গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগতীরে আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে বিশ্ব ইজতেমার ‘প্রথম পর্বের প্রথম ধাপ’ শেষ হয়েছে। রোববার সকাল ৯টা ১০ মিনিটে শুরু হয়ে এ মোনাজাত শেষ হয় ৯টা ৩৭ মিনিটে। মোনাজাত পরিচালনা করেছেন মাওলানা জুবায়ের আহমেদ। মোনাজাতে মহান আল্লাহর দরবারে অশ্রুভেজা চোখে ক্ষমা প্রার্থনা ও মুসলিম উম্মাহর কল্যাণ কামনা করা হয়। এদিন যত দূর চোখ যায় ততদূর পর্যন্তই শুধু মুসল্লিদের ঢল দেখা গেছে। লাখো মুসল্লির কাতারে শরিক হয়ে পরম করুণাময়ের দরবারে হাত পেতেছেন খোদাপ্রেমী এসব মানুষ। আখেরি মোনাজাতে শরিক হন নারীরাও। বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের প্রথম ধাপ, সেই আখেরি মোনাজাতে এবার বিপুল সংখ্যক নারীকে অংশ নিতে দেখা গেছে। ইজতেমা ময়দানে উপস্থিত হওয়ার সুযোগ না থাকায় কয়েক হাজার নারী অবস্থান নেন ময়দানের আশেপাশে।
তাদের অনেকেই শনিবার রাত থেকে বিভিন্ন কারখানা, বাসা-বাড়ি ও দালানের ছাদে অবস্থান নেন। রোববার ভোর ভোর থেকে নারীরা ময়দানের পাশে আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতাল মাঠ, ইজতেমা মাঠের পশ্চিম পাশে কামারপাড়ায় এবং আশপাশের খোলা ময়দানে অবস্থান নেন। নরসিংদীর আমেনা আক্তার বলেন, “নরসিংদী থেকে আগের রাতে নাতিকে সঙ্গে নিয়ে এসে টঙ্গী হাসপাতাল মাঠে অবস্থান নিই। বিশ্ব ইজতেমায় নারীদের অংশগ্রহণের কোনো অনুমতি না থাকলেও আমরা পর্দার সঙ্গে লাখ লাখ মুসল্লিদের সঙ্গে আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে টঙ্গী হাসপাতাল চত্বরে অবস্থান নিই। একই কথা জানালেন গাজীপুরের কাপাসিয়া এলাকা থেকে আসা সালমা বেগম। মোনাজাতে শরিক হতে রোববার ভোরে ইজতেমা ময়দানের পূর্বপাশে এক ভবনের ছাদে বসে অবস্থান নেন। আল্লার কাছে নিজের, পরিবার ও দেশে কল্যাণ কামনা করতে মোনাজাতে অংশ নিই। নারায়াণগঞ্জ থেকে স্বামী, ছেলে ও পুত্রবধূকে নিয়ে আসেন শাহানা আক্তার। তিনি জানান,
শনিবার রাত ১১টার দিকে তারা ইজতেমায় এলাকায় এসেছেন। ফ্লাইওভারের নিচে মহাসড়কের পাশে তারা অবস্থান নেন। মানিকগঞ্জ থেকে আসা কমলা বানু বলেন, “লাখো মুসল্লির সঙ্গে মোনাজাতে শরিক হয়ে আমার মোনাজাতটি কবুল হয়ে যেতে পারে। তাই আল্লাহর কাছে চাইতে মানিকগঞ্জ থেকে এসেছি। পাপের জন্য ক্ষমা চাইতে এসেছি, লাখ লাখ মানুষের মাঝে আল্লাহ হয়তো কারো উছিলায় আমার কথা শুনবেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) বাদ মাগরিব টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে ভারতের মাওলানা ইব্রাহিম দেওলার আম বয়ানের মধ্য দিয়ে বিশ্ব ইজতেমার ৫৮তম জমায়েত শুরু হয়। শুরায়ে নিজামের প্রথম পর্বের প্রথম ধাপের তিন দিনের এ ইজতেমায় লাখো মুসল্লি অংশ নিয়েছেন। ইজতেমার আয়োজকরা জানান, এবারের বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব অনুষ্ঠিত হবে দুই ধাপে। এর মধ্যে ৩১ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রথম ধাপের ইজতেমা। এ ধাপে অংশগ্রহণ করেছে ৪১ জেলা ও ঢাকার একাংশের মুসল্লিরা। এরপর আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে দ্বিতীয় ধাপের ইজতেমা। এ ধাপে অংশ নেবেন ২২ জেলা ও ঢাকার বাকি অংশের মুসল্লিরা।