রাজশাহীতে বিনম্র শ্রদ্ধায় নানা আয়োজনে বঙ্গবন্ধু’র ঘনিষ্ঠ সহচর, মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও জাতীয় চার নেতার অন্যতম শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামানের ১০১তম জন্মবার্ষিকী পালন করা হয়েছে। বুধবার সকালে নগরীর কাদিরগঞ্জস্থ শহীদ এ.এইচ.এম কামারুজ্জামানের সমাধীতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এ.এইচ.এম খায়রুজ্জামান লিটন। এরপর তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, রাজশাহী মহানগর ও জেলা, উপজেলা আওয়ামী লীগ, থানা আওয়ামী লীগ এবং সকল সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সাথে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন। তিনি রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মাননীয় মেয়র হিসেবে ওয়ার্ড কাউন্সিলরবৃন্দ, রাজশাহী জেলা উপজেলা পরিষদ সমূহের নির্বাচিত চেয়ারম্যানবৃন্দের সাথে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন। এ সময় শহীদ কামারুজ্জামানের সহধর্মিণী মরহুমা জাহানারা জামানের সমাধীতেও পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন রাসিক মেয়র। পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ শেষে শহীদ এ.এইচ.এম কামারুজ্জামান এর আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করা হয়। দোয়া পরিচালনা করেন মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য বারকুল্লাহ বিন দুরুল হুদা।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে রাসিক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন সাংবাদিকদের বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। মুজিবনগর সরকারের স্বরাষ্ট্র, কৃষি এবং ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর ১৯৭৪ সালের ১৮ জানুয়ারি তিনি মন্ত্রিপরিষদ থেকে পদত্যাগ করেন। এ সময় তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে শহীদ কামারুজ্জামান সহ জাতীয় চার নেতা মহান মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনায় নেতৃত্ব দেন। রাসিক মেয়র বলেন, তিনি কর্মীবান্ধব নেতা ছিলেন। দীর্ঘ ৩৩ বছরের রাজনৈতিক জীবনে তিনি কখনোই নির্বাচনে পরাজিত হননি। দেশ স্বাধীনের পর বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে তিনি প্রজ্ঞা ও মেধা দিয়ে দেশ গড়ার কাজ শুরু করেছিলেন। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ৩রা নভেম্বর কারাগারের অভ্যন্তরে এএইচএম কামারুজ্জামান সহ আরো জাতীয় তিন নেতাকে হত্যা করে ঘাতকেরা। তিনি আরো বলেন, জাতীয় চার নেতার স্মৃতিকে সংরক্ষণে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে জাতীয় চার নেতার জন্মস্থানে স্মৃতিস্তম্ভ ও স্মৃতিজাদুঘর নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এই প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলেছে। রাজশাহীতে শহীদ কামারুজ্জামানের সমাধীস্থলে জাদুঘর নির্মাণ করা হবে। এর মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণ ও জাতীয় চার নেতার অবদান নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা হবে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামীলীগ, রাজশাহী মহানগরের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামাল, রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অনিল কুমার সরকার, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব কবির বিন আনোয়ার, রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা নওশের আলী, ডা: তবিবুর রহমান শেখ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোস্তাক হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক এ্যাড. আসলাম সরকারসহ আওয়ামীলীগের বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দ ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলরগণ ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।
শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামানের সমাধীতে আরো শ্রদ্ধা নিবেদন করেন রাজশাহী কলেজ, শহীদ আবুল হাসনাত মোহাম্মদ কামারুজ্জামান সরকারী ডিগ্রি কলেজ, পবা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ ফারুক হোসেন ডাবলু, রাজশাহী মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক নেতৃবৃন্দ, রাজশাহী মহানগর, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ, ইন্টার্নী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী প্রকৌশল প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ, চাঁপাই নবাবগঞ্জ জেলা সমিতি স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ, রাজশাহী জেলা, বিএমডি কর্মচারী ইউনিয়ন, বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলা, রাজশাহী সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপ, ইজিবাইক রিক্সা ভ্যান চালক শ্রমিক লীগ প্রমুখ।
এদিন সকাল থেকে শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামানের সমাধীতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা জানাতে আসেন বীর মুক্তিযোদ্ধাবৃন্দ, রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ। এতে ফুলে ফুলে ভরে ওঠে শহীদ কামারুজ্জামানের সমাধীসৌধ।
এদিকে শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামানের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে হিফজুল কোরআন ও ক্বিরাত প্রতিযোগিতায় কৃতিত্ব অর্জন করায় নগর ভবনে সিটি হলরুমে সম্মাননা স্মারক প্রদান অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাসিক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রাসিকের সচিব মোঃ মোবারক হোসেন।