বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্যে বলেছেন, অতি জরুরি সংস্কার কাজ শেষ করে সুষ্ঠু নির্বাচন দিয়ে আপনাদের জায়গায় ফিরে যান। এ নির্বাচনে জনগণ যার ওপরে আস্থা রাখবে, যাদের ভোট দিল দেশের মানুষকে সম্মান করবে, দেশের মানুষকে ভালবাসবে তাকে ভোট দেবে। আমরা বিদেশি বন্ধু চাই, প্রভু নয়। আমরা পিন্ডির হাত থেকে মুক্ত হয়েছি, অন্য কারও হাতে যাওয়ার জন্য নয়। কারও লাল চোখ আমরা দেখতে চাই না। শুক্রবার (০৩ ডিসেম্বর) সকালে নাটোর শহরে নবাব সিরাজ উদ্-দৌলা সরকারি কলেজ মাঠে কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ডা. শফিবুর রহমান বলেন, জামায়াত আমির বলেন, জামায়াতে ইসলাম বৈষম্যহীন মানবিক সমাজ গড়তে চায়। আমরা বিভেদ নয়, ঐক্য চাই। এ দেশের হিন্দু-মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্ট্রান সবাই গর্বিত নাগরিক। দফায় দফায় এদেশের ক্ষমতায় বসে জনগণের আমানত তারা খেয়ানত করেছেন। ক্ষমতায় বসে তারা ক্ষমতার মালিক হয়েছেন। কমবেশি এই জাতিকে সবাই কষ্ট দিয়েছেন। সবচেয়ে বেশি সাড়ে ১৫ বছর কষ্ট দিয়েছে ফ্যাসিবাদ সরকার। আওয়ামীলীগের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, এই ফ্যাসিবাদী সরকার দেশের ১৮ কোটি মানুষের ওপর জুলুম করেছে। তারা দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছর বিভিন্ন দলের মানুষ ও দেশের মানুষকে খুন, গুম হত্যা করেছে। আমাদের দেশের কলিজার টুকরা সন্তানদের ওপর হাতুড়ি বাহিনী লেলিয়ে দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। ২০০৬ সালে ক্ষমতায় আসার আগে লগি-বৈঠার তাণ্ডব চালিয়ে দেশের মানুষকে হত্যা করে তাদের লাশের ওপর দাঁড়িয়ে তারা নেচেছিল। তাদের রুচি কত জঘণ্য, তা থেকে অনুমান করা যায়। এরপর ক্ষমতায় এসে একের পর এক দেশের নিরীহ মানুষদের হত্যা করেছে। শেষ দিন ৫ আগস্ট তারা হাজার হাজার মানুষকে গণহত্যা করে দেশ ছেড়ে পালাল। ৩৪ হাজার মানুষকে তারা পঙ্গু করেছে, গুলির আঘাতে তিনশোর মতো মানুষ বিছানায় রয়েছে। জীবনে তারা উঠে দাঁড়াতে পারবে না, চলতে পারবে না। জনগণের ট্যাক্স টাকায় কেনা অস্ত্র দিয়ে তাদের হত্যা করা হয়েছে। শহীদ আবু সাঈদ ও মুগ্ধকে নিয়ে স্মৃতিচারণে কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, আমার দেশের মানুষ আমায় খুন করবে না এ গভীর আত্মপ্রত্যয় নিয়ে আবু সাঈদ বুক পেতে দিয়েছিলেন। সঙ্গে সঙ্গে তার বুকে তিনটা গুলি করে তাকে ফেলে দিলো রাজপথে। খুনের পর তার লাশ নিয়ে অনেক নাটক করা হয়েছিল। আন্দোলনের মাঝে হাতে পানি নিয়ে বলতেন, পানি লাগবে ভাই পানি। তাকেও গুলি করে শেষ করে দিলো। তাদের একটাই দোষ ছিলো-তারা সব বৈষম্যের বিরুদ্ধে। তারা চাঁদাবাজের বিরুদ্ধে ছিল, দখলদার-দুর্নীতি, ঘুষের বিরুদ্ধে ছিল, তারা সুশাসনের পক্ষে ছিল। এ স্লোগান নিয়ে তারা রাস্তায় নেমেছিল। নির্বাচন নিয়ে জামায়াতের আমির বলেন, নির্বাচন তার জন্য যারা মানুষকে সম্মান করবে। নির্বাচন তার জন্য যারা দেশের মানুষকে ভালোবাসে। যাদের কাছে দেশের প্রতি ইঞ্চি আমানত। এ বিশ্বাস-আস্থা যাদের নেই, নির্বাচন তাদের কপালে নয়। ফ্যাসিবাদ ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় অবৈভাবে তিন তিনটি নির্বাচনে তাণ্ডব চালিয়েছে। তা দেশের মানুষ দেখেছে। যারা নির্বাচন বিশ্বাস করে না তাদের আবার কীসের নির্বাচন। আ’লীগ আমলের হত্যাকাণ্ডের বিচার দেখতে চায় মানুষ। জামায়াত আমির আরও বলেন, আমরা চাই আগামী দিনে অতি জরুরি সংস্কার কাজ শেষ করে বর্তমান সরকার সুষ্ঠু নির্বাচন দিয়ে যার যার জায়গায় ফিরে যাক। এ নির্বাচনে জনগণ যার ওপরে আস্থা রাখবে, তাকে ভোট দেবে, যাদের ভোট দিলে দেশের মানুষকে সম্মান করবে, দেশের মানুষকে ভালবাসবে। দেশের মানুষের আমানত শ্বশুর বাড়ির নিয়ামত মনে করবে না। চুরি করে দেশের সম্পদ বিদেশে পাচার করবেন না। যেমনটি সাড়ে ১৫ বছরে হয়েছে। কর্মী সম্মেলনে জামায়াতে ইসলামীর নাটোর জেলার আমির অধ্যাপক ডা. মীর নুরুল ইসলাম এর সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন-বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য অধ্যক্ষ মো. শাহাবুদ্দিন, নাটোর জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির অধ্যাপক মো. ইউনুস আলী, জেলা জামায়াতের প্রচার সম্পাদক আতিকুল রহমান রাসেল প্রমুখ। এসময় বিভাগ, জেলা, উপজেলা, পৌর ও ইউনিয়ন জামায়াতের নেতৃবৃন্দ, ইসলামী ছাত্রশিবিরের বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।