দক্ষিণ কোরিয়ার মুয়ান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাত্রীবাহী বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় ১৭৯ জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় দুইজনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। রবিবার দেশটির ফায়ার সার্ভিসের বরাত দিয়ে এ খবর জানায় বার্তাসংস্থা ইয়োনহাপ। জানা গেছে, জিজু এয়ার প্লেনের ওই ফ্লাইটে ১৭৫ যাত্রী এবং ছয়জন ক্রু সদস্য ছিলেন। প্লেনটি থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংকক থেকে ফিরছিল। এটি রানওয়েতে অবতরণের সময় বিধ্বস্ত হয়েছে। দুর্ঘটনার পর দক্ষিণ কোরিয়ার ফায়ার সার্ভিস এক বিবৃতিতে জানায়, ফায়ার সার্ভিসের ৩২টি গাড়ি ঘটনাস্থলে কাজ করছে। ব্যাংকক থেকে ১৮১ জন আরোহী নিয়ে মুয়ান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের সময় দুর্ঘটনায় পড়ে জেজু এয়ারের ওই ফ্লাইট রানওয়ে থেকে ছিটকে পড়ে এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, জেজু এয়ারের ওই ফ্লাইটে ১৭৫ জন যাত্রী এবং ৬ জন ক্রু ছিলেন। থাইল্যান্ডের ব্যাংকক থেকে এসে রোববার সকাল ৯টার দিকে (স্থানীয় সময়) মুয়ান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের সময় উড়োজাহাজটি দুর্ঘটনায় পড়ে। নেমে আসার পর বোয়িং ৭৩৭-৮০০ উড়োহাজটি রানওয়ে থেকে বেরিয়ে গিয়ে বিমানবন্দরের দেয়ালে ধাক্কা খায় এবং অগ্নিগোলকে পরিণত হয়। ফ্লাইট ৭সি২২১৬ এর আরোহীদের মধ্যে ১৭৩ জনই ছিলেন দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিক, বাকি দুজন থাই। ফায়ার সার্ভিসের একজন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, উড়োজাহাজের আরোহীদের মধ্যে দুজন ক্রুকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে।
উদ্ধার অভিযান এখনো চলছে। মুয়ান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর রাজধানী সিউল থেকে ২৮৮ কিলোমিটার দূরে। দুর্ঘটনার পর সেখানে সব ধরনের ফ্লাইট ওঠানামা বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। বিবিসি লিখেছে, এই দুর্ঘটনার কারণ এখনো স্পষ্ট নয়। তবে স্থানীয় গণমাধ্যম বলছে, বিমানবন্দরে অবতরণের সময় পাখির সঙ্গে সংঘর্ষের ফলে ল্যান্ডিং গিয়ারে ত্রুটির কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, জোড়া ইঞ্জিনের উড়োজাহাজটি চাকা ছাড়াই রানওয়ে দিয়ে অনেক দূর পর্যন্ত ছেঁচড়ে যায়, তারপর রানওয়ে থেকে বেরিয়ে গিয়ে বিমানবন্দরের দেয়ালে ধাক্কা খায়। তাৎক্ষনিক উড়োজাহাজটিতে আগুন ধরে যায় এবং এর ধ্বংসাবশেষ ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন দিকে। বোয়িং কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের এভিয়েশন খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা তাৎক্ষণিকভাবে এ দুর্ঘটনা নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। জেজু এয়ারের একজন মুখপাত্র বলেছেন, তারা দুর্ঘটনার কারণ তদন্ত করে দেখছেন এবং ক্ষতিগ্রস্তদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন। বিবিসি লিখেছে, ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত জেজু এয়ার দক্ষিণ কোরিয়ার অন্যতম শীর্ষ বাজেট এয়ারলাইন। তাদের কোনো উড়োজাহাজ এই প্রথম প্রাণঘাতী দুর্ঘটনায় পড়ল। এমন এক সময়ে এই দুর্ঘটনা ঘটল, যখন দক্ষিণ কোরিয়া ব্যাপক রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। নতুন ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট চোই সুং-মককে দায়িত্ব নেওয়ার দুই দিনের মাথায় এই সংকট মোকাবিলা করতে হচ্ছে। তার কার্যালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেছেন এবং জরুরি ত্রাণ ও উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছেন।