চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলায় অবৈধভাবে স্থাপনা হওয়া ৩টি ইট ভাটা ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছে প্রশাসন। সোমবার দুপুর ১২ টার দিকে উপজেলার শ্যামপুর ইউনিয়নের কয়লাদিয়াড় এলাকায় পরিবেশ অধিদপ্তরের সমন্বয়ে ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিষ্ট্রেটের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমান আদালত অভিযান চালিয়ে মেসার্স স্মার্ট ব্রিফস, মেসার্স সনি ব্রিফস-১ ও মেসার্স সনি ব্রিফস-২ নামে এই তিনটি ইটভাটা ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়া হয়। অভিযানে ইটভাটার মালিকপক্ষ কোনো লাইসেন্স দেখাতে না পারায় এবং পরিবেশের ক্ষতি হওয়ায় ভ্রাম্যমান আদালত এই অভিযান পরিচালনা করেন।
জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ আমিনুল ইসলাম বলেন, জেলায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, আম বাগান, ফসলি জমিতে গজিয়ে উঠেছে অবৈধ ইটভাটা। এসব ইট ভাটা পর্যায়ক্রমে উচ্ছেদ করা হবে। তিনি আরো বলেন, যে তিনটি ইটভাটা ভেঙে দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে মেসার্স স্মার্ট ব্রিফস, মেসার্স সনি ব্রিফস-১ ও মেসার্স সনি ব্রিফস-২। তারা কেউ কোন কাগজপত্র দেখাতে পারেনি। এই অভিযানে সহযোগিতা করেন পুলিশ, আর্মড পুলিশ ও বিজিবি’র কয়েকটি টিম। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা পরিবেশ অধিদপ্তররের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ ছানুয়ার হোসেন বলেন, সারাদেশে অবৈধ ইটভাটা বন্ধের অভিযান চলমান। এর ধারাবাহিকতায় উপজেলায় তিনটি ইটভাটা ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র না নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বায়ু দূষণ করে আসছিল এই ইটভাটাগুলো।
উল্লেখ্য, গত ৪ সেপ্টেম্বর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশে এসব ইট ভাটা বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন করেছিলেন শিক্ষার্থীরা। এসময় উপজেলার নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. আফতাবুজ্জামান আল-ইমরানকে এসব অবৈধ ইটভাটা বন্ধে স্মারকলিপি প্রদান করেন শিক্ষার্থীরা। এদিকে, আম বাগানসহ পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করায় স্থানীয় উত্তেজিত জনতা আরও দুটি টি ইটভাটা বন্ধের দাবি জানান। কিন্তু ওই ভাটাগুলোর বৈধ কাগজপত্র আছে দাবী করে ফিরে আসার চেষ্টা করেন ম্যাজিস্ট্রেটগণ। সে সময় তাদের ঘিরে ধরে অবরুদ্ধ করে রাখে স্থানীয় জনতা। এ সময় রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন স্থানীয়রা।
দুপুর একটা থেকে বিকেল সাড়ে তিনটা পর্যন্ত অবরুদ্ধ থাকেন অভিযানে নেতৃত্ব দেয়া ম্যাজিস্ট্রেট নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আমিনুল ইসলামসহ অন্যরা। বিষয়টি নিশ্চিত করে জেলা প্রশাসক মো. আব্দুস সামাদ জানান, ঘটনাস্থলে গিয়ে ম্যাজিস্ট্রেটসহ অবরুদ্ধ সকল কর্মকর্তাদের উদ্ধার করেছে সেনাবাহিনী। স্থানীয় বাসিন্দা তাসাউর রহমান বলেন, আমাদের এলাকায় মোট ৫টি ইটভাটা রয়েছে।
এসব ইটভাটা প্রতিনিয়ত বায়ুদূষণ করে আসছে। আমরা প্রশাসনকে একাধিকবার ব্যবস্থা নিতে বললেও কেউ ব্যবস্থা নেয়নি। আজ জেলা প্রশাসনের একজন ম্যাজিস্ট্রেট এখানে এসে তিনটি ভাটা ভেঙে চলে যাচ্ছিলেন। এ সময় এলাকাবাসী তাদের গাড়ি গতিরোধ করে। তার দাবী টাকা দিয়ে লাইসেন্স নিয়ে এসে অবৈধভাবে ভাটা চালায় ২ প্রভাবশালী। আর এ কারনেই তাদের ভাটাগুলো বার বার অক্ষত থেকে যাচ্ছে।
বিক্ষোভকারী শহিদুল ইসলাম জানান, ৪ সেপ্টেম্বরের মানববন্ধনে গিয়ে ইউএনও কে স্মারকলিপি দেয়ার সময় তিনি বৈধ৩/৪ টি ভাটা বাদে সবগুলো অবৈধ এবং সবগুলো উচ্ছেদ করা হবে এমন আশ^াস দেয়ার পরও অজ্ঞাত কারনে ভাটাগুলো উচ্ছেদ করা হচ্ছেনা।
আর গ্রামে এসব ভাটা হওয়ায় বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছে এ এলাকার মানুষ। তিনি ক্ষোভের সাথে জানান, প্রভাবশালী ২ ব্যক্তির বাড়ি শ্যামপুরের বাবুপুরে এবং তারা আমদানীকারক হবার কারনে টাকার বিনিময়ে প্রশাসন কে ম্যানেজ করে কয়েক কিলোমিটার দুরে কয়লারদিয়ারে ভাটা নির্মান করেছে। যা রীতিমত অন্যায়। স্মার্ট ইট ভাটার মালিক কাওসার আলী জানান, পাশাপাশি ৫ টি ভাটা থাকলেও যে দুটো চালু আছে সেগুলো পরিবেশগত ভাবে অনুমোদন পাবার উপযোগী নয়। অর্থের বিনিময়ে তারা কাগজ এনে ব্যবসা করছে।
অথচ তার ও সনি ভাটায় এর আগে কয়েক দফা অভিযান চালানো হলেও ঐ ২ টো তে অভিযান চালানো হয়না। তাদের ২ টি ভাঙ্গা হলোনা কিন্তু আমাদের ৩ টি ভেঙ্গে ফেলা হলো। তিনি দাবী করেন প্রভাবশালী ঐ ২টি ভাটাও উচ্ছেদ করতে হবে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. আব্দুস সামাদ বলেন, এলাকাবাসী যে দুইটি ইটভাটা ভেঙে দেওয়ার কথা বলছেন, তাদের লাইসেন্স রয়েছে। এজন্য তাদের ইটভাটাগুলো ভেঙে দেওয়া হয়নি। এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে বিষয়টির ব্যবস্থা নেয়া হবে।