সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩০ বছর থেকে বাড়িয়ে ৩২ বছর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। সেই সাথে চাকরিবিধি পরিবর্তন করে বিসিএস পরীক্ষা দেওয়ার ক্ষেত্রে সীমা বেঁধে দেওয়া হচ্ছে। একজন প্রার্থী তিনবারের বেশি সরকারি চাকরির এ নিয়োগ পরীক্ষা দিতে পারবেন না। বৃহস্পতিবার অন্তর্র্বতী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সভায় বয়সসীমা নির্ধারণ অধ্যাদেশের খসড়ায় নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয় বলে জানিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। গত একযুগ ধরে বিভিন্ন সময়ে এই বয়সসীমা বাড়িয়ে ৩৫ বছর করার দাবি উঠেছে, কিন্তু বিগত আওয়ামীলীগ সরকার আমলে নেইনি। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর অন্তর্র্বতী সরকার এ বিষয়ে নমনীয় ভূমিকা নেয়। দেশের পরিস্থিতি ও বাস্তবতা বিবেচনায় বয়সসীমা কত হওয়া উচিত, তা পর্যালোচনার জন্য একটি কমিটি করে দেওয়া হয়। গঠিত কমিটি পুরুষের ক্ষেত্রে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩৫ বছর এবং নারীদের ক্ষেত্রে ৩৭ বছর করার সুপারিশ করেছিল। কিন্তু সরকারের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে বয়সসীমা বাড়ল দুই বছর।
বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক হয়। উপদেষ্টা পরিষদের নেওয়া সিদ্ধান্তর কথা বেলা আড়াইটায় সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হয়। সেখানে বলা হয়, সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত, সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ, পাবলিক নন-ফাইন্যানসিয়াল কর্পোরেশনসহ স্ব-শাসিত সংস্থায় সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বয়সসীমা নির্ধারণ অধ্যাদেশ, ২০২৪-এর খসড়ার নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের সকল ক্যাডারের চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩২ বৎসর নির্ধারণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের আওতা বহির্ভূত সকল সরকারি চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রেও সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩২ বৎসর হবে। স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত সংস্থায় এ নিয়ম চালু করতে স্ব স্ব নিয়োগ বিধিমালায় প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনতে হবে। তবে, প্রতিরক্ষা কর্মবিভাগ ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ক্ষেত্রে স্ব স্ব নিয়োগ বিধিমালা বহাল থাকবে। স্বাধীনতার পর সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা আগের ২৫ থেকে বাড়িয়ে ২৭ বছর করা হয়েছিল। এরপর আশির দশকে এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে দীর্ঘ সেশনজট তৈরি হয়। ওই পরিস্থিতিতে ১৯৯১ সালে বয়সসীমা ২৭ থেকে ৩০ বছরে উন্নীত করা হয়। পরে মুক্তিযোদ্ধা, প্রতিবন্ধী ও আদিবাসী কোটায় আবেদনকারীদের জন্য বয়সসীমা আরও দুই বছর বাড়িয়ে ৩২ বছর করা হয়। এর মধ্যে ১৯৮২ সালে সামরিক শাসক এরশাদের সময়ে ৬৫০ জন ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগে একবারের জন্য সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৫০ বছর পর্যন্ত করা হয়েছিল। আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পর বিভিন্ন পক্ষের দাবি আদায়ের আন্দোলনের মধ্যে ‘চাকরিতে আবেদনের বয়স ৩৫ প্রত্যাশী শিক্ষার্থী সমন্বয় পরিষদ’ ফের রাজপথে নামে। ১৬২টি দেশে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছরের বেশি থাকার কথা তুলে ধরে বাংলাদেশেও একই নিয়ম চালুর দাবি জানায় তারা। তাদের দাবি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় সুপারিশ দিতে ৩০ সেপ্টেম্বর কমিটি গঠন করে অন্তর্র্বতী সরকার। কমিটির প্রধান করা হয় জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরীকে, সদস্য সচিব ছিলেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. মোখলেস উর রহমান।
কমিটির প্রধান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী পরে জানান, সরকারি চাকরিতে প্রবেশে পুরুষের বয়সসীমা ৩৫ বছর ও নারীর ৩৭ ক্ষেত্রে বছর করার সুপারিশ করে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে প্রতিবেদন দিয়েছেন তারা। এর পক্ষে যুক্তি দিয়ে গত ১৪ অক্টোবর তিনি বলেন, মহিলারা যেন সুযোগটা বেশি পায়, সেজন্য বয়স ৩৭ দেওয়া হয়েছে; পার্শ্ববর্তী দেশেও তা আছে । আর সবার জন্য ৩৫ সুপারিশ করা হয়েছে। তার ১০ দিনের মাথায় সরকার বয়সসীমা দুই বছর বাড়ানোর যে সিদ্ধান্ত দিয়েছে, সেখানে নারী, প্রতিবন্ধী বা নৃ-গোষ্ঠীর জন্য আলাদা কোনো বয়সসীমার কথা বলা হয়নি।