নিজস্ব প্রতিনিধি ॥ চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে পানির লাইনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করায় এক অধ্যক্ষ কে প্রাণনাশের হুমকিসহ বিভিন্নভাবে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে শ্রমিকলীগের এক নেতার বিরুদ্ধে। প্রতিবাদে বৃহষ্পতিবার প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অনিদির্ষ্টকালের জন্য ক্লাস বর্জনের ঘোষণা দিয়ে আন্দোলনে নেমেছে।
বৃহষ্পতিবার সকালে শিবগঞ্জ উপজেলার ত্রিমোহনী বাজারস্থ চাতরা ইসলামিক কালচারাল ইন্সিটিটিউট (ফাযিল মাদ্রাসা)’ এ ঘটনা ঘটে। অভিযুক্ত আওয়ামীলীগ নেতা হারুন অর রশিদ, মোকারকপুর ইউনিয়ন শ্রমিকলীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক। মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা এনামুল হক জানান, গত বুধবার চাতরা ইসলামিক কালচারাল ইন্সিটিটিউট (ফাযিল মাদ্রাসা)য় ক্লাস চলাকালিন সময় গভর্ণিং বডি’র সিদ্ধান্ত মোতাবেক প্রতিষ্ঠানের পার্শ্বে একটি খাবার হোটেলে মটরের মাধ্যমে মাদ্রাসার ট্যাংকি থেকে পানির লাইন ব্যবহার না করার নির্দেশনা না শোনায় সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করে দেয়। এর আগে ২ দফা মৌখিকভাবে এবং ৩য় দফা লিখিতভাবে সেচ্ছায় সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করার অনুরোধ করা হলেও তা উপেক্ষা করে সে হোটিলটির মালিক স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা হারুন অর রশিদ। কিন্তু তিনি তা না শোনায় বুধবার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করায় মাদ্রাসার অফিসে গিয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সামনে অধ্যক্ষ এনামুল হককে বিভিন্ন অশ্লীল ভাষায় গালাগালিজ ও প্রাণনাশের হুমকি দেয়। বিষয়টি জানাজানি হলে বৃহষ্পতিবার সকাল থেকে ছাত্র-ছাত্রীরা বিচারের দাবী আন্দোলনে নামে। অধ্যক্ষ মোঃ এনামুল হক আরও বলেন, আমাদের এই প্রতিষ্ঠানের একতলা ভবনটি ভেঙে যখন উন্নিতকরণের কাজ চলছিল, তখন একটি প্রয়োজনীয় পানির জন্য একটি মটর-ট্যাংকি দেয়া হয়। এরপর কাজ শেষ হলে মটর-ট্যাংকি টি ব্যবহার করার জন্য প্রতিষ্ঠানের পার্শ্ববর্তী হারুন তাঁর হোটেলের পানি ব্যবহারের জন্য আমাদের বললে ৯’শ টাকা মাসে চুক্তিবদ্ধ হলে তাঁকে মটার-ট্যাংকিটি ব্যবহার করতে দেয়া হয়। কিন্তু কিছুদিন পূর্বে প্রতিষ্ঠানের গর্ভণিং বডি’র একটি মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয় যে, ‘প্রতিষ্ঠানের কোন জিনিস অন্য কাউকে আর ব্যবহার করতে দেয়া যাবে না’। সিদ্ধান্ত মোতাবেক প্রথমে হারুন সাহেব কে মৌখিকভাবে জানানোর পর কোন কথা না শোনায় তাকে গত ৬ জুলাই লিখিতভাবে নোটিশ করা হয়েছে। নোটিশে তাকে ৭দিনের সময়ও দেয়া হয়েছে। কিন্তু বিষয়টি কোন কর্ণপাত না করেই আমার প্রতিষ্ঠানে এসে আমাকে বিভিন্ন ভাষায় গালাগালিজ ও প্রাণনাশের হুমকি দেয়। আমি বিষয়টি গভর্নিং বডি’র সভাপতিকে অবগত করেছি। তিনি আসলেই এই বিষয়ে যা সিন্ধান্ত নিবেন, আমি তাই করবো। এছাড়া তিনি আরো বলেন, বৃহষ্পতিবার সকালে মাদ্রাসার সকল শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মাদ্রাসায় আসেন। কিন্তু তাঁরা কোন ক্লাস করেননি। শিক্ষার্থীরাও চাই এর সুষ্ঠু সমাধান হোক। তবে এ ঘটনায় কোন আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে, তিনি বলেন, শিক্ষকদের জরুরী সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আজ সন্ধ্যায় ঘটনাটি লিখিতভাবে শিবগঞ্জ থানায় জানানোর প্রস্তুতি চলছে।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত হারুন অর রশিদ বলেন, মাসিক ৯’শ টাকা বিল পরিশোধের মাধ্যমে মটর-ট্যাংকি ব্যবহার ও পানি ব্যবহার করছি। হঠাৎ করে আমাকে নোটিশ দিয়ে বলা হলো, আর মটার-ট্যাংকি ব্যবহার করতে দেয়া হবে না। আমি বিষয়টি আমলে নিয়ে প্রতিষ্ঠান প্রধানের কাছে গিয়ে স্বাভাবিকভাবে বলেছি, আমাকে কিছুদিন সময় দেন। তিনিও আমাকে আগষ্টের ১৫ তারিখ পর্যন্ত সময় দেয়ার পরও সংযোগ বিচ্ছিন্ন ঠিক হয়নি। তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেন।
এদিকে, চাতরা ইসলামিক কালচারাল ইন্সিটিটিউট (ফাযিল মাদ্রাসা)য় সরজমিনে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সাথে ক্লাস বর্জনের বিষয়ে কথা জানতে চাইলে শিক্ষার্থীরা জানায়, বুধবার সকালে আমাদের ক্লাস চলাকালিন সময় হঠাৎ করে হারুন মাদ্রাসায় এসে আমাদের স্যারকে আমাদের সামনে আঙ্গুল দেখিয়ে নানান ভাষায় গালাগালিজ ও গলা টিপে মারার হুমকি দেয়। যেখানে আমাদের অধ্যক্ষ’র লাঞ্ছিত ও প্রাণনাশের হুমকি দেয়, সেখানে পরবর্তীতে আমাদের সাথে এরকম হবে তার কোন গ্যারেন্টি নেই। তাই আমাদের অধ্যক্ষকে লাঞ্ছিত ও প্রাণনাশের হুমকি প্রদানকারী হারুন সুষ্টু বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমরা কোন ক্লাস করবো না। সেখানে কর্মরত শিক্ষক-শিক্ষিকাগণ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার ও সকলের নিরাপত্তা দাবী করেন।
এ ব্যাপারে গভর্নিং বডি’র সভাপতি হারুন অর রশিদ (পাভেল মিঞা) জানান, মাদ্রাসার ঘটনাটি আমি ফোনে শুনেছি। প্রতিষ্ঠানে গিয়ে বিস্তারিত জেনে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।