দুই দফা দাবিতে চাঁপাইনবাবগঞ্জে মানববন্ধন করেছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সোমবার সকালে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্বরে এই মানববন্ধন হয়। মানুষের নিরাপদ ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং টেকসই ও যুগোপযোগী বিতরণ ব্যবস্থা বিনির্মাণের লক্ষ্যে আরইবি-পবিস একীভূতকরণসহ অভিন্ন চাকুরিবিধি বাস্তবায়ন এবং সকল চুক্তিভিত্তিক/অনিয়মিত কর্মচারীদের নিয়মিতকরণের ২ দফা দাবি আদায়ে আন্দোলনের অংশ হিসেবে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন ভোলাহাট উপজেলা শাখার ডি.জি.এম মোঃ ফকুরুদ্দীন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর শাখার ডি.জি.এম (কারিগরি মোঃ ফিরোজ জামান, মহারাজপুর শাখার এজি. এম মোঃ আমিনুর রসুল, এজি. এম (কারিগরি) মোঃ মোঃ সালমান তারিক, জুনিয়র ইন্জিনিয়ার রানা তরপদার, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরের লাইন্যান মোঃ সজিব রায়হান, শিবগঞ্জ সাহাপাড়া শাখার বিলিং সহকারী শারমিন আক্তারসহ অন্যরা। এসময় চাঁপাইনবাবগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
বক্তারা বলেন, দেশের ১৪ কোটি মানুষের নিরাপদ ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং টেকসই ও যুগোপযোগী বিতরণ ব্যবস্থা বিনির্মাণের লক্ষ্যে চলতি বছরের শুরু থেকে আরইবি-পবিস একীভূতকরণসহ অভিন্ন চাকুরিবিধি বাস্তবায়ন এবং সকল চুক্তিভিত্তিক/অনিয়মিত কর্মচারীদের নিয়মিতকরণের ০২ দফা দাবি আদায়ে আন্দোলন করে আসছেন ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ৪৫ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী। আন্দোলনের যৌক্তিকতা উপলব্ধি করে সরকারের পক্ষ থেকে সমাধানের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকলেও কালক্ষেপণ এবং সংস্কারে অস্বীকৃতি জানিয়ে বিপত্তি সৃষ্টি করছে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি)। বিদ্যুৎ বিভাগ কর্তৃক পল্লী বিদ্যুৎ সিস্টেমের সংস্কার সময়ের দাবি হিসেবে উল্লেখপূর্বক সংস্কারসহ অন্যান্য সমস্যার যৌক্তিক সমাধানের জন্য ০৯ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়।
কিন্তু আরইবি কর্তৃক উক্ত কমিটির সভায় অনুপস্থিত থাকা, পরবর্তীতে ভিন্ন তারিখে সভায় উপস্থিত থাকলেও সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আরইবির পক্ষ থেকে সংস্কার প্রস্তাব উপস্থাপন না করা, অতঃপর সংস্কার প্রস্তাব উপস্থাপনের জন্য পুনরায় সভা আয়োজন করা হলেও আরইবির পক্ষ থেকে সংস্কার না করে বিদ্যমান কাঠামো বহাল রাখার প্রস্তাব প্রদান করা হয়। আরইবি-পবিস সংকটকালীন সময়ে সমাধানের চ্যালেঞ্জ মাথায় নিয়ে গত ২৬-০৮-২০২৪ তারিখে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে যোগদান করেন মেজর জেনারেল এস এম জিয়া-উল-আজিম। যোগদানের পর দাবি বাস্তবায়নে সহযোগিতার আশ্বাস এবং তাঁর প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস রাখতে অনুরোধ জানান। কথা এবং কাজে শতভাগ মিল পাবেন মর্মেও তিনি প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। কিন্তু বাস্তবে আরইবির কার্যক্রম সংস্থা প্রধানের প্রতিশ্রুতির সাথে পুরোপুরি অসামঞ্জস্যপূর্ণ।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মনে আরইবির প্রতি তীব্র ক্ষোভ ও চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে এবং প্রতিশ্রুতি রক্ষায় ব্যর্থতাসহ বিভিন্ন দূরভিসন্ধিমূলক কাজের জন্য চেয়ারম্যান মহোদয়ের প্রতিও আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে। আমরা স্পষ্টভাবে জানাতে চাই, দেশের ১৪ কোটি মানুষকে বিদ্যুৎ সেবা প্রদানের জন্য ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সক্ষমতা রয়েছে। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং গ্রাহক সেবা প্রদানের জন্য মধ্যস্বত্বভোগী আরইবির কোন প্রয়োজনীয়তা বর্তমানে নেই। দেশের মানুষের উন্নত বিদ্যুৎ সেবা প্রাপ্তিতে বিমসৃষ্টিকারী হিসেবে পরিচিত না হয়ে আধুনিক ও টেকসই বিতরণ ব্যবস্থা বিনির্মাণে এগিয়ে আসতে হবে। অন্যথায় পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের দুর্নীতিবাজ ও পল্লী বিদ্যুৎ সিস্টেমকে অস্থিতিশীলকারী কর্মকর্তাদের অপসারণের দাবিতে পুনরায় আরইবি ঘেরাও কর্মসূচি গ্রহণের প্রস্তুতি নেওয়া হবে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে আরইবির পক্ষ থেকে চলতি মাসের মধ্যে সকল চুক্তিভিত্তিক/অনিয়মিত কর্মচারীর নিয়মিতকরণ সম্পন্ন করতে হবে এবং রিফর্ম কমিটির সভায় পূর্ণাঙ্গ সুপারিশ প্রণয়ন করতে হবে। পুনরায় কোন ধরণের ষড়যন্ত্রের অপচেষ্টা করা হলে আগামী মাসের ০১ তারিখ থেকে আরইবির প্রতি সম্পূর্ণ অনাস্থা জারি করে ১৪ কোটি গ্রাহকের বিদ্যুৎ সেবা নিশ্চিতের দায়িত্ব এককভাবে ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি কাঁধে তুলে নিবে এবং ‘আরইবি ব্লকেড’ কর্মসূচির মাধ্যমে সরকারের নিকট পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের অপ্রয়োজনীয়তা প্রদর্শন সাপেক্ষে আরইবি বিলুপ্তির ০১ দফা দাবি উপস্থাপন করা হবে। এবিষয়ে দেশের সকল স্তরের ছাত্র-জনতাসহ দেশ সংস্কারে দৃঢ় প্রত্যয়ী, বৈষম্য বিরোধী সরকারের সংশ্লিষ্টদের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করা হয় মানববন্ধন থেকে।