ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা ও তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবন সংলগ্ন প্যারিস রোডে ‘রংপুর বিভাগের শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে এসব দাবি জানানো হয়। এসময় শিক্ষার্থীরা ‘উত্তরবঙ্গে বন্যা হলে বাংলাদেশ তুমি অন্ধ কেন’, ‘ত্রাণ নয় স্থায়ী সমাধান চাই’, ‘এক দফা এক দাবি তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন সময়ের দাবি’, ‘উত্তরবঙ্গ কী দেশের বাইরে?’, ‘বছর বছর ভাসতে চাইনা, তিস্তার স্থায়ী সমাধান চাই’, ‘তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন চাই’, ‘উত্তরে কান্না, চুপ কেন বাংলা?’, ‘দিল্লি না তিস্তা, তিস্তা তিস্তা’, ‘তিস্তার কান্না, আর না আর না’ প্রভৃতি লেখা সম্বলিত প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, ‘খরার সময় আমরা পানি পাচ্ছি না আবার বন্যার সময় হাজার হাজার একর জমি বন্যায় প্লাবিত হচ্ছে। যখনই বন্যা হয় তখনই শুধুমাত্র সাময়িক ত্রাণ দিয়ে আমাদের সান্ত্বনা দেওয়া হয়। জাতীয় বাজেটগুলোতেও উত্তরবঙ্গকে অবহেলা করা হয়। আমরা এ ধরনের বৈষম্য চাই না। এই সমস্যার একটা যৌক্তিক সমাধান চাই। আন্তর্জাতিক নদীগুলোর ন্যায্য হিস্যা যদি ভারত না দেয়, আমরা প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক আদালতে যাবো। আমরা অতি দ্রুত তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন চাই।’ এছাড়া উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে গজলডোবা বাঁধ খুলে আকস্মিক বন্যা সৃষ্টি হয়েছে দাবি করে কর্মসূচি থেকে প্রতিবাদ জানান তারা।
সমাবেশে যোগ দিয়ে গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী আলমগীর বলেন, ‘খরার সময় আমরা পানি পাচ্ছি না আবার বন্যার সময় হাজার হাজার একর জমি বন্যায় প্লাবিত হচ্ছে। যখনই বন্যা হয় তখনই শুধুমাত্র সাময়িক ত্রাণ দিয়ে আমাদের সান্ত্বনা দেওয়া হয়। জাতীয় বাজেট গুলোতেও উত্তরবঙ্গকে অবহেলা করা হয়। আমরা এ ধরনের বৈষম্য চাই না। আমরা অতি দ্রুত তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন চাই। চীন কিংবা ভারত আমরা বুঝিনা, আমরা বারবার এভাবে বন্যায় ভাসতে চাই না। সর্বোপরি আমরা ত্রাণ চাই না, আমরা বাঁচতে চাই।’
সমাবেশে আরবি বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এম. এ. ইউসুফ আলি বলেন, ‘আমরা ত্রাণ চাইতে আসি নাই, আমরা এসেছি তিস্তা পাড়ের মানুষের অধিকারের জন্যে। বাংলাদেশের দরিদ্রতম জেলা কুড়িগ্রাম। তবে এমন নয় যে কুড়িগ্রামের মানুষজন কাজ জানে না বা তারা অলস, তারা খেটে খাওয়া মানুষ। কুড়িগ্রামের সমস্যাটা হলো একটা কৃত্রিম সংকট। তাদেরকে নানাভাবে বঞ্চিত রেখে বঞ্চিত রেখে এই সংকটে ফেলা হয়েছে। প্রতিবছর বন্যার ফলে কুড়িগ্রামে বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়। আমরা আন্তর্জাতিক নদীর ন্যায্য অধিকার চাই। আমরা চাই নদীগুলোর নাব্যতা ফিরিয়ে আনা হোক। এই অঞ্চলের মানুষ যেন পুনরায় এভাবে প্লাবিত না হয়, এই অঞ্চলের মানুষের যেনো পুনরায় এভাবে প্লাকার্ড নিয়ে না দাঁড়াতে হয় সে অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। সমাবেশে সংহতি জানিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক মেহেদী সজীব বলেন, বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র ভারত কতৃক গজলডোবা বাঁধ খুলে দেওয়ার কারণে তিস্তাসহ আশপাশের অঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এটা শুধু আজকে থেকে নয়, গজলডোবা বাঁধ দেওয়ার পর থেকেই তিস্তা পাড়ের মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করে আসছে। তারা তাদের জীবনযাপনের যে ন্যূনতম অধিকার সেই অধিকারটুকু ভোগ করতে পারছে না। বাংলাদেশে একটা সিস্টেম চালু আছে যে সবকিছু খুব বাজে ভাবে সেন্ট্রালাইজড। সবকিছু ঢাকা কেন্দ্রিক, দক্ষিণবঙ্গ কেন্দ্রিক। তিনি বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য যদি উত্তরবঙ্গকে বাদ দিয়ে চিন্তা করেন তাহলে কোন অবস্থাতেই উন্নয়নের শিখরে পৌঁছাতে পারবেন না। উত্তরবঙ্গের মানুষগুলো কোন সাহায্য অনুদানে বিশ্বাসী না, তারা এই সমস্যার একটা যৌক্তিক সমাধান চায়। আন্তর্জাতিক নদীগুলোর ন্যায্য হিস্যা যদি ভারত না দেয়, আমরা প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক আদালতে যাবো। এই বাংলাদেশকে এগিয়ে চলতে হলে উত্তরবঙ্গ-দক্ষিণবঙ্গ একসাথে কাজ করতে হবে, আন্তজার্তিক নদীগুলোর ন্যায্য হিস্তা আমাদের দিতে হবে, উত্তরবঙ্গ-তিস্তা নিয়ে একটি বৃহৎ পরিকল্পনার আওতায় নিয়ে আসতে হবে। বিক্ষোভ সমাবেশে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও ইন্সটিটিউটের শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।