৭ নভেম্বর, ঐতিহাসিক জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস। বাংলাদেশের রাজনীতিতে দিনটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৯৭৫ সালের এই দিনে সিপাহি-জনতার ঐতিহাসিক বিপ্লব ঘটেছিল, যা দেশের তৎকালীন রাজনীতির গতিধারা পালটে দিয়ে দেশ ও জাতিকে নতুন পরিচয়ে অভিষিক্ত করেছিল। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পরবর্তী সেনা অভ্যুত্থান ও পালটা অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশে যখন চরম নৈরাজ্যজনক পরিস্থিতি বিরাজ করছিল, তখন সিপাহি-জনতার মিলিত ঐক্যের বিপ্লব দেশ ও জাতিকে অনাকাঙ্ক্ষিত শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি থেকে মুক্তি দিয়েছিল। অভূতপূর্ব সেই বিপ্লব-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে সাময়িক বন্দিদশা থেকে মুক্ত হন স্বাধীনতার ঘোষক তৎকালীন সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান। বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো ৭ নভেম্বরকে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস হিসাবে পালন করে আসছে।
এরই ধারাবাহিকতায় সারা দেশের মতো চাঁপাইনবাবগঞ্জেও ভাবগাম্ভির্যে পালিত হয়েছে দিবসটি। জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে জেলায় পৃথক পৃথক স্থানে র্যালী ও আলোচনা সভা করেছে বিএনপি। কেন্দ্রীয় ঘোষিত কর্মসূচীর অংশ হিসেবে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা বিএনপির আয়োজনে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে জেলার বিভিন্ন স্থানে দলীয় কর্যালয়ে পতাকা উত্তোলনের মধ্যেদিয়ে দিবসটি সূচনা করে নেতাকর্মীরা। বৃহস্পতিবার বিকেলে সদর উপজেলার সুন্দরপুর ইউনিয়ন বিএনপি শাখার আয়োজনে কালীনগর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে বিশাল জনসভা হয়। জনসভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর ৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মোঃ হারুন অর রশীদ।
সুন্দর পুর ইউনিয়ন বিএনপির মোঃ আলতাব আলীর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন জেলা কৃষক দলের আহবায়ক ও সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ তসিকুল ইসলাম তসি ও সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ নজরুল ইসলামসহ উপজেলা ও ইউনিয়নের যুবদল, সেচ্ছাসেবক দল, কৃষকদল ও ছাত্র দলের বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দ। অন্যদিকে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা বিএনপির আহবায়ক মোঃ গোলাম জাকারিয়ার সভাপতিত্বে শহরের টাউন ক্লাব চত্বরে আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। এর আগে একটি বর্ণাঢ্য র্যালী শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
এতে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতি ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম জেলা শাখার সভাপতি এ্যাড. মোঃ সোলায়মান বিশু। বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা আইনজীবী সমিতি ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম জেলা শাখার সাবেক সভাপতি এ্যাড. গোলাম কবির, চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি গোলাম মোস্তফা মন্টু, গোমস্তাপুর উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব ও জেলা বিএনপির সদস্য এবং জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের জেলা সহ-সভাপতি এ্যাড. মোঃ নুরুল ইসলাম সেন্টু।
এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন জেলা ছাত্র দলের সাবেক সভাপতি মোঃ কামরুজ্জামান মুক্তা, জেলা ছাত্র দলের আহবায়ক কমিটির সদস্য মোঃ আক্তারুজ্জামানসহ জেলা, উপজেলা, পৌর ও ইউনিয়ন বিএনপি, যুবদল, সেচ্ছাসেবক দল, কৃষকদল ও ছাত্রদলের বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দ। এদিকে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য সচিব আলহাজ্ব রফিকুল ইসলামের নেতৃত্ব একটি বর্ণাঢ্য র্যালী বের হয়। র্যালীটি শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিন শেষে শান্তিমোড়ে জেলা বিএনপির কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করে। এসময় উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক এ্যাড. রফিকুল ইসলাম টিপু, সদর উপজেলা বিএনপির আহবায়ক ওবায়েদ পাঠান, স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র সহ-সভাপতি আতিক হাসান মুক্তাসহ বিএনপির ও অংগ সংগঠনের বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মীরা।
উল্লেখ্য, বিএনপি সরকারের আমলে এ দিনটিতে সরকারি ছুটি ছিল। আওয়ামীলীগ সরকার এ ছুটি বাতিল করে। আওয়ামী শাসনামলে দিবসটি স্বচ্ছন্দে উদযাপনও করতে পারেনি দলটি। এবার দিনটিকে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের সব ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে। ঘোষণা করেছে ১০ দিনের কর্মসূচি। দিবসটি উপলক্ষ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পৃথক বাণী দিয়েছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই পটপরিবর্তনের পর রাষ্ট্রপতি জিয়ার নেতৃত্বে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব প্রভাবমুক্ত হয়ে শক্তিশালী সত্তা লাভ করে। গণতন্ত্র অর্গলমুক্ত হয়ে অগ্রগতির পথে এগিয়ে যায়। এই দিন থেকে বহুদলীয় গণতন্ত্রের যাত্রা শুরু হয়। মানুষের মনে স্বস্তি ফিরে আসে।
সাবেক সেনাপ্রধান লে. জেনারেল মাহবুবুর রহমানের লেখা ‘কিছু স্মৃতি কিছু কথা’ বইয়ে তিনি উল্লেখ করেন, ‘৭ নভেম্বর গোটা দেশজুড়ে সৈনিক-জনতার স্বতঃস্ফূর্ত এক অভূতপূর্ব উত্থান ঘটে। আর জেনারেল জিয়া সে অভ্যুত্থানের উত্তাল তরঙ্গমালার শৃঙ্গে আরোহণ করে উঠে আসেন জাতীয় নেতৃত্বে পাদপ্রদীপে।’ ৭ নভেম্বরের বিপ্লব সম্পর্কে তদানীন্তন দৈনিক বাংলার রিপোর্টে বলা হয়, ‘সিপাহি ও জনতার মিলিত বিপ্লবে চার দিনের দুঃস্বপ্ন শেষ হয়েছে। মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান বন্দিদশা থেকে মুক্ত হয়েছেন। ৭ নভেম্বর ভোরে রেডিওতে ভেসে আসে, ‘আমি মেজর জেনারেল জিয়া বলছি।’ জেনারেল জিয়া জাতির উদ্দেশে ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে যথাস্থানে নিজ নিজ দায়িত্ব পালনের জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান। ওইদিন রাজধানী ঢাকা ছিল মিছিলের নগরী। পথে পথে সিপাহি-জনতা আলিঙ্গন করে একে অপরকে। সাধারণ মানুষ সেনাবাহিনীর ট্যাঙ্কের নলে পরিয়ে দেন ফুলের মালা। এই আনন্দের ঢেউ রাজধানী ছাড়িয়ে দেশের সব শহর-নগর-গ্রামেও পৌঁছে যায়। দিবসটি উপলক্ষে এক বাণীতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, ৭ নভেম্বরের ঐতিহাসিক বিপ্লব অত্যন্ত তাৎপর্যমণ্ডিত।
৭ নভেম্বরের চেতনায় সব জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে গণতন্ত্রের পথচলাকে অবারিত এবং জাতীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা এই মুহূর্তে অত্যন্ত জরুরি। পৃথক বাণীতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এই মহান দিনে দেশবাসী সবাইকে আহ্বান জানাই, এখনো দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার চূড়ান্ত উত্তরণ হয়নি। অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন, নাগরিক স্বাধীনতা ও রাষ্ট্রের প্রতিটি সেক্টরে গণতান্ত্রিক চেতনার বিকাশ সাধন করতে হবে। তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরে আমরা স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলাম, সেই একই চেতনা বুকে ধারণ করে বহুদলীয় গণতন্ত্র নিশ্চিত করা, স্বাধীনতার সুফল তথা অর্থনৈতিক মুক্তি, শান্তি-শৃঙ্খলা, সাম্য, ন্যায়বিচার ও মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
১