয়। এতে কাঙ্খিত ফলন পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে কৃষকরা। বিঘাপ্রতি ফলন কমেছে ৩-৪ মণ। ধারদেনা করে সোনার ফসল উৎপাদন করেছেন কৃষকরা। দেনা পরিশোধে অর্থের প্রয়োজনে ধান ঘরে তোলা আগেই উঠান থেকে স্বপ্নের এই ধান কমমূল্যে বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছে। লোকসানের চিন্তা মাথায় নিয়ে ধান বিক্রি করতে হচ্ছে। রোববার ছিল জেলার মহাদেবপুর উপজেলার চকগৌরি হাটবার। সপ্তাহে রোববার ও বৃহস্পতিবার হাটবার। তিনদিনের ব্যবধানে রোববার হাটে খাটো-১০ জাতের ধান ৪০-৫০ টাকা কমে বিক্রি হয় ১ হাজার ৫০ টাকা থেকে ১১শ’ টাকা, সুভলতা ১১শ’ টাকা, খাটোজিরা ১ হাজার ১৮০ টাকা থেকে ১২শ’ টাকা, লম্বা জিরা ১ হাজার ২৫০ টাকা থেকে ১ হাজার ২৭০ টাকা এবং কাটারিভোগ ১ হাজার ২শ’ থেকে ১ হাজার ২৫০ টাকা মণ। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এ বছর আবহাওয়া ভালো থাকায় সুষ্ঠুভাবে ধান শুকিয়ে কৃষকরা হাটে বিক্রি করছেন। হাটে ধানের সরবরাহ বাড়ায় এবং ব্যবসায়ীর সংখ্যা কিছুটা কম হওয়ায় কমেছে দাম। কয়েকদিনে কমেছে মণে ৪০-৫০ টাকা। তবে সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় ৮০-৯০ টাকা কমেছে। আগামী কয়েকদিন ধানের সরবরাহ বাড়ায় দাম কিছুটা কম হবে। তবে এক মাস পর আবারো দাম বাড়ার সম্ভবনা রয়েছে। উপজেলার পাথরঘাটা গ্রামের এক কৃষক বলেন, তিন বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করেছি। বিঘাপ্রতি ফলন হয়েছে ২০-২১ মণ। খরায় ধানে সেচ খরচ বেশি পড়েছে। তবে ধানে পোকা লাগায় এবং খরার কিছুটা নষ্ট হয়েছে। এ কারণে ফলনও কম হয়েছে। গতবছর ফলন হয়েছিল বিঘাপ্রতি ২৫-২৬ মণ। হাটে ৫৬ কেজি খাটো জিরা ধান বিক্রি করেছি ১ হাজার ১৭০ টাকা মণ হিসেবে। আগের হাটে আরো ৬০ টাকা বেশি ছিল। হাটে ধানের সরবরাহ বেশি হওয়ায় দাম কমেছে। মহাদেবপুর উপজেলার হরশি গ্রামে কৃষক হান্নান বলেন, ১২শ’ টাকা মণ হিসেবে ৩৫ মণ জিরাশাইল বিক্রি করেছি। গত হাটে এই হাট ১ হাজার ২৮০ টাকা মণ হিসেবে বিক্রি করেছিলাম। ব্যবসায়ীরা না আসায় ধানের দাম কমেছে। যা ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট। হাটে ব্যবসায়ীর সংখ্যা বেশি হলে তারা প্রতিযোগিতা করে ধান কিনলে দাম কিছুটা বেশি পাওয়া যায়। এ বছর ধান উৎপাদনে খরচ কিছুটা বেড়েছে। ১৪শ’ টাকার কম হলে ধান বিক্রি করে লোকসান না হলেও লাভ হবে না। আমরা কৃষকরা বর্তমানে কোনো ফসল করে লাভের আশা করা যায় না।