চাঁপাইনবাবগঞ্জে শিবির নেতা আসাদুল্লাহ তুহিন হত্যায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। এই হত্যার ঘটনায় স্বৈরাচার খুনি সরকার ক্ষমতায় থাকায় নয় বছর পর শুক্রবার (৮ নভেম্বর) রাতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানায় নিহত আসাদুল্লাহ তুহিনের আপন মামা মো. কবিরুল ইসলাম বাদী হয়ে এই মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, এমপি, ডাক্তার, আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দ, র্যাব-পুলিশসহ মোট ১৮ জন নামীয় ও অজ্ঞাতনামা ৮/১০ জনকে আসামী করা হয়েছে। নিহত আসাদুল্লাহ তুহিনের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার চরমোহনপুর এলাকার চকপাড়া গ্রামে। তিনি বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির নবাবগঞ্জ সিটি কলেজ শাখার সভাপতি ছিলেন। মামলায় আসামী করা হয়েছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মোঃ আব্দুল ওদুদ বিশ্বাস (৫৬), জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি ডা. গোলাম রাব্বানী ফটিক (৫৫), জেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও সাবেক জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রুহুল আমিন (৭২), আওয়ামীলীগ নেতা ও বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ মো. এজাবুল হক বুলি (৫১), মো. মাইনুল ইসলাম (৬০), ডা. ইব্রাহিম আলী (৪২), মো. সোহেল (৩১), বেনজির আহমেদ (৬২), তৎকালীন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী মহিউদ্দিন খাঁন আলমগীর, তৎকালীন র্যাব-৫, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ক্যাম্পের কমান্ডার মেজর কামরুজ্জামান পাভেল, এসআই বিশারুল ইসলাম, এসআই শহিদুল ইসলাম, হাবিলদার খাইরুল ইসলাম, ল্যান্স কর্পোরাল ওমর ফারুক, নায়েক সওদাগর আলী, মাসুম বিল্লাহ, নুর মুহাম্মদ শিকদার, সিপাহী শফিকুল ইসলাম, এসআই আবু হুরায়রাকে। এছাড়া আরোও অজ্ঞাত নামা ৮ থেকে ১০ জনকে আসামী করা হয়েছে। মামলার এজাহার বিবরণী থেকে জানা যায়, ২০১৫ সালের ২৬ শে জানুয়ারি দুপুর দুইটা থেকে আড়াইটার মধ্যে নিজ বাড়ি থেকে চোখ বেঁধে জোড় পূর্বক গাড়িতে উঠাতে চেষ্টা করে। এই সময় আমার ভাগ্নে আসাদুল্লাহ তুহিন গাড়িতে উঠতে আপত্তি করলে রাইফেলের বাট দিয়ে বেধারক পিটিয়ে গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে যায় র্যাব সদস্যরা। রাত আনুমানিক ১০ টা থেকে ১ টার মধ্যে উল্লেখিত আসামীদের প্রত্যক্ষ উপস্থিতিতে তৎকালীন চাঁপাইনবাবগঞ্জের নতুন স্টেডিয়ামে অস্থায়ী র্যাব কাম্পে তুহিনকে বেধাড়ক মারপিট করতে থাকে এবং জামায়াত নেতাদের অবস্থান সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করে।
আসামীদের প্রচন্ড মারধরের ফলে আসাদুল্লাহ তুহিন গুরুত্বর জখম হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। এই মৃত্যুর ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য ভিকটিমের মৃত দেহকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের লালাপাড়া এলাকায় নিয়ে যায় এবং ভিকটিমের মরদেহ রাস্তায় ফেলে গাড়ি চাপা দিয়ে দেয়। এছাড়া ভিকটিমের মৃত্যুর প্রকৃত কারণ যেন উদঘাটিত না হয় সেজন্য তৎকালীন বি.এম.এ নেতা ডা. গোলাম রাব্বানী ফটিককে দায়িত্ব দেওয়া হয় এবং সে চিকিৎসকদের প্রভাবিত করে মিথ্যা ও বানোয়াট সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত রিপোর্ট প্রদান করে।
মামলার বাদী মো. কাবিরুল ইসলাম বলেন, ২০১৫ সালের ২৬ শে জানুয়ারি দুপুর দুইটা থেকে আড়াইটার মধ্যে নিজ বাড়ি থেকে আমার ভাগ্নে আসাদুল্লাহ তুহিনকে হত্যার উদ্দেশ্যে চোঁখ বেঁধে নিয়ে যায় র্যাব সদস্যরা। এরপর আমরা তার কোন খোঁজ খবর পাইনি। তার পরের দিন একটি মাধ্যমে আমরা খবর পাই চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালে তার মরদেহ রাখা আছে। সারাদিনের বিভিন্ন সাজনো নাটক ও আইনী প্রক্রিয়া শেষে সন্ধ্যার পরে আমাদেরকে তার মরদেহ বুঝিয়ে দেওয়া হয় এবং আমাদেরকে চাপ দিয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে জানাজার ব্যবস্থা করতে বলে। স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের আমলে আমরা কোন মামলা করতে পারিনি বরং আমাদের জীবনই হুমকির মুখে ছিল। গত ০৫ আগষ্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের বিদায় হয়েছে। এখন আমরা নায্য বিচার পাবো। প্রেক্ষিতে আমরা সদর মডেল থানায় উপস্থিত হয়ে মামলা দায়ের করেছি। আশা করি আমরা ন্যায় বিচার পাবো। চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ এস.এম জাকারিয়া বলেন, মামলার আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে। পরবর্তীতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরামর্শ করে তদন্ত সাপেক্ষে মামলা গ্রহণসহ এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।