গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় তিন সাঁওতাল হত্যার বিচারসহ বাপ-দাদার জমি ফেরত দেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে। সোমবার সাহেবগঞ্জ বাগদা ফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটি, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ ও আদিবাসী বাঙালী সংহতি পরিষদ যৌথভাবে এ কর্মসূচির আয়োজন করে। উপজেলার সাঁওতালপল্লী মাদারপুর ও জয়পুর গ্রাম থেকে সাঁওতালরা তীর-ধনুক, ব্যানার ফেস্টুনসহ খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে গোবিন্দগঞ্জ-দিনাজপুর সড়কের কাটামোড় এলাকায় সমবেত হয়।
পরে সেখানে অনুষ্ঠিত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সাহেবগঞ্জ বাগদাফার্ম সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ফিলিমন বাস্কে। বক্তব্য রাখেন এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক ও মানবাধিকার কর্মী শামসুল হুদা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রোবায়েত ফেরদৌস, লেখক ও গবেষক পাভেল পার্থ, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ সভাপতি বিচিত্রা তিরকি, সাধারণ সম্পাদক নরেন চন্দ্র পাহান, সাংগঠনিক সম্পাদক সুভাষ চন্দ্র হেমব্রম, আদিবাসী বাঙালি সংহতি পরিষদের গাইবান্ধা সদর উপজেলা আহ্বায়ক গোলাম রব্বানী মুসা, ভূমি উদ্ধার কমিটির নেতা স্বপন শেখ, মনির হোসেন সুইট, প্রিসিলা মুরমু। মানবাধিকার কর্মী শামসুল হুদা বলেন, রংপুর চিনিকল কর্তৃপক্ষ ১৯৬২ সালে আখ চাষের জন্য সাঁওতালদের নিকট থেকে গোবিন্দগঞ্জের সাহেবগঞ্জ এলাকায় এক হাজার ৮৪২ একর জমি অধিগ্রহণ করে। অধিগ্রহণের চুক্তি অনুযায়ী ওই জমিতে আখ বাদে অন্য কোনো ফসল চাষ করা হলে সাঁওতালদের ফেরত দিতে হবে। এখন এসব জমিতে ধান, পাট, তামাকসহ বিভিন্ন ফসলের চাষ করা হচ্ছে। তাই চুক্তি অনুযায়ী এসব জমি সাঁওতালদের ফেরত দিতে হবে। সাহেবগঞ্জ বাগদা ফার্ম সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ফিলিমন বাস্কে বলেন, ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর বেআইনিভাবে আদিবাসী সাঁওতালদের বসতবাড়ি থেকে উচ্ছেদ করতে তাদের বাড়িঘরে সন্ত্রাসীরা স্থানীয় প্রশাসনের উপস্থিতি ও সহায়তায় হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে। এ সময় পুলিশ গুলিবর্ষণ করে। গুলিতে তিন সাঁওতাল শ্যামল, মঙ্গল ও রমেশ নিহত হয়। আহত হয় অনেকেই। ওই ঘটনায় সাঁওতাল নেতা থমাস হেমব্রম বাদী হয়ে তৎকালীন এমপি আবুল কালাম আজাদসহ ৩৩ জনের নাম উল্লেখ এবং ৫০০-৬০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে একটি মামলা করেন। কিন্তু সাত বছর পরেও সেই ঘটনার বিচারকাজ আজও শুরু হয়নি। তিনি তিন সাঁওতাল হত্যায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার, সাঁওতাল-বাঙালিদের নামে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, বাপ-দাদার জমি ফেরত দেওয়ার দাবি জানান।