স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ সরকারের সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী ও সুনামগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এম এ মান্নানকে তার নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ১০টার দিকে সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত তার নিজ বাড়ি হিজল করচ থেকে গ্রেপ্তার করা হয় তাকে। গ্রেপ্তারের পরে এম এ মান্নানকে সুনামগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করে সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার আ.ফ.ম আনোয়ার হোসেন খান গণমাধ্যমকে বলেন, গত ৪ আগস্টে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় ৪ সেপ্টেম্বর দায়ের করা মামলায় এজাহার নামীয় আসামি হিসেবে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে থাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
শুক্রবার সকাল ১০ টায় সুনামগঞ্জের জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এমএ মান্নানকে হাজির কর হলে আদালত তাকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। আদালত সূত্র জানায়, এমএ মান্নানকে আদালতে তোলার পর তাঁর আইজীবীরা জামিনের আবেদন করেন। কিন্তু ছুটির দিনে সংশ্লিষ্ট আদালত (দ্রুত বিচার ট্রাইবুনাল) বন্ধ থাকায় জামিন শুনানি না করে তাঁকে জেলাহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ফারহান সাকিদ।
উল্লেখ্য, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে সুনামগঞ্জ শহরে গত ৪ আগস্ট বিক্ষোভ কর্মসূচি চলাকালে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানায় একটি মামলা হয়। গত ২ সেপ্টেম্বর হাফিজ আহমদ নামে এক ব্যক্তি দ্রুত বিচার আইনে মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, সাবেক সংসদ সদস্য মহিবুর রহমান মানিক, রণজিত সরকার, সুনামগঞ্জ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাজন চন্দ, ওসি খালেদ চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল হুদা, সাধারণ সম্পাদক পলিন বখত, সাবেক পৌর মেয়র নাদের বখত, যুবলীগের আহ্বায়ক খায়রুল হুদা চপল, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি দীপঙ্কর দে, সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান রিপন, সেচ্চাসেবক লীগের সভাপতি সুয়েব আহমদ, সাধারণ সম্পাদক জুবের আহমদসহ ৯৯ জনকে এই মামলায় আসামি করা হয়। বাদীর ভাই শিক্ষার্থী জহুর আহমদ হামলার ঘটনায় আহত হয়েছিলেন বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে। মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিলে সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী ও উল্লেখিত আসামি সাবেক সংসদ সদস্যদের হুকুমে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি, সাউন্ড গ্রেনেড ও দেশীয় অস্ত্রসহ হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় অনেক শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হন। আওয়ামীলীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের নির্দেশে পুলিশ ও যুবলীগ ছাত্রলীগ এ হামলার ঘটনা ঘটায়। এম এ মান্নান সরকারি চাকরি থেকে অবসরের পর ২০০৫ সালে সুনামগঞ্জ-৩ আসনের উপ-নির্বাচনে আওয়ামীলীগের সমর্থন নিয়ে অংশগ্রহণ করে পরাজিত হন। পরবর্তীতে ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদে এমপি নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালে দশম সংসদে অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী এবং ২০১৮ সালের একাদশ সংসদে শেখ হাসিনা সরকারের পরিকল্পনা মন্ত্রীর দায়িত্ব পান।