সুপ্রিমকোর্টের আপীল বিভাগের বিচারপতি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য, সাবেক ছাত্রনেতা ও রাজশাহী প্রেসক্লাবের কার্যনির্বাহী সদস্য বিচারপতি বজলুর রহমান ছানার ৮ম মৃত্যুবার্ষিকী যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করছে বিচারপতি বজলুর রহমান ছানা স্মৃতি পরিষদ ও বিভাগীয় প্রেসক্লাব, রাজশাহী। কর্মসূচির অংশ হিসেবে বুধবার বিকেলে নগরীর শিরোইল স্মৃতি পরিষদ মিলনায়তনে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। সভায় প্রধান অতিথি বিচারপতি বজলুর রহমান ছানা স্মৃতি পরিষদ উপদেষ্টা ও বিভাগীয় প্রেসক্লাব, রাজশাহীর সভাপতি সাইদুর রহমান বলেন, দূর্নীতি ও ঘৃণার রাজনীতির রাহুগ্রাস থেকে দেশ ও দেশবাসীকে বাঁচাতে হবে। নাহলে সকল আত্মত্যাগ ও অর্জন ব্যর্থ হয়ে যাবে। লুটেরাচক্র দেশকে জিম্মি করে রেখেছে। আর রাজনৈতিক অঙ্গনে ঘৃণা, একে অপরের প্রতি নূন্যতম শ্রদ্ধাবোধ না থাকায় এই শক্তিশালী লুটেরাচক্রকে আঘাত করা যাচ্ছে না। বরং মেনে নেয়ার সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে। এদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে হবে। দেশের আবর্জনাতূল্য লুটেরা দুর্নীতিব্জাদের উচ্ছেদ করতে তরুণ প্রজন্মের সামনে বিচারপতি বজলুর রহমান ছানার আদর্শকে ধারণ করে লুটেরাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে। বিচারপতি বজলুর রহমান ছানা স্মৃতি পরিষদের আহ্বায়ক এ্যাডভোকেট মো. আসলাম-উদ-দৌলার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন-বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান আলী বরজাহান, বিভাগীয় প্রেসক্লাব, রাজশাহীর সাধারণ সম্পাদক এসএম আব্দুল মুগনী নিরো, জননেতা আতাউর রহমান স্মৃতি পরিষদ সহ-সভাপতি সালাউদ্দিন মিন্টু, বাংলাদেশের সাবেক প্রধান বিচারপতি ভাষাসৈনিক হাবিবুর রহমান শেলীর ছোটভাই মুক্তিযুদ্ধের তথ্য সংগ্রাহক ওয়ালিউর রহমান বাবু, প্রকাশকালের সম্পাদক রাজীব আলী প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, ৯৮’ সালের দিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরে বন্যার পানি ঢুকে পড়ে। জলাবদ্ধতার কারণে মানুষ লাশ দাফনের জায়গা পাচ্ছিলো না। সেসময় ডেপুটি এনর্টি জেনারেল পদে থাকা বজলুর রহমান ছানা তৎকালীন পানি সম্পদ মন্ত্রী কাছ থেকে এক প্রকার জোরজবরদস্তি করে ১২০ কোটি টাকা ব্যয়ে শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করে দেন। যার সুফল চাঁপাইনবাবগঞ্জের মানুষ পাচ্ছে। দায়িত্বের প্রশ্নে যেমন শতভাগ ছিলেন, নীতির প্রশ্নেও ছিলেন আপোষহীন। তাঁর বর্ণাঢ্য কর্মজীবন এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জকে রক্ষার করার জন্য তাঁর ভূমিকার কথা কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করা হয়।
বজলুর রহমান ছানা’১৯৫৫ সালের ১২ এপ্রিল চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের গোয়ালপাড়া মহল্লার এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৭০ সালে নবাবগঞ্জ হরিমোহন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এস.এস.সি এবং ১৯৭২ সালে নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজ থেকে এইচ.এস.সি পাশ করেন। মেধাবী ছাত্র বজলুর রহমান ছানা ১৯৭৬ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদ থেকে জুরিসপ্রুডেন্স বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) এবং ১৯৭৭ সালে একই বিষয়ে কৃতিত্বের সাথে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেন। ১৯৮২ সালে সমাজ বিজ্ঞানে বিভাগ থেকেও তিনি স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করেন। তৎকালীন বৃহত্তর রাজশাহী তথা উত্তরবঙ্গের অন্যতম সাবেক তুখোড় ছাত্রনেতা ‘বজলুর রহমান ছানা’ ১৯৭০ সালে ছাত্ররাজনীতিতে প্রবেশ করেন। ৮০’ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাকসু নির্বাচনে ভি.পি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং সিনেট সদস্য নির্বাচিত হন। এছাড়া রাজশাহী প্রেসক্লাবের কার্যনির্বাহী সদস্য ছিলেন। পঁচাত্তর পরবর্তী সামরিক শাসনামলে ১৯৭৮ ও ১৯৭৯-৮০ সালে বিবর্তনমূলক আটকাদেশে কারাবরণ করেন। ১৯৮৩ সালের বিশেষ সামরিক শাসনামলে সামরিক আদালতে তিনি যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রাপ্ত হন যদিও পরবর্তীতে মামলাটি প্রত্যাহার করা হয়। তিনি ১৯৮৫ সাল থেকে প্রায় ১৫ বছর ঢাকার ধানমন্ডি ল’কলেজে আইনের শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৪ সালে ঢাকার জজ কোর্ট এবং ১৯৮৭ সালে তিনি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোটে আইন পেশায় যোগদান করেন। ১৯৯৬ সালে সহকারী এটর্নি জেনারেল এবং ১৯৯৯ সালে ডেপুটি এটর্নি জেনারেল নিযুক্ত হন। বিচারপতি হিসেবে হাইকোর্টে তিনি প্রচুর সাংবিধানিক ও গুরুত্বপূর্ণ মামলা পরিচালনা করেছেন। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে তিনি মৃত্যু অবধি দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারী তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মরহুমের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে পরিবারের পক্ষ থেকে দোয়া চাওয়া হয়েছে।