জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্কে পৌঁছেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। ছাত্র-জনতার বিপ্লবের প্রেক্ষাপটে ৮ আগস্ট বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর এটাই ইউনূসের প্রথম বিদেশ সফর। এই সফরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে তার বৈঠক হবে। ২৭ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের নেতা হিসেবে তিনি সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ভাষণ দেবেন। কাতার এয়ারওয়েজের একটি বাণিজ্যিক ফ্লাইটে সোমবার ভোর ৫টায় ঢাকা ত্যাগ করেন প্রধান উপদেষ্টা ও তার সফরসঙ্গীরা। দোহায় উড়োজাহাজ বদলে তারা নিউ ইয়র্কের জেএফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান সোমবার স্থানীয় সময় রাত ১০টা ১০ মিনিটে। ঢাকা ত্যাগের সময় প্রচলিত রেওয়াজ ভেঙে বিমানবন্দরে আড়ম্বরপূর্ণ আনুষ্ঠানিকতা এড়িয়ে গেছেন ইউনূস, সাধারণ যাত্রীদের সঙ্গেই যাত্রা করেছেন নীরবে।
কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাকে অভ্যর্থনা জানান জাতিসংঘের বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও স্থায়ী প্রতিনিধি মুহাম্মদ আবদুল মুহিত এবং যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনের শার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ডিএম সালাউদ্দিন মাহমুদ। বিমান বন্দরের আনুষ্ঠানিক শেষে প্রধান উপদেষ্টা যান গ্র্যান্ড হায়াত হোটেলে। নিউ ইয়র্কে অবস্থানকালে এই হোটেলে তিনি ও তার সফর সঙ্গীরা থাকবেন। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সাধারণ আলোচনা শুরু হবে মঙ্গলবার। আর প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস সাধারণ অধিবেশনে ভাষণ দেবেন ২৭ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সময় সকাল ১০টায়।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছিলেন, প্রধান উপদেষ্টা তার বক্তব্যে বিগত দুই মাসে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া অভাবনীয় গণ অভ্যুত্থানের বিবরণ ও আগামী দিনে জনভিত্তিক, কল্যাণমুখী ও জনস্বার্থে নিবেদিত একটি রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তোলার দৃঢ় প্রত্যয় বিশ্বদরবারে তুলে ধরবেন। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের ক্ষেত্রে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের বলিষ্ঠ অবস্থান, জলবায়ু পরিবর্তন ও এর প্রভাব, জলবায়ু ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, বিশ্বব্যাপী সংঘাত, রোহিঙ্গা সংকট, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের ক্ষেত্রে উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রতিকূলতা, উন্নয়নশীল দেশসমূহ হতে সম্পদ পাচার প্রতিরোধ, নিরাপদ অভিবাসন, অভিবাসীদের মৌলিক পরিষেবা প্রাপ্তির নিশ্চয়তা এবং ফিলিস্তিন সম্পর্কিত বিষয়গুলো প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে উঠে আসতে পারে। এ অধিবেশনের ফাঁকে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বৈঠক হচ্ছে না বলেও জানিয়েছিলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। তবে সফরের দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবারই মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে তার দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেছেন, সফরকালে নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী, পাকিস্তান ও নেপালের প্রধানমন্ত্রী, ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, জাতিসংঘ মহাসচিব, জাতিসংঘ মানবাধিকার সম্পর্কিত হাই কমিশনার, বিশ্ব ব্যাংক গ্রুপের প্রেসিডেন্ট, ইউএসএইডের প্রশাসকের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বৈঠক হতে পারে। এবছরই জাতিসংঘে বাংলাদেশের সদস্যপদ প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি হচ্ছে। এ উপলক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টার উপস্থিতিতে মঙ্গলবার জাতিসংঘ সদরদপ্তরে একটি উচ্চ-পর্যায়ের অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে বাংলাদেশ। তার সফরসঙ্গীর সংখ্যা নিরাপত্তা, প্রেসসহ সব মিলিয়ে ৫৭ জন। বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদলের প্রধান, জাতিসংঘের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা, কয়েকটি দেশের সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধান এবং বিভিন্ন সংস্থার প্রধানরা সেই অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন। তিন দিনের সফর শেষে ২৭ সেপ্টেম্বর ঢাকার পথে রওনা হবেন প্রধান উপদেষ্টা।