যশোরে মরমি সাধক ফকির লালন শাহের অনুসারী একটি আখড়া বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর ও লুটপাটের পর সাধুসঙ্গ ও গানের অনুষ্ঠান পণ্ড হয়ে গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রতি বছরের মত সোমবার থেকে দুই দিনব্যাপী সাধুসঙ্গ ও বাউল গানের উৎসব বসার কথা ছিল মনিরামপুর উপজেলার শ্যামকুড় ইউনিয়নের পাড়দিয়া গ্রামের এস এম ফজলুর রহমান ওরফে মন্টু বাউলের বাড়িতে। তিনি এক যুগ ধরে বাড়িতে এই উৎসব করে আসছিলেন। সেখানে খুলনা বিভাগ ছাড়াও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লালন ভক্ত ও অনুসারীরা আসেন। কিন্তু রোববার স্থানীয় এক ব্যক্তি উৎসব বন্ধের হুমকি দেন। আর সোমবার তিনজন গিয়ে হামলা-ভাঙচুর ও লুটপাট চালায় বলে অভিযোগ ওঠেছে। এ ঘটনার পর স্থানীয় বাউল শিল্পী ও লালন ভক্তদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। মন্টু বাউল অভিযোগ করে বলেন, তিনি এক যুগ ধরে এই উৎসব করে আসছেন। রোববার স্থানীয় বিএনপি নেতা ফারুক হোসেন তাকে বাউল গানের আসর বন্ধ করতে বলেন। তখন তিনি ওই নেতাকে বলেন, বিভিন্ন জায়গা থেকে এরই মধ্যে বাউলরা আসতে শুরু করেছেন। হঠাৎ করে বন্ধ করা যাচ্ছে না। তখন ওই নেতা বলেন, যারা এসেছেন, তাদের খাওয়া-দাওয়া করিয়ে বিদায় করে দেন। সোমবার দুপুরের পর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সহসভাপতি শামিম খাঁ ও জগন্নাথ ওরফে জগোসহ তিনজন মোটরসাইকেলে আমার বাড়িতে চড়াও হয়। এক পর্যায়ে ‘লালন আশ্রম’ ও বাউলদের আখড়াতে তারা হামলা চালায়। টিনের আখড়ায় দা দিয়ে কোপাতে থাকে। ওই সময় তারা প্যান্ডেলের শামিয়ানা, চেয়ার, হাঁড়ি-পাতিল ভাঙচুর করে। মন্টু বাউল বলেন, তারা আখড়া ঘরে থাকা কাঁথা-বালিশ ফেলে দেয় এবং ঘরে থাকা ৭০০-৮০০ টাকা লুটে নেয়। এ সময় ছেলে বৌয়ের দুইটি ছাগল নিয়ে টানাটানি করতে থাকে। তাদের নিষেধ করলে তারা টাকা দাবি করে। তখন তিনি একজন প্রতিবেশীর কাছ থেকে তিন হাজার টাকা এনে দিলে তারা হুমকি দিয়ে চলে যায়।
মন্টু ফকিরের স্ত্রী মনোয়ারা ফকির বলেন, তিনটি মোটরসাইকেলে আসেন তিনজন। ভিতরে প্রবেশ করেই ভাঙচুর শুরু করে। এরপর ‘খানকা’ ঘর ভাঙচুর করে। আখড়াতে থাকা বিভিন্ন বকশিসের টাকাও নিয়ে যায়। পরে উঠানে এসে বলে, মোটরসাইকেলে বড় রামদা আছে, ওটা নিয়ে আয়। আজ সব কুপিয়ে যাব। বাড়িঘর, জিনিসপত্র কোপাতে থাকলে হাতজোড় করে হাউমাউ করি। তখন তারা বলে, কোনো কথা বলবি না। বাড়িঘরে আগুন ধরিয়ে দেব। বোমা মারব। বাঁচতে হলে টাকা দিতে হবে। পরে তিন হাজার টাকা নিয়ে তারা চলে যায়। স্থানীয়রা জানান, ঘটনার পর থেকে ফকির পাড়াতে আতঙ্ক বিরাজ করছে। দলবেঁধে তারা মন্টু ফকিরের বাড়িতে ভিড় জমাচ্ছেন। খুলনার চুকনগর থেকে সাধুসঙ্গে অংশ নিতে আসা রফিক বাউল বলেন, গত কয়েক বছর ধরে সাধুসঙ্গে আসি। এবারও এসে দেখি, অনেক সাধু এসেছেন। তবে মন্টু ফকিরের বাড়িঘর ভাঙচুর। লালনের ঘর, ফকিরের খানকা ঘরও ভাঙচুর করা। লুটপাট করা হয়েছে। বাড়িতে আতঙ্কের ছাপ। মনটা খারাপ হয়ে গেল। যশোর বাউলিয়া সংঘের সাধারণ সম্পাদক পরিতোষ বাউল বলেন, খুব জমজমাট সাধুসঙ্গ বসে এখানে। বছরের পর বছর ধরে এই উৎসবে খুলনা বিভাগের অনেক সাধুরা এসে আসর জমান। বাউলরা মুক্তমনের মানুষ। তারা ধর্ম জাত রাজনীতি বোঝেন না। অথচ সন্ত্রাসীদের এই হামলায় পণ্ড হয়ে গেল সাধুসঙ্গ আর বাউল গান। জড়িতদের দ্রুত বিচার দাবি করছি। এদিকে, অভিযোগ অস্বীকার করে শ্যামকুড় ইউনিয়ন ছাত্রদলের সহসভাপতি শামিম খাঁ সাংবাদিকদের বলেন, মন্টু ফকিররা বাউল সঙ্গের নামে গাঁজার ব্যবসা করেন। স্থানীয়রা চায় না, এই অনুষ্ঠান হোক। আমরা তার বাড়িতে গেছিলাম, তবে কোনো ভাঙচুর করা হয়নি। যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নূর ই আলম বলেন, এখনো কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।