চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার গোবরাতলা ইউনিয়নের দিয়াড় ধাইনগর এলাকায় মহানন্দা নদীর বন্যার কবল থেকে বাঁচাতে প্রায় শত কোটি টাকার ব্যয়ে নির্মিত গ্রাম রক্ষা বাঁধ এলাকায় নদী স্বীকস্তি ও ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি কেটে রমরমা অর্থ বাণিজ্য চলছে অত্র ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান মোঃ রবিউল ইসলাম টিপুর নেতৃত্বে।
বাঁধ এলাকার জমি কেটে গর্ত করায় দিন দিন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। ফসলী জমি কেটে নিয়ে ইট ভাটায় বিক্রি করলেও ভয়ে মুখ খুলতে পারছে না কেউ। মাটি বহনকারী ট্রাক্টরের শব্দ ও ধুলাবালি উড়িয়ে পরিবেশের ক্ষতি করলেও গোবরাতলা ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ রবিউল ইসলাম টিপুর কাছে জিম্মি এলাকার সাধারণ মানুষ ও কৃষকরা। জেলার ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতার দোহায় দিয়ে এসব কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন চেয়ারম্যান মোঃ রবিউল ইসলাম টিপু। অবৈধভাবে জমি কেটে বিক্রির এই মহোৎসবের চিত্র তুলে ধরতে সরজমিন গেলে প্রতিবেদকের উপর চড়াও হয় চেয়ারম্যান মোঃ রবিউল ইসলাম টিপুর লোকজন।
জানা গেছে, ১৯৯৬ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর আসনের তৎকালীন সংসদ সদস্য মোঃ হারুনুর রশীদ এর উদ্দ্যোগে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে বন্যা কবল থেকে গ্রাম রক্ষার জন্য কয়েক কিলোমিটার বেড়ি বাঁধ নির্মান করা হয়। আর এই বেড়ী বাঁধ ঝুকিপূর্ণ করে সরকারের নদী স্বীকস্তি ও ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি কাটার মহাউৎসব চালাচ্ছে চেয়ারম্যান টিপু ও তার লোকজন। প্রায় ১ মাস সময় ধরে চলছে এ মাটি কাটার উৎসব। স্কেভেটর (ভেকু) দিয়ে কাটা হচ্ছে এসব এলাকার মাটি। কয়েকফুট গর্ত করে মাটি কেটে ১৫-২০টি মাহেন্দ্রা ট্রাক্টর দিয়ে দিনে এবং রাতভর এ মাটি বহন করে বিভিন্ন ইট ভাটায় বিক্রি করা হচ্ছে।
“২০১০ সালের বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন, ২০২৩ এর (সংশোধন) কল্পে প্রণীত আইন ৬২নং আইনের ধারা ৭ এর প্রতিস্থাপন ৭(ক)” মোতাবেক ব্যক্তি মালিকানাধীন জমির বালু বা মাটি উত্তোলন-কোনো ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি হইতে বালু বা মাটি উত্তোলন করা যাইবে না মর্মে আইন বহাল থাকা স্বত্ত্বেও বিধি লঙ্ঘন করে মাটি কাটছেন গোবরাতলা ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়াম্যান মোঃ রবিউল ইসলাম টিপু ও তার লোকজন। ট্রাক্টরে মাটি লোড করে রাস্তা দিয়ে চলার পথে পরিবেশ ও শব্দ দূষণ করলেও জিম্মি হয়েছে এলাকার জনসাধারণ বলেও জানা গেছে।
রাতে মাটি ভর্তি ট্রাক্টর চলার সময় বিকট শব্দের কারনে আতঙ্কিত হচ্ছে শিশুদের। ঘুমের মধে চিৎকার দিয়ে উঠছে শিশুরা। সরজমিনে দেখা যায়, সদর উপজেলার সীমানা লাগা শিবগঞ্জ উপজেলার ধাইনগর ইউনিয়নের মহানন্দা নদীর কিনারের সরকারী জমি ও নদী স্বীকস্তি জমি কেটে অর্থ বানিজ্য করছে গোবরাতলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ রবিউল ইসলাম টিপু।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন এলাকাবাসী বলেন, আমাদেরকে বর্তমানে জিম্মি করে রেখেছে গোবরাতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়াম্যান টিপু। তাঁকে আমরা কিছু বলার সাহস পাচ্ছি না। আমরা গ্রামবাসী দিয়াড় ধাইনগর এলাকার মহানন্দা নদীর বন্যার কবল থেকে বাঁচতে গ্রাম রক্ষা বাঁধটি চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর-৩ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্যের কাছে দাবী করেছিলাম, ব্লক দিয়ে বাঁধায় করে দেওয়ার জন্য। কিšুÍ ঘঠনা উল্টো, এ টিপু চেয়ারম্যান সরকারের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা ও জেলার বড় বড় নেতার নাম বলে আমাদেরকে ভয়ভিতী দেখিয়ে একদিকে বেড়ী বাঁধ ধ্বংস করছে, আরেক দিকে সরকারী জমি কেটে অর্থ বাণিজ্য করছে।
লাইসেন্সধারী বালু ব্যবসায়ী মোঃ বজলুর রহমান জানান, আমরা লাইসেন্সধারী ব্যবসায়ী হওয়া স্বত্ত্বেও এক ছটাক মাটি কাটার সাহস করতে পারিনা। গোবরাতলা ইউনিয়নের টিপু চেয়ারম্যান দিন রাত সমানে নদীর কিনারের সরকারী জমি কেটে ভরাট হিসেবে বিভিন্ন ইট ভাটায় মাটি বিক্রি করে? মানুষের বাড়ী থেকে গরু ডাকাতির পরে এবার সরকারী মাটি ডাকাতি শুরু করেছে, প্রশাসনের কাছে মিডিয়ার মাধ্যমে দাবী জানাচ্ছি, সরজমিন তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য। অন্যথায় এলাকার মানুষের বিশাল পরিমান ক্ষতি হয়ে যাবে। এলাকার মানুষ দিন দিন ক্ষিপ্ত হয়ে উঠছে, এদের অত্যাচার বন্ধে সাধারণ মানুষ রাস্তার নেমে গেলে কোন অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটতে পারে বলেও এলাকাবাসী আশংকা প্রকাশ করেন।
এব্যাপারে গোবরাতলা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়াম্যান মোঃ আরাফুল ইসলাম আজিজি জানান, রক্ষক যখন ভক্ষক হয়ে যায়, সাধারণ জনগন বিপদে থাকে, দিয়াড় ধাইনগর এলাকাতে বেড়ি বাঁধ এর পাশে সরকারী জমি কাটছে গোবরাতলা ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান মোঃ রবিউল ইসলাম টিপু। এ ঘটনাটি শুনেছি বেশ কিছু সচেতন মানুষের মাধ্যমে। বিষয়টি অত্যান্ত দুঃখজনক, তার কারন একজন চেয়ারম্যান/জনপ্রতিনিধি ইউনিয়নের অবিভাবক হিসেবেই মানুষ জানে।
অভিভাবক নিজেই যদি অপরাধের সাথে জড়িত থাকে, তাহলে সাধারণ জনগন আর কি পাবে? বাঁধ এলাকার মাটি কেটে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ফসলী জমিও কেটে নিয়ে যাচ্ছে এলাকার মানুষের জোরপূর্বক। জমি কেটে নিয়ে গেলেও কেউ কিছু বললেই তার উপর চলে নির্যাতন, হয়নারী, হুমকী-ধামকী। এসব জমি কেটে ভাটায় বিক্রি করে চেয়ারম্যান টিপু হাতিয়ে নিচ্ছেন মোটা অংকের অর্থ। তার লোকজনের অত্যাচারেও এলাকার লোকজন অতিষ্ঠ। আমি মনে করি সংশ্লিষ্ট প্রশাসন বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখবেন এবং এর একটা কঠোর ব্যবস্থা নেবেন বলে আমি মনে করি।
গ্রাম রক্ষা বাঁধ হুমকির মুখে ফেলে সরকারী ও ব্যক্তিগত জমি কাটার বিষয়ে গোবরাতলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রবিউল ইলাম টিপুর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ক্ষমতাসীন দলের বড় বড় নেতারা জড়িত আছে, আরো লোকজন ম্যানেজ করেতে হয়। তিনি আরো বলেন, এগুলো আমাদের নিজের জমি, তাই মাটি কেটে ধানের জমি বানাচ্ছি। নিজের জমি কেটে ফসলি জমি বানাচ্ছেন তাহলে, নেতা বা অন্যদের ম্যানেজ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে রবিউল ইসলাম টিপু পুরো বিষয়টি এড়িয়ে যান। তিনি প্রতিবেদককে নানা প্রলোভন দিয়ে সংবাদ প্রকাশ না করার জন্য বার বার অনুরোধও করেন।
এব্যাপারে চাঁপাইনবাবগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোঃ আশিফ আহমেদ বলেন, গোবরাতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ রবিউল ইসলাম টিপু বেড়ি বাঁধ এবং নদীর ধারের মাটি কাটছে বিষয়টি শুনলাম, তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত নদী রক্ষা বাঁধ ও এলাকার সাধারণ মানুষের ফসলী জমি বাঁচাতে প্রয়োজনীয় কঠোর ব্যবস্থা নেবেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এমনটায় দাবী এলাকার ভূক্তভোগী মানুষদের।