বহুল আলোচিত নাটোরের কেন্দ্রীয় মহাশ্মশানে মানসিক ভারসাম্যহীন ভবঘুরে তরুণ কুমার দাস হত্যাকান্ডের প্রকৃত রহস্য উৎঘাটন হয়েছে। পুলিশ হত্যাকান্ড ও চুরির ঘটনায় মূল অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে। শুক্রবার বেলা ১১টায় গ্রেফতার অভিযুক্ত ব্যক্তিকে মহাশ্মশানে হাজির করে প্রেস ব্রিফিং করেন নাটোরের পুলিশ সুপার মোঃ মারুফাত হুসাইন। গ্রেফতারকৃত মোঃ সবুজ হোসেন (২৪) নাটোর সদরের বড়হরিশপুর এলাকার মোঃ রমজান আলীর ছেলে। পুলিশ জানায়, গত ২১ ডিসেম্বর সকালে নাটোরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহাশ্মশানের বারান্দা থেকে তরুণ দাস (৫৮) নামে মানসিক ভারসাম্যহীন এক ভবঘুরে ব্যক্তির হাত-পা বাঁধা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত তরুণ দাস শহরের আলাইপুর ধোপাপাড়া এলাকার কালীপদ দাসের ছেলে। তিনি ছিলেন মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন এবং প্রায় প্রতি রাতে মহাশ্মশানের রান্নাঘরের বারান্দায় ঘুমিয়ে থাকতেন। ঘটনার রাতে ভান্ডার কক্ষ থেকে কাঁসা ও পিতলের মালামাল এবং অর্থ চুরি যায়।
এ ব্যাপারে নিহতের ছেলে তপু কুমার দাস নাটোর থানায় মামলা দায়ের করেন। ঘটনার পর নাটোর পৌরসভার প্রকৌশলী মোস্তফা কামাল বলেন, মানসিক ভারসাম্যহীন তরুণ দাসকে নাটোর শহরের সকল মানুষই চিনতো। রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে আবোল তাবোল বক্তৃতা দিতে দেখেছি তাকে। মাঝে মাঝেই কুকুরের সাথে খেলা করা, কুকুরের সাথে খাবার ভাগাভাগি করে খাওয়ার ঘটনাও আমরা সবাই দেখেছি। হত্যাকান্ডের পরে কিছু গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তরুণকে শ্মশানের পাহারাদার, আবার কেউ কেউ সেবায়েত ও পুরোহিত হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ তরুণ দাসকে হত্যার ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে দেয়া বিবৃতিতে তাকে মন্দিরের দেখভাল ও নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত বলে উল্লেখ করলেও এই সংগঠনের নাটোর জেলা শাখার যুগ্ম সম্পাদক অ্যাডভোকেট খগেন্দ্র নাথ রায় তখন বলেছেন, বিবৃতিতে তরুণের পরিচয়কে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। তিনি এমন কোন পদে ছিলেন না। সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথকে বিবৃতি সংশোধন করার জন্যও অনুরোধ জানিয়েছিলেন।
পুলিশ সুপার জানান, গ্রেফতারকৃত অভিযুক্ত সবুজ মাদকসেবী। তিনি তার ৫বন্ধুকে সাথে নিয়ে ঘটনার রাতে মহাশ্মশানের পাশে লেবু বাগান থেকে লেবু চুরি করতে আসেন। ঐদিন বিকেলে মহাশ্মশানে অনুষ্ঠিত একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সংগৃহীত টাকা মহাশ্মশানের ভান্ডারে থাকতে পারে ধারনা করে তারা ভান্ডার কক্ষে হানা দেয়। এ সময়ে সেখানে হত্যার শিকার তরুণ কুমার এসে ঘটনা দেখে ফেলেছেন সন্দেহে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা তরুণের হাত-পা বেঁধে মুখে কাপড় গুজে দেয়। রাতের কোন এক সময়ে তরুণ শ্বাসরোধ হয়ে সেখানে মারা যান। ঘটনার পর দেশে বিদেশে মন্দিরে পুরোহিত, সেবায়েত কোথাও আবার মন্দিরের নিরাপত্তা কর্মী খুন হয়েছে বলে প্রচারণায় তোলপাড় সৃষ্টি হওয়ায় সবুজ বিদেশ পালিয়ে যাওয়ার জন্য পাসপোর্ট তৈরীর চেষ্টা শুরু করে। গতকাল চট্রগ্রাম থেকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
ঘটনার সময় সবুজের সাথে থাকা অন্যদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে বলে জানান পুলিশ সুপার। প্রেস ব্রিফিংএ অন্যান্যের মধ্যে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মোঃ শরিফুল ইসলাম, নাটোর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহমুদা শারমিন নেলী এবং নাটোর থানার ওসি মাহবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।