বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সরকারি কলেজের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ‘দুর্বৃত্ত’ ও ‘দুস্কৃতিকারী’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন একই কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ এজাবুল হক (বুলি)। দুর্নীতি পরায়ণ, অর্থ আত্মসাৎকারী, স্বেচ্ছাচারী, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে অবৈধভাবে অধ্যক্ষ হয়ে সন্ত্রাসী কায়দায় শিক্ষকদের হেনস্থাকারী হিসেবে স্বৈরাচার আওয়ামী সরকারের পতনের পর তার অপসারণ দাবি করে শিক্ষার্থীরা গত ১৮ আগস্ট রোববার থেকে আন্দোলন শুরু করে। বিষয়টি আঁচ করতে পেরে অধ্যক্ষে মোঃ এজাবুল হক কলেজে অনুপস্থিত থেকে গত ১৯ আগস্ট শিক্ষার্থীদের মোবাইলে তার সাথে সমঝোতার প্রস্তাব দেন। শিক্ষার্থীরা ২০ আগস্ট মঙ্গলবার তার সাথে কলেজে বসার প্রস্তাব দিলে অধ্যক্ষ কলেজের বাইরে বসার প্রস্তাব দেন। এতে শিক্ষার্থীরা তাদের জীবন হুমকীর মুখে পড়ায় আশঙ্কায় তা প্রত্যাখান করে। এদিকে, সমঝোতার প্রস্তাব দিয়ে অধ্যক্ষ মোঃ এজাবুল হক গত ২০ আগস্ট/২৪ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকেই কলেজের কয়েকজন ছাত্রসহ বহিরাগত কিছু ছাত্রলীগের ছাত্রকে কলেজে প্রবেশ করিয়ে নিয়ে শিক্ষার্থীদের উপর হামলার পরিকল্পনা করেন। বিষয়টি বুঝতে পেরে এই কলেজের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা কলেজে শক্ত অবস্থান নিতে থাকে। এক পর্যায়ে অধ্যক্ষ মোঃ এজাবুল হক এর ছাত্ররা বিশৃংখলা সৃষ্টির চেষ্টা করলে উভয় পক্ষের মধ্যে বাকবিতন্ড শুরু হয় এবং অধ্যক্ষের পক্ষের ছাত্ররা মারমুখী হয়ে উঠে। এ সময় কলেজের অন্যান্য সকল শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা তাদের সহযোগিতার জন্য এগিয়ে যান। ফলে অধ্যক্ষ মোঃ এজাবুল হক এর পক্ষের ছাত্রলীগ নামধারী ছাত্ররা সটকে পড়ে। এরপর শিক্ষার্থীরা কলেজের নিয়ন্ত্রণ নিলে অন্যান্য শিক্ষকরা তাদের সমর্থন জানিয়ে অধ্যক্ষের অপসারণ এর পক্ষে তাৎক্ষণিক একমত পোষণ করে শিক্ষার্থীদের কার্যক্রম পরিচালনায় সমর্থন জানিয়ে কাগজে স্বাক্ষর করে দেন। এরপর শিক্ষার্থীরা অধ্যক্ষের কক্ষে তালা মেরে দেয়।
পরে শিক্ষার্থীরা একটি মিছিল নিয়ে জেলা প্রশাসকের দপ্তরে যান। তাদের সাথে কলেজের শিক্ষকরাও যোগ দেন। জেলা প্রশাসক না থাকায় এসময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আহমেদ মাহবুব উল ইসলামের হাতে অধ্যক্ষের অপসারণের জোর দাবি জানিয়ে ২৪ ঘন্টার মধ্যে স্বসম্মানে পদত্যাগের আল্টিমেটামসহ একটি আবেদন জমা দেন শিক্ষার্থীরা। এরপর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অধ্যক্ষ মোঃ এজাবুল হককে ২১ আগস্ট বুধবারের মধ্যে কলেজে উপস্থিত থাকার জন্য নোটিশ দেয়া হয়।
কিন্তু কলেজে উপস্থিত না হয়ে গত ২১ আগস্ট সকালে জেলা প্রশাসনের নোটিশের উত্তরে অধ্যক্ষ মোঃ এজাবুল হক ৩ জন শিক্ষককে জড়িয়ে শিক্ষার্থীদের ‘দুর্বৃত্ত’ ও ‘ভাড়াটে দুস্কৃতিকারী’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। বিষয়টি ২১ আগস্ট দুপুরে জানার পর ২২ আগস্ট আবারো কলেজে অবস্থান নেয় শিক্ষার্থীরা। এদিনও অধ্যক্ষ কলেজে উপস্থিত হননি। শিক্ষার্থীদের দুর্বৃত্ত ও ভাড়াটে দুস্কৃতিকারী বলায় অধ্যক্ষের অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন কলেজে মিছিল-মিটিং এর কর্মসূচী পালন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষার্থীরা। এরই ধারবাহিকতায় গত ২৫ আগস্ট রোববার কলেজের শিক্ষার্থীরা সকাল ১০টার দিকে কিছুক্ষণের জন্য ক্লাস বিরতি দিয়ে একটি মিছিল নিয়ে আনসার ক্যাম্প পর্যন্ত প্রদক্ষিণ করে আবার কলেজে অবস্থান নেয়। তারা অধ্যক্ষের অপসারণ দাবিসহ শ্লোগান দিতে থাকে ‘তুমি কে আমি কে-দুস্কৃতিকারী দুস্কৃতিকারী’, ‘কে বলেছে কে বলেছে-অধ্যক্ষ স্যার অধ্যক্ষ স্যার’ ইত্যাদি শ্লোগান দেয়। এরপর তারা দুপুরে জেলা প্রশাসক বরাবর আবারও একটি আবেদন জমা দেয়। এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আবেদনের অনুলিপি সেনাবাহিনীর অধিনায়ক, পুলিশ সুপার ও জেলা শিক্ষা অফিসার বরাবরও প্রদান করা হয়।
উল্লেখ্য যে, শেখ হাসিনার পতনের পর গত ৬ থেকে ১২ আগস্ট পর্যন্ত কলেজে অনুপস্থিত ছিলেন অধ্যক্ষ। আরো উল্লেখ্য যে, তিনি (অধ্যক্ষ) কলেজের যে প্যাডে জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেছেন, সেই প্যাডটি স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের আমলের। প্যাডের মনোগ্রামে শেখ হাসিনার ছবিসহ শ্লোগান আছে,‘শিক্ষা নিয়ে গড়বো দেশ-শেখ হাসিনার বাংলাদেশ’। তিনি এখনো সেই প্যাড ব্যবহার করে আওয়ামী প্রীতি লালন করে রাষ্ট্র বিরোধী অন্যায় করেছেন। এখনো তিনি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের রিরুদ্ধে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র করে প্রাণ নাশের হুমকী প্রদান করে আসছেন। তিনি এ কলেজে অবস্থান করলে ভবিষ্যতে যে কোন প্রকার ভয়ংকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে শিক্ষার্থীরা। দূর্ণীতিবাজ, স্বৈরাচারী অধ্যক্ষের পদত্যাগসহ সকল অপকর্মের বিচারের দাবী শিক্ষার্থী ও অত্যাচারিত শিক্ষকমন্ডলীর।