প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ের সাত নম্বর ভবনে গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে গভীর রাতে লাগা আগুন ৬ ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে এসেছে। স্বৈরাচার আওয়ামীলীগের সরকারের ‘লুটপাট-দুর্নীতির প্রমাণ নষ্ট করতে’ আগুন লাগানো হয়েছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্নও উঠেছে। ১৯টি ইউনিটের চেষ্টায় বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা ৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে বলে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে জানানো হয়। এর আগে সকাল পৌনে ৭টার দিকে সচিবালয়ের সামনে ব্রিফিংয়ে এসে আসেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ জাহেদ কামাল। তিনি বলেন, রাত ১টা ৫২ মিনিটে আমরা মেসেজ পাই সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে আগুন লেগেছে। ১টা ৫৪ মিনিটের মধ্যে আমাদের ইউনিট পৌঁছে যায়। এ পর্যন্ত এখানে ১৯টি ইউনিট নিয়োজিত করা হয়েছে। তবে ফায়ার সার্ভিসের বড় গাড়িগুলো ঢোকাতে না পারায় কাজে কস্ট পেতে হয়েছে। জাহেদ কামাল বলেন, সামনের গেইট ভেঙে দুটো গাড়ি ঢোকানো হয়। আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। ৬, ৭, ৮, ৯ এই চারটি তলায় আগুন ধরে। রাতে আগুন লাগার পর কালো ধোঁয়ায় ঢেকে যায় পুরো সচিবালয় এলাকা। সেনাবাহিনী, পুলিশ ও এপিবিএন সদস্যরাও পরে আগুন নেভানোর কাজে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যদের সঙ্গে যোগ দেন। অগ্নি নির্বাপণের কাজে পানির লাইন দিতে গিয়ে সচিবালয়ের সামনের রাস্তায় ট্রাক চাপায় আহন হন মো. সোহানুর জামান নয়ন নামের একজন ফায়ার ফাইটার। আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর তার মৃত্যু হয় বলে ফায়ার সার্ভিসের ডিজি জানান।
গভীর রাতে ‘ভয়াবহ’ এ আগুন লাগার পর সচিবালয় এলাকার নিরাপত্তা বাড়ানো হয়। রাতেই সেখানে ২ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয় বলে বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফুল ইসলাম জানান। আগুন লাগার পরপরই জিপিও থেকে শিক্ষা ভবন পর্যন্ত সচিবালয়ের সামনের রাস্তায় সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। শাহবাগ থানার ওসি মোহাম্মদ খালিদ মনসুর সাংবাদিকদের বলেন, আমরা সচিবালয়ের সামনে দুই পাশের রাস্তা বন্ধ করে দিই। সচিবালয়ের যে ভবনে আগুন লেগেছে, তার ১০টি তলায় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ অফিস রয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়, অর্থ বিভাগ ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ; সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ; শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়; স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ; পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ; ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ; যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দপ্তর রয়েছে সেখানে। সকালে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর ফায়ার সার্ভিসের ডিজি বলেন, ফায়ার ফাইটাররা দালানের ভেতরে কাজ করছে। প্রতিটি কক্ষ তল্লাশি করে আগুন নেভানো হচ্ছে। আগুন নেভানোর কাজে এ পর্যন্ত ২১১ জন জনবল নিয়োজিত হয়েছে। আগুন লাগার পর রাতে অনেকেই বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের আলোচনা শুরু করেন। রাষ্ট্রের এই অতি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় গভীর রাতে আগুন লাগার কারণ নিয়ে অনেকেই বিভিন্ন সন্দেহের কথা বলেন। আগের সরকারের ‘দুর্নীতির প্রমাণ নষ্ট করতে’ আগুন লাগানো হয়েছে কি না, সেই প্রশ্নও তোলেন কেউ কেউ। সকালের ব্রিফিংয়ে আগুন লাগার কারণ জানতে চাইলে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক (ডিজি) বলেন, আগুন লাগার কারণ সম্ভবত ইন্টেরিয়র ডেকোরেশন ছিল। এক জায়গা আগুন ধরলে বিদ্যুৎ লাইনের মাধ্যমে সব জায়গা ছড়িয়ে পড়ে। এটা হতে পারে। কিন্তু প্রাথমিক কারণ এখনও আমরা বের করতে পারি নাই। আগুন নেভানোর পর আমরা যখন সব জায়গা তল্লাশি করব, তখন আপনাদেরকে বলতে পারব। তিনি বলেন, আমরা যতটুকু জানতে পেরেছি, তিনটি জায়গায় একসাথে আগুন দেখা গেছে। যখন স্পার্কিং হয়, যদি বিদ্যুৎ লাইনের শর্টসার্কিট হয়, এটা হতে পারে। তবে আমরা এটা এখনও নিশ্চিত বলব না। যতক্ষণ পর্যন্ত না আমরা তদন্ত শেষ করছি। কিন্তু এটা হতে পারে। এটা হয়েছে আমরা বলব না। যদি শর্ট সার্কিটের বিষয় থেকে থাকে, যদি একই লাইন হয়ে থাকে, তাহলে এটা হতে পারে।”