টোল বন্ধের দাবীতে মহানন্দা সেত’রু টোলঘর ভাংচুর করার পর পুড়িয়ে দিয়েছে শিক্ষার্থীরা। বুধবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সেতু (মহানন্দা সেতু)র টোলঘর ভাংচুর এবং আগুন দেয় শিক্ষার্থীদের ব্যানারে একদল শিক্ষার্থী। এঘটনায় টোল ঘরে থাকা কয়েকজন টোল আদায়কারী আহত হয়। আহতদের মধ্যে একজন সাগরকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সরকারী মেডিকেলে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের হামলায় পালিয়ে প্রানে বাঁচে সেতুর টোল আদায়কারী ও অন্যান্য কর্মচারীরা। আগুনে টোলঘরের আসবাবপত্র ও অন্যান্য সকল জিনিষপত্র পুড়ে ভষ্ম হয়ে যায়। কয়েকঘন্টা অরক্ষিত অবস্থায় থাকে টোলঘর। পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে বলে জানিয়েছেন সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী।
এদিকে, এক শিক্ষার্থীকে মারধরের প্রতিবাদে বুধবার বিকালে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা চাঁপাইনবাবগঞ্জের মহানন্দা সেতুর টোলঘরে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এসময় তাদের অবরোধের কারণে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-সোনামসজিদ স্থলবন্দর সড়কে প্রায় দেড়ঘণ্টা যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী ও শিক্ষার্থীরা জানান, সকালে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী হুজাইফা ইবনুল সাকিল মোটরসাইকেল নিয়ে যাওয়া সময় টোল চান আদায়কারীরা। এনিয়ে ওই শিক্ষার্থী ও আদায়কারীদের মধ্যে তর্কাতর্কি হয়। এক পর্যায়ে হুজাইফাকে টোল আদায়কারীরা মারধর করে। এ খবর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ক্যাম্পাসে পৌঁছালে শিক্ষার্থীরা বিকাল সাড়ে ৩ টার দিকে টোলঘরে হামলা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। শিক্ষার্থীদের অবরোধের কারণে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-সোনামসজিদ স্থলবন্দর সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে এতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। এ সময় পুলিশ ও সেনাবাহিনীর কাছে শিক্ষার্থীরা মহানন্দা সেতু পুরোপুরি টোলমুক্ত করে দেয়ার অনুরোধ জানান।
অনদিকে, চাঁপাইনবাবগঞ্জের বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সেতু (মহানন্দা সেতু)র টোলঘর কর্তৃপক্ষের এক কর্মচারী জানায়, টোল বন্ধের দাবী করে মহানন্দা সেতুর টোলঘর ভাংচুর করার পর আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পলিটেকেনিক এর শিক্ষার্থীরা। বুধবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে হঠাৎ করেই কিছু বোঝার আগেই চাঁপাইনবাবগঞ্জ পলিটেকেনিকের শিক্ষার্থীদের ব্যানারে একদল শিক্ষার্থী মহানন্দা সেতুর টোলঘর ভাংচুর এবং আগুন দেয়। টোল ঘরের আসবাবপত্র ভাংচুর করে এবং টোল আদায়কারী কর্মচারীদের উপর এলোপাথাড়ী মারধর শুরু করে। এঘটনায় টোল ঘরে থাকা কয়েকজন টোল আদায়কারী আহত হয়। আহতদের মধ্যে একজন সাগরকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সরকারী মেডিকেলে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের হামলায় পালিয়ে প্রানে বাঁচে সেতুর টোল আদায়কারী ও অন্যান্য কর্মচারীরা। আগুনে টোলঘরের আসবাবপত্র ও অন্যান্য সকল জিনিষপত্র পুড়ে ভষ্ম হয়ে যায়। ঘটনার সময় সকলেই দিকবেদিক পালিয়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেয়। এঘটনায় তাৎক্ষনিক সেনাবাহিনী ও পুলিশকে জানানো হয়। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোন সাড়া পাওয়া যাযনি। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সেখানে আসেন। ততক্ষনে টোল ঘরের সব কিছু শেষ।
এছাড়া, এসময় একদল বিক্ষুব্ধ জনতাও টোল প্লাজায় আগুন ধরিয়ে দেয়। এছাড়া পাশের উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়েও ভাঙচুর করেন। পরে সন্ধ্যা ৬টার দিকে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-সোনামসজিদ মহা সড়কটি যান চলাচলের স্বাভাবিক হয়। এব্যাপারে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সানজিদা আফরিন ঝিনুক বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সেতু (মহানন্দা সেতু)র টোল ইজারা দেয়া আছে। সরকারের রাজস্ব আয় এর বিষয়টি বিবেচনা করে হুট করেই তো টোল বন্ধ করে দেয়া যায় না। শিক্ষার্থীরা এবং অন্যরা বার বার টোল বন্ধের জন্য অবরোধ, হামলা, ভাংচুর করেছে। বুধবার শিক্ষার্থীদের ব্যানারে টোল আদায়কারীদের উপর হামলা, ভাংচুর এবং শেষে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। সরকারের কাছ থেকে ইজারা নিয়ে ইজারাদাররা টোল আদায় করছে।
এখানে শিক্ষার্থীরা এসব করছে, এটা মোটেও ঠিক করছে না। তিনি বলেন, একটি মহল সুযোগ নিচ্ছে সরকারের রাজস্ব আয়ের বিষয়টি বন্ধের। বার বার এমন ঘটনার সমাধান বিষয়ের প্রশ্নে তিনি বলেন, এভাবে একটার পর একটা ঘটনা ঘটাচ্ছে শিক্ষার্থীদের ব্যানারে একটি মহল। এব্যাপারে কঠোর হওয়া ছাড়া আমাদের আর কোন রাস্তা নেই। তিনি বলেন, এঘটনায় জেলা প্রশাসকের সাথে আলোচনায় বসেছিলাম আমরা। এসময় শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিও ছিলেন। জেলা প্রশাসক মহোদয় সরকারের রাজস্বের বিষয়টির দিকেই গুরুত্ব দেন। পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশ সেখানে পৌছেন এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। তিনি আরও বলেন, বার বার এরকম ঘটনায় ইজারাদার বার বারই ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। আর কত ক্ষতির শিকার হবেন ইজারাদাররা। এবিষয়ে একটি কঠোর এবং সঠিক সিদ্ধান্ত হওয়া দরকার বলেও মতামত দেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সানজিদা আফরিন ঝিনুক।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সেতু (মহানন্দা সেতু)র ইজারাদার মোঃ হাম্মাদ বলেন, আমরা মহানন্দা সেতু ইজারা নেয়ার পর থেকেই নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি। বুধবার বিকেলে আমাদের টোল ঘর ভাংচুর, হামলা করে লুটপাট করেছে শিক্ষার্থীদের ব্যানারে একদল শিক্ষার্থী। টোল আদায় জটিলতা নিয়ে বুধবার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এক মিটিং হয়। মিটিং এ জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, র্যাব কর্মকর্তা, সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা, আন্দোলনকারী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সেখানে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সরকারী নীতিমালা (কে বা কারা টোল আদায় এর আওতামুক্ত) বিষয়টি সকলের সামনে তুলে ধরেন। নীতিমালা মোতাবেক জেলা প্রশাসক সরকারের রাজস্ব আদায়ের বিষয়টি ঠিক রাখার জন্য সকলকে বলেন। সভায় সামনে পুজোর কারণে আগামী ১৫ অক্টোবর থেকে নিয়ম মেনে টোল প্রদানের বিষয়টি সিদ্ধান্ত হয়। তিনি বলেন, আমাদের এর আগের ঘটনায় আসবাবপত্র ভাংচুর, লুটপাট, মারধর এর কারণে প্রায় ২৭ লক্ষ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বুধবারের ঘটনায় ২টি মেশিন, রাবার এর গতিরোধক, ভাংচুর, টাকা লুটপাট এবং আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়ায় প্রায় ২৫ লক্ষ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া কর্মচারীদের উপর হামলায় কয়েকজন আহত হয়েছে। একজনকে রাজশাহী মেডিকেলে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, সেখানে ‘জেলা প্রশাসক মহোদয় নিজেও বলেছেন আমারও টোল ফ্রী নয়। তারপরও ইজারাদাররা সম্মান দিয়ে সরকারী দপ্তরের গাড়ির টোল নেন না। কিন্তু নীতিমালা মোতাবেক টোল নিলে আমাদের কিছু করার নেই। কারণ ইজারাদাররা নিয়ম মোতাবেক ইজারা নিয়েছে।’ ইজারাদার হাম্মাদ বলেন, বিভিন্ন হাট বাজারে নির্ধারিত টোল এর কয়েকগুন টোল আদায় করা হচ্ছে, সেটা দেখার কেউ নেই। কিন্তু আমরা সরকারের বেঁধে দেয়া টোল আদায় করছি। তারপরও আমাদের উপর নানাভাবে চাপ দেয়া হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি আমরা। অনেক সময় নীতিমালার তোয়াক্কা না করে অবৈধ চাপও দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা মিটিং করে বাসায় আসতেই পারিনি, খবর পেলাম শিক্ষার্থীরা টোল ঘরে হামলা, ভাংচুর চালিয়ে আগুন দিয়েছে। এতে সব পুড়ে শেষ হয়ে গেছে। তিনি বলেন, এটার একটা ব্যবস্থা হওয়া দরকার। আমাদের নিরাপত্তাসহ টোল আদায়ের সকল ব্যবস্থা সরকারের পক্ষ থেকেই নিশ্চিত করতে হবে। আমরা টাকা দিয়ে ইজারা নিয়েছি। এখানে টাকা নস্ট করার জন্য আসিনি। আমরা অনেক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি, আর নয়।
এব্যাপারে জেলা প্রশাসক মোঃ আব্দুস সামাদ বলেন, টোল আদায়ের জটিলতার বিষয় নিয়ে আমরা বুধবার বসেছিলাম। অনেক কিছু আলোচনা হয়েছে, আগামীতে আবারও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে বিষয়টির সমাধান করা হবে।
বিশিষ্টজনদের মতামত, সরকারের নিয়ম মোতাবেক মহানন্দা সেতুর টোল ইজারা দেয়া হয়েছে। এখানে ইজারাদারদের আসবাবপত্র ভাংচুর, হামলা, আগুন। বিষয়টি জনমনে আতংক ও নানা প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে। সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, টোল আদায় হবে, না বন্ধ হবে। ইজারাদার ক্ষতিগ্রস্থ কেন?। সরকারীভাবে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে না কেন? আর শিক্ষার্থীরাই বা টোল আদায়কারী বা টোলঘরে হামলা, ভাংচুর চালাচ্ছে কেন?। সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানাতে পারে শিক্ষার্থীরা। বিশৃংখলা সুষ্টি কেন? বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন তো বিশৃংখলা বন্ধের জন্য। অনিয়ম, দূর্ণীতি, স্বেচ্ছাচারীতা, অবৈধ ক্ষমতা প্রতিরোধ বা বন্ধের জন্য। তাহলে, এমনটা কেন?