লালমনিরহাটের আদিতমারীতে মিথ্যা হত্যা মামলায় আসামি হয়ে দীর্ঘ ১৩ বছর নানা হয়রানির পর অবশেষে প্রধান শিক্ষকের চাকরি ফেরত পেয়েছেন আব্দুর রাজ্জাক হিরু নামের একজন প্রধান শিক্ষক।
তিনি উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের আদর্শপাড়া এম এইচ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত থাকাকালীন ২০১২ সালের ২৫ এপ্রিল মিথ্যা মামলায় আসামি হয়ে সাময়িক বরখাস্ত হন। বৃহস্পতিবার তিনি পুনরায় এ পদে যোগ দেন।
জানা যায়, ২০১১ সালের ১৮ নভেম্বরে মন্তাজ আলীর মেয়ে রুমি বেগম এর প্রেমিক জলধর বর্মন মুসলিম পরিচয় দিয়ে প্রেম করে এবং রাতে রুমি বেগমের সঙ্গে অসামাজিক কার্যকলাপ করতে এসে মন্তাজ আলীর কাছে ধরা পড়ে জলধর বর্মন।
তারপরের দিন শুক্রবার সকাল ১০ টার দিকে মন্তাজ গলা কেটে খুন করেন জলধরকে। এ ঘটনায় আদিতমারী থানায় ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন জলধরের পিতা শ্রী প্রেমানন্দ।
ওই মামলায় ২০২৪ সালের ৯ জুন ১৩ বছর পর রায়ে বাকি ১৪ জনকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়। রায়ে ১ নম্বর আসামি মন্তাজ আলী (ঝগড়ি মন্তাজ) এর যাবজ্জীবন ও ৫ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। মহিষখোচা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোকলেছুর রহমানকেও খালাস দেন আদালত।
ওই হত্যা মামলার আসামি হওয়ায় ৮৮ দিন জেলে থাকায় আব্দুর রাজ্জাক হিরু মাস্টার ২০১২ সালে সামরিক বরখাস্ত হন।
২০২৪ সালের ৯ জুন আদালতে বেকসুর খালাস পাওয়ায় ২০২৪ সালের বৃহস্পতিবার তিনি পুনরায় আদর্শপাড়া এম এইচ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদে বহাল হন। তাকে সেই স্কুলের শিক্ষার্থী ও শিক্ষক এবং এলাকাবাসী ফুল দিয়ে বরণ করে নেন।
এই বিষয়ে পুনরায় বহাল হওয়া আদর্শপাড়া এম এইচ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাক হিরু বলেন, আমার এলাকায় ঝগড়ি মন্তাজের মেয়ের প্রেমিককে হত্যা মামলায় আমাকে মিথ্যা ভাবে ফাঁসানো হয় এবং ৬ নম্বর আসামি করা হয়। যার কারণে আমি ৮৮ দিন জেল খাটি ও ১৩ বছর নানা হয়রানির শিকার হই।
জেল খাটার কারণে আমি সামরিক বরখাস্ত হই, যার কারণে ১৩ বছর খোরাকি বেতন পাই। এই ১৩ বছর চাকরি না থাকায় আমি খুব কষ্টের মধ্য দিয়ে ছেলে মেয়ের লেখাপড়া ও পরিবার চালাই। আশা করি পুনরায় চাকরি বহাল হওয়ায় আমার ১৩ বছরের বেতন-ভাতা সব পাবো।
আদিতমারী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এ.কে.এম আজিজুল হক ইত্তেফাককে বলেন, হত্যা মামলার আসামি থাকায় ২০১২ সালে প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত হন আব্দুর রাজ্জাক হিরু। এখন তার নামে আনিত অভিযোগ আদালতে মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ায় পুনরায় তাকে আবার তার পদে বহাল করা হয়েছে। যোগদান করার পর তার ১৩ বছরের বকেয়া বেতন-ভাতা দেওয়া ব্যবস্থা করা হবে বলেও জানান তিনি।