চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকায় প্রবাসির জমি জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে ভূমিদস্যু মোজাম্মেল হক ও তাঁর সহযোগি আকবর আলীর বিরুদ্ধে। এনিয়ে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ, আদালতে পাল্টা-পাল্টি মামলা, জমি দখল নিয়ে চলছে উত্তেজনা। তবে এলাকাবাসীর অভিযোগ, ভূমিদস্যু মোজাম্মেলের জালিয়াতির কারনে এলাকায় আইশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে। যে কোন সময় ঘটতে পারে অপীতিকর ঘটনা।
এই জমি জালিয়াতের হয়রানী ও নির্যাতনে আতংকিত এলাকাবাসী। জমির প্রকৃত মালিক ও এলাকাবাসী সুত্রে জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার রাজারামপুর মৌজার আর.এস ১৯২৯নং খতিয়ানে সিরাজ উদ্দীন মন্ডল, রৌশনারা খাতুন ও ফাতেমা খাতুন আর.এস দাগ নং-৯৫৪ এ ৪২.৭৫ একর জমির মধ্যে মোঃ জালাল উদ্দীন ও বেলাল উদ্দীন কে ০.২.৫০ (আড়াই শতক) জমি দান করেন। দানকৃত জমি দীর্ঘদিন থেকে ভোগদখল করে আসছিলো জালাল উদ্দীন ও বেলাল উদ্দীন। এদিকে, ভূমিদস্যু মোজাম্মেল হক মিথ্যা তথ্য দিয়ে ওয়ারেশন জালিয়াতি করে একটি দলিল করে। দলিলে পার্শ্ববর্তী গ্রামের আকবর আলী নামের একজনকে ফাতেমার পৌত্র (পোতা) বানিয়ে জমিটি রেজিষ্ট্রি করে। কিন্তু, ফাতেমা খাতুন ছিলো স্বামী পরিত্যক্তা এবং নিঃসন্তান।
আরও জানা গেছে, ১৯৯২ সালে রের্কডীও প্রজা সেরাজ উদ্দিন, ফাতেমা এবং মৃতঃ রৌশনারার ছেলে আলতাব একটি বন্টননামা দলিল করে, আর সে দলিলে সনাক্তকারী ছিলো আকতার আহমেদুর ডলার মহরীল। কিন্তু ২০২২ সালে যে মোজাম্মেল ও আকবর আলীর যোগসাজসে যে দলিল রেজিষ্ট্রি হয়, সেই দলিলের দলিল লেখক (মহরী) ও আক্তার আহমেদুর রহমান (ডলার)। জালিয়াতি করে জমি রেজিষ্ট্রি করে নেয়ার পর জমিটি দখলে নেয়ার চেষ্টা করে মোজাম্মেল ও তার দোষররা। এলাকাবাসী আরো জানায়, প্রায় ১০-১১ বছর আগে আকবর আলীর পক্ষে আমমোক্তার প্রতিনিধি হিসেবে আকবরের জমি দাবী করে মোজাম্মেল হক আদালতে একটি মামলা দায়ের করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার হরিপুর মহল্লার রুস্তুমের ছেলে মান্নানের পরিবারের নামে। প্রায় ২ বছর আগে সে মামলায় আকবর ও মোজাম্মেল পরাজিত হয়।
অন্যদিকে, ১৯৮৭ সালে রৌশনারা খাতুন মৃত্যুবরণ করার পরে ১৯৯২ সালে একটি বন্টননামা দলিল হয়। মোট জমির মধ্যে মোঃ সিরাজ উদ্দীন ২০.২৫ শতাংশ, ফাতেমা ১০শতাংশ এবং রৌশনারার ছেলে ১০শতাংশ। ফাতেমা খাতুন নিঃসন্তান থাকা অবস্থায় ১৯৯৮ইং সালে মৃত্যু বরণ করেন। তাঁর মৃত্যুর পর প্রকৃত ওয়ারেশ একমাত্র সহোদর ভাই মোঃ সিরাজ উদ্দীন। প্রেক্ষিতে, সিরাজ উদ্দীনের মৃত্যুর পরে ওই জমির ওয়ারেশ ৩ ছেলে ও ৫ মেয়ে। ওয়ারিশগণের মধ্যে ৩ ছেলে ও ৪ মেয়ে ২০১৮ সালে ৮৯১০নং দলিলে নিজেদের মধ্যে বন্টননামা দলিল সম্পাদন করে। এবং ওই জমি ভোগ দখল করতে থাকেন।
এদিকে, ভূমিদস্যু মোজাম্মেল যোগসাজস করে ০৯/০৫/১৯৭৩ইং তারিখে ফাতেমা খাতুন মৃত্যুবরণ করেছে মর্মে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসাভায় প্রতারনামূলক তথ্য দিয়ে পৌরসভার হরিপুর এলাকার ভগুরুদ্দীনের ছেলে মোঃ আকবর আলীকে নাতি বানায় এবং গত ০৪/০৭/২০২২ইং তারিখে পৌরসভা থেকে একটি ওয়ারেশন সনদ পত্র হাসিল করে। ভূয়া তথ্য দিয়ে নেয়া সেই ওয়ারেশন সনদপত্র দেখিয়ে নবাবগঞ্জ সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে ২৫/০৯/২০২২ইং তারিখে ভূমিদস্যু মোজাম্মেল হক তাঁর নিজ নাম বরাবর দলিল লেখক আক্তার আহমেদুর রহমানের মাধ্যমে ১০৩৪৭ নং একটি দানপত্র দলিল সম্পাদন করে। যার, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা ভূমি অফিস থেকে নামজারি(খারিজ) করেন মোজ্জাম্মেল হক। খারিজ কেস নং-৭১৩১/২০২২-২৩।
ওই জমি খারিজের পর মোজাম্মেল তার ভাড়াটিয়া গুন্ডাবাহিনী নিয়ে জমি দখল করতে গেলে বিষয়টি জানাজানি হয়। খবর পেয়ে ওই জমির মূল ওয়ারেশগণ বাধা দেয়। পরে জমির প্রকৃত ওয়ারেশ হিসেবে মোঃ আব্দুল মান্নান রুবেল চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভায় আকবর আলী কে বিবাদী করে একটি দরখাস্ত করে। প্রেক্ষিতে পৌর কর্তৃপক্ষ আব্দুল মান্নানের বিষয়টি আমলে নিয়ে পৌরসভার পারিবারিক আইনে ৩৫/২০২৩নং একটি মামলা রুজু করেন। ১৪/০৬/২০২৩ইং তারিখে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার পারিবারিক সালিশী আদালত উভয় পক্ষের উপস্থিতিতে কাগজপত্র পর্যালোচনা ভুল তথ্য দিয়ে ওয়ারেশ নেয়ার বিষয়টি প্রমান হয়।
সালিসের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ০৪/০৭/২০২২ইং তারিখে ইস্যুকৃত পৌরসভা কর্তৃক (২০৬২৬.২০৬২৭.২০৬২৮এবং২০৬২৯) নং এ দেয়া উত্তরাধিকারী সনদপত্রগুলি বাতিল করে এবং উভয়পক্ষ কে বিষয়টি নিয়ে উচ্চ আদালতের স্মরণাপন্ন হয়ে মৃত ফাতেমা খাতুনের ওয়ারেশ সঠিকভাবে নির্ধারণ করার জন্য আদেশে বলা হয়। আদালতের নির্দেশনা পাওয়ার পর ফাতেমা খাতুনের সঠিক ওয়ারেশন সনদপত্র দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহন করে পৌরসভা পারিবারিক সালিশী আদালত। কিন্তু চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার সালিশী আদালতের আদেশ বহাল থাকা সত্ত্বেও ভূমিদস্যু ও জালিয়াত চক্রটি আবারো নিঃসন্তান ফাতেমা খাতুনের ১ ছেলে ওগুরুদ্দীন ও মেয়ে আয়াতন বেওয়া কে রেখে ১৯৭৩ সালে মারা গেছে মর্মে আবেদন করে গত ৩০/১০/২০২৪ইং তারিখে পুণঃরায় (৩৫৬৪০,৩৫৬৩৯,৩৫৬৩৮,৩৫৬৩৭) ক্রমিক নম্বরে ওয়ারেশন উত্তলোন করেছে বলে জানা গেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভা সূত্রে। জালিয়াতি করে জমি রেজিষ্ট্রি এবং খারিজের বিষয়টি জানার পর মোঃ আব্দল মান্নান সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এসিল্যান্ড বরাবর খারিজ বাতিলের জন্য একটি আবেদন করেন। প্রেক্ষিতে নামজারি/খারিজ বাতিলের বিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর ভূমি কর্মকর্তাকে তদন্তের ভার দেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাঈমা খান। তদন্ত প্রতিবেদন প্রাপ্তির পরে উপজেলা ভূমি অফিস ৩২/২০২৩-২৪ একটি রিভিউ মামলা রুজু করেন। ভূমিদস্যু মোজাম্মেলের সাথে তৎকালীন এসিল্যান্ড নাঈমা খান যোগসাজস করে মামলাটি শুনানী কালক্ষেপন করতে থাকে। অন্যদিকে, এসিল্যান্ড নাঈমা খান এর পরামর্শে মোজাম্মেল দেওয়ানী আদালতে মামলা দায়ের করে। এদিকে, মোজাম্মেল খারিজ বাতিলের রিভিউ মামলাটি ডিসমিস করার জন্য দাতা মোঃ আকবর আলীকে দিয়ে তৎকালিন সরকারী বিজ্ঞ কৌশুলী (জিপি) এ্যাড. মোঃ রজবুল হক এর মাধ্যমে বিজ্ঞ যুগ্ন জেলা জজ-১ আদালত চাঁপাইনবাবগঞ্জ এ ১১/২০২৩অঃপ্রঃ মামলা দায়ের করেন। মামলা হওয়ার প্রেক্ষিতে সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ আকবর আলীর দায়ের করা দেওয়ানী মামলায় মোজাম্মেলের নামীয় দানপত্র ১০৩৪৭/২০২২ নং দলিলের বিবরণ এবং নামজারি/খারিজ বাতিলের রিভিউ ৩২/২০২৩-২৪ নং মামলার কোন সূত্র না থাকা শর্ত্বেও দেওয়ানী মামলার বরাদ দিয়ে ভূমিদস্যু মোজাম্মেলের পক্ষে ৩০/১১/২০২৩ইং তারিখে খারিজ বহালের আদেশ দেন নাঈমা খান।
সদর সাব-রেজিস্ট্রীর অফিসে বির্তকিত উত্তরাধিকারী ওয়ারেশন সনদপত্রের বরাদ দিয়ে যোগসাজসি ১০৩৪৭/২২ নং দানপত্র দলিল সম্পাদনের অভিযোগ করে প্রকৃত ওয়ারেশ মোসাঃ মুনিরা বেগম ৩১/০৭/২০২৩ইং তরিখে। কিন্তু অভিযোগ করলেও কোন পদক্ষেপ গ্রহন করেননি সদর সাব-রেজিস্ট্রার।
প্রতিবেদকের অনুসন্ধান অনুযায়ী জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার দূর্গাপুর গ্রামে পোক্তা ওয়াক্তিয়া মসজিদ পক্ষে মোতয়াল্লী বরাবর হোসেন ডাঙ্গা মৌজার ২৭৯নং খতিয়ানের সাবেক দাগ নং ৫৫৪ ও আর.এস ৬৫৯নং দাগের মোট জমির পরিমান ১ একর ২২শতাংশ মধ্যে ওয়াক্তিয়া মসজিদ বরাবর ০৮.২৫ শতাংশ জমি গত ০৪/১০/১৯৭৯ইং তারিখে নবাবগঞ্জ সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে ১৪৫৬৭ নং দলিলে দাতা ফাতেমা খাতুন নিজে যতদিন বেঁচে থাকবেন ততদিন সে নিজে ওয়াকফ কৃত সম্পত্তির মতোয়ালী থাকবেন এবং তাঁর মৃত্যুর পর ওয়াকফ কৃত সম্পত্তির মতোয়ালী নির্ধারন করবেন এলাকাবাসী ও মসজিদ কমিটি। উল্লেখ পূর্বক ওয়াকফ রেজিস্ট্রী করে দেন মৃতঃ ফকিরুল্লাহ মন্ডলের মেয়ে মোসাঃ ফাতেমা খাতুন। যা ওয়াক্তিয়া মসজিদ অদ্যবধি পর্যন্ত ভোগ দখলে আছে।
১৯/০২/১৯৯২ইং তারিখে ২৬৬১নং বন্টন নামা দলিলে জে.এল ১৪৫ রাজারামপুর মৌজার আর.এস ১৯২৯নং খতিয়ানের রেকর্ডীও প্রজাসহ মোহাঃ সেরাজ উদ্দীন, মোহাঃ আলতাফ হোসেন, মোসাঃ ফাতেমা খাতুন ও মোসাঃ গোলেনুর বেওয়া (গুল বিবি) বন্টননামা দলিল সম্পাদন করেন। সনাক্তকারী হিসেবে আক্তার আহমেদুর রহমান(ডলার) মহরী স্বাক্ষর করেন।
রেকর্ডীও প্রজা সেরাজ উদ্দীন (সিরাজ) এর মৃত্যুতে তাঁর ছেলে মোঃ মজিবুর রহমান, মোঃ তাজিবুর রহমান, মোঃ হাবিবুর রহমান, মেয়ে জোহরা খাতুন, জুবাইদা খাতুন, হোসনেয়ারা খাতুন, মোঃ আব্দুল বারী, আসিফ জামিল, উম্মে সালমা, আলতাব হোসেন
ওয়ারেশগণ হরিপুর মৌজার আর.এস -৯১৯ খতিয়ানের জমির সাথে ও রাজারামপুর মৌজার আর.এস ১৯২৯নং খতিয়ানের জমি একত্রে ২০১৮সালের জুলাই মাসের ২৯তারিখে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে ৮৯১০নং দলিলে বন্টননামা সম্পাদন করেন। উপর রাজারামপুর গোরস্থানের মৃত্যু রেজিস্ট্রার সূত্রে জানা গেছে, স্বামী পরিত্যক্তা ও নিঃসন্তান মোসাঃ ফাতেমা খাতুন, পিতা মৃতঃ ফকরুল্লাহ মন্ডল, মাতা মৃত নুরফত নেসা, গ্রাম দূর্গাপুর (০৫নং ওয়ার্ড) পৌর এলাকা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ। তিনি গত ১৫/১১/১৯৯৮ইং তারিখে মারা যায় এবং তাঁকে একই তারিখে উপর রাজারামপুর গোরস্থানে দাফন করা হয়। যাহা ৩৭/২৩ নম্বর ক্রমিক রেজিস্ট্রারে লিপিবদ্ধ রহিয়াছে। সংশ্লিস্ট ০৫নং ওয়ার্ড কাউন্সির স্বাক্ষরিত প্রত্যয়ন সূত্রেও জানা গেছে, মৃত-ফাতেমা খাতুন ছিলো স্বামী পরিত্যাক্তা ও নিঃসন্তান এবং মারা গেছে ১৯৯৮ সালে। ফাতেমা খাতুনের একমাত্র উত্তরাধিকারী ওয়ারেশ হচ্ছে তাঁর সহদর ভাই রেকর্ডীও প্রজা মোঃ সেরাজ উদ্দীন।
উপর রাজামপুর গোরস্থান পরিচালনা কমিটি, জনপ্রতিনিধি, এলাকাবাসী ও আত্মিয় স্বজনের মাধ্যমে জানা গেছে, মোসাঃ ফাতেমা খাতুন আসলে তিনি ছিলেন স্বামী পরিত্যাক্তা ও নিঃসন্তান এবং ১৯৯৮ সালে মারা যায় বলে জানার পরেও চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভা কর্তৃপক্ষের কাছে মিথ্যা তথ্য দিয়ে ১৯৭৩ইং সালে মোসাঃ ফাতেমা খাতুন মারা গেছেন মর্মে যে ওয়ারেশন সনদপত্র নিয়ে ভূমিদস্যু মোজাম্মেল এর নামে দানপত্র দলিল করে দিয়েছে মোঃ আকবর আলী। সে দলিল ও নামজারি/খারিজ কেন বাতিল হবে না? ফাতেমার যদি ছেলে/মেয়ে থাকতো তাহলে সদর উপজেলা পৌর এলাকার দূর্গাপুর গ্রামে পোক্তা ওয়াক্তিয়া মসজিদের নামে ৮৭সালে যে দলিল করে দিয়েছিলো, সে দলিলে ফাতেমা খাতুন যতদিন বেঁচে থাকবেন সে নিজে মতোয়ালীর দ্বায়িত্ব পালন করবেন এবং তাঁর মৃত্যুর পরে এলাকাবাসী ও মসজিদের মসুল্লিরা নির্ধারন করেবে মতোয়ালী। এটা নিয়েও জণমনে প্রশ্ন উঠেছে।
ওয়ারেশ ভুক্তভোগী মোসাঃ মুনিরা বেগম জানান, ১৯৯৮সালের বড় বন্যার পরে ফাতেমা খাতুন স্বামী পরিত্যাক্তা ও নিঃসন্তান থাকা অবস্থায় মারা যান। তার ওয়ারেশ হিসাবে একমাত্র ভাই সেরাজ উদ্দীন। মোজাম্মেল জাল কাগজ করে আকবর কে পোতা সাজিয়ে জমি লিখে নিয়ে আমাদের জমি দখল করতে আসে। তখন জানতে পেরে আমি নিজে সাব-রেজিস্ট্রী অফিসে অভিযোগ দিয়েছিলাম। সাব-রেজিস্ট্রার তদন্ত করে প্রমাণ পায় যে, আকবর ফাতেমার কেউ না। তার পরেও কোন ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো আমার ও আমার নাতির কাছে মোট অংকের টাকা দাবি করে। কিছু টাকা দিয়ে দলিলটা বাতিল করে দিবো বলে আমাকে পাঠিয়ে দেয় সাব-রেজিস্ট্রার মোঃ জহির উদ্দীন। তিনি আরো জানায়, ভূমিদস্যু মোজাম্মেলের অত্যচারে আমরা অতিষ্ঠ।
আব্দুল মান্নান রুবেল জানায়, আমি নিজে সদর এসিল্যান্ডের কাছে খারিজ বাতিলের আবেদন করি। আমার আবেদনটি পৌর ভূমি অফিসে তদন্তে জন্য প্ররণ করেন। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পরে আমার কোন কথা না শুনে বিবাদী ভূমিদস্যু মোজাম্মেলের সাথে যোগসাজসী করে আমার আবেদনের মিস কেস নম্বরটি বাতিল করে দেন দূর্ণীতিবাজ এসিল্যান্ড নাঈমা খান। রুবেল আরো জানায়, আমার নানিকে সাথে নিয়ে সদর সাব-রেজিস্ট্রার মোঃ জহির উদ্দীনের কাছে যায়। আমার নানি মুনিরা খাতুন একটি অভিযোগ জমা দেয়। অভিযোগ পাওয়ার পরে দলিল বাতিল করে দিবে মর্মে সাব-রেজিস্ট্রার জহির উদ্দীন আমাদের কাছে মোটা অংকের চাঁদা দাবি করে। আমরা তাঁকে চাঁদা দিতে রাজি না হলে তিনি আমাদের কে বলেন যে, ‘মোজাম্মেলের দলিল করতে খরচ হয়েছে। তাকে কিছু খরচ দিয়ে আপোস করে নিয়েন’ বলে আমাকে এবং আমার নানি কে অফিস থেকে বিদায় করে সাব-রেজিস্ট্রার জহির।
ভূমিদস্যু মোজাম্মেলের কবলে পড়া দূর্গাপুর গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা ও দূর্গাপুর পোক্তা ওয়াক্তিয়া মসজিদের সভাপতি মোঃ আলাউদ্দীন বলেন,মোজাম্মেলের কাজ হচ্ছে মানুষের জমির খতিয়ান তুলে বেড়া। কাকে পোতা বানা, নাতি বানা, কাকে ছেলে বানা, একরে ওয়াশেন তুলে আর মানুষের জমি জাল করো বেড়াই হচ্ছে তার কাজ। ভূমিদস্যু জালিয়াত মোজাম্মেল আমার একটা জমি জাল করার অনেক পায়তারা করেছিলো। কিন্ত লাভ করেতে পারেনি। তিনি আরো জানান, আকবর ফাতেমার কেউ না, তার কারন ফাতেমা খাতুন ছিলো নিঃসন্তান ও স্বামী পরিত্যাক্তা এবং ফাতেমা ১৯৮৭সালে রাজারামপুর পোক্তা ওয়াত্তিয়া মসজিদের নামে জমি দান করেছে। ভূমিদস্যু মোজাম্মেল ও আকবর এরা দুজনেই জালিয়াত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
মোজাম্মেল হকের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আকবর আলী ফাতেমা খাতুনের পোতা। ফাতেমার ওয়ারেশ সূত্রে আকবর আমাকে দলিল করে দিয়েছে। আমি আকবরের কাছে দলিল করে নিয়েছি। আকবরের কাছে নেওয়ার পরে খাজনা খারিজ সমস্ত করার পরে ঘেরা(বেড়া)দিয়ে ভোগ দখলে আছি। তাদের সাথে আমাদের মামলা ও হাঙ্গামা হয়েছে। আমাকেসহ আমার চাচা আকবর আলী আসামী করে একটি ফৌজদারী মামলা করে। তাদের উপর আমার চাচা কে বাদী করে জমির বিষয়ে একটি বাটোয়ারা মামলা করেছি। দু’গ্রুপের মামলা আদালতে চলমান আছে। তাদের সাথে আপোস করার জন্য পৌরসভা ও থানাসহ বিভিন্ন অফিসে বসা হয়েছে, তারপরেও কোন আপোস হয়নি। কোনখানে তারা পার পায়নি। শেষ মুহুর্তে তারা সাংবাদিক ডেকে বিষয়গুলো জানাজানিসহ বিভিন্ন ধরনের ছলনা করে বেড়াচ্ছে। পৌরসভার সালিশি আদালতে সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানতে চাইলে আকবর আলী বলেন, ওয়ারেশনের বিষয়ে আমাদের কোর্টে যাওয়ার কথা বলেছে। কোর্টে প্রমান হবে কে কার ওয়ারেশ? ওয়ারেশনের বিষয়ে আদালতে কোন মামলা করেছেন কি না? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওয়ারেশনের বিষয়ে কোন মামলা করিনি।আমার চাচা তার ছেলের স্ত্রী সুমা‘র’ মাধ্যমে আবারো ওয়ারেশন তুলেছে। ফাতেমা নিঃসন্তান এবং স্বামী পরিত্যক্তা অবস্থায় মারা গেছে এবং ফাতেমা মারা গেছে কত সালে? এবিষয়ে মোজাম্মেলের কাছে জানতে চাইলে তিনি চ্যালেঞ্জ করে বলেন, এটা কোন দিনও হয়না। ভগুরুদ্দীন ও আয়াতনের জন্মই হয়েছে ফাতেমার গর্ভে। ফাতেমার মৃত্যুর বিষয়ে তাঁর সঠিক তথ্য জানা নেয় তবে স্বাধীনের পরে হবে আমার চাচা আকবর আলীর কাছে শোনা চাচাই বলতে পারবে। ওয়ারেশন সনদপত্র করা হয়েছে ১৯৭৩ সালে মারা গেছে বলে। ১৯৯৮সালের বড় বন্যার কিছুদিন পরে ফাতেমা মারা গেছে এমন প্রশ্ন করা হলে মোজাম্মেল বলেন এ বিষয়ে আমি বলতে পারবো না। আমার চাচা আকবর আলী বলতে পারবে। আকবর আলীর ছেলে মেয়ে থাকতে আপনাকে সরাসরি জমি দান করলো কেন? মোজাম্মেল বলেন, এটা বলার কিছু নাই।
সাবেক কাউন্সিলর আহসান হাবিব এর পিতার সাথে জমি নিয়ে আকবর আলী কে বাদী করে মামলা চলছে সেটাও মোজাম্মেল নিজে পরিচালনা করেন বলে জানান। মোজাম্মেল আরো জানান, জোরা জোরি করে কারো জমি পাওয়া যাবে না। আমার চাচা আকবর আলী যদি ফাতেমার ওয়ারেশ হয়, তাহলে আমি জমি পাবো, আর যদি না হয় তাহলে আমি জমি পাবো না। এক কথায় কাগজ যার, জমি তার। আমি কাগজে পেলে নিবো, না পেলে নিবো না। জমি দখল নিয়ে দু-গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনার পরিবেশের কারনে এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে, এমন পশ্নে “চাঁপাই দর্পণ” প্রতিবেদক কে তিনি বলেন, আমি তাদের সাথে কখনো ঝামেলায় যায়নি এবং যাবো না।
এব্যপারে মোঃ আকবর আলীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি তাঁর নিজ নাম এবং পিতা ও মাতার নাম টি শুদ্ধভাবে বলেন এবং ফাতেমা তার দাদি বলে দাবি করেন। কিন্তু ফাতেমা মারা গেছে কত বছর আগে প্রশ্নে স্বাধীনের আগে কি পরে, আমার মনে নাই। আমার মাথার সমস্যা ব্রেন শর্ট বলে এড়িয়ে জান। কিন্তু তাঁর ছেলে মেয়ে এবং পরিবারে কতজন সদস্য, ছেলেরা কোথায় আছে, আদালতে কয়টা মামলা চলছে, পৌরসভা থেকে কে ওয়ারেশান সনদপত্র নিয়ে এসেছে, মামলা পরিচালনা করে তার ভাতিজা মোজাম্মেল, এসব বিষয়ে তিনি স্পষ্টভাবে বললেও ফাতেমা কোথায় মারা গেছে, জানতে চাইলে আবারো তিনি বলেন আমার ব্রেন শর্ট। উপর রাজারামপুর গোরস্থান কমিটি ও মৃত্যু রেজিস্ট্রার সূত্রে জানা গেছে, ফাতেমা খাতুন, পিতা মৃত- ফকুরুল্লাহ মন্ডল, মাতা-মৃত-নুরফত নেসা, সাং-দূর্গাপুর ঘোন পাড়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর। তিনি গত ১৫/১১/১৯৯৮ইং তারিখে সকাল ০৬টায় মারা যায় এবং একই তারিখে বাদ জোহর উপর রাজারামপুর গোরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়েছে মর্মে ৩৭/২৩ ক্রমিক নম্ব রেজিস্ট্রারে লিপিবদ্ধ আছে তার সত্যতা পাওয়া গেছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার পারিবারিক সালিশী আদালতের আদেশ বহাল থাকা শর্ত্বেও ভূমিদস্যু ও জালিয়াত চক্রটি আবারো ফাতেমা খাতুন ১ ছেলে ওগুরুদ্দীন ও মেয়ে আয়াতন বেওয়া কে রেখে ১৯৭৩সালে মারাগেছে মর্মে গত৩০/১০/২০২৪ইং তারিখে পুণঃরায় (৩৫৬৪০,৩৫৬৩৯,৩৫৬৩৮,৩৫৬৩৭) ক্রমিক নম্বরে ওয়ারেশন উত্তলোন করেছে এবিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার ০৫নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের দ্বায়িত্বে থাকা হরিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ মাহাফুজুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি স্বাক্ষর করেছি। এটা আমার স্বাক্ষর। কে কখন এসে নিয়ে গেছে, আমার মনেও নাই এবং আমি কাউকে সঠিকভাবে চিনি না। যদি তথ্য গোপন করে এমন কাজ করে থাকে, প্রয়োজনে আমি মামলা করবো বলে জানান কাউন্সিলরের দ্বায়িত্বে থাকা এ প্রধান শিক্ষক মাহাফুজুল।
এব্যপারে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার ০৫নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মোঃ আব্দুল গণি’র সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ফাতেমা আমাদের চাচাতো ফুফু। তার একমাত্র ভাই হচ্ছে সেরাজ উদ্দীন। তাদের জমি এবং আমাদের জমি একই আইল লাগা বাড়ী। আমার বর্তমান বয়স ৪৭। আমার জ্ঞান হওয়ার পর থেকে ফাতেমার মৃত্যু পর্যন্ত দেখেছি তাঁর স্বামী বা কোন ছেলে- মেয়ে কেউ ছিলো না। ভূমিদস্যু আকবর যেটা দাবি করছে, সেটা ভিত্তিহীন ও মিথ্যা কথা। উনার একমাত্র ভাই সেরাজ উদ্দীন ছাড়া আর কোন ওয়ারেশ ছিলোনা। মুলত সম্পত্তির লোভের আশায় সন্তান দাবী করা এছাড়া আর কিছু না। মোসাঃ ফাতেমা খাতুন ১৯৯৮ সালের বড় বন্যার পরে তিনি মারা যায় এবং তাঁকে উপর রাজারামপুর গোরস্থানে দাফন করা হয়। আমি তাঁর জানাজায় উপস্থিত ছিলাম। মোঃ আকবর আলী পৌরসভা থেকে যেটা ওয়ারেশন নিয়েছিলো সেটা ১৯৭৩ সালে ফাতেমা মারাগেছে বলে এবং দাদী সাজিয়ে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভা কর্তৃপক্ষ তদন্ত করেছে এবং আমি সে তদন্তে ও সালিশি আদালতে ছিলাম। তদন্তের মাধ্যমে ভূয়া ওয়ারেশ প্রমান পাওয়া যায় যে তিনি ১৯৯৮ সালে মারা গেছেন। পরবর্তীতে পৌরসভা সালিশি আদালতের মাধ্যমে আকবর আলীর ওয়ারেশন বাতিল করে। আব্দুল গণি আরো জানায়, আকবর হচ্ছে নিরিহ ব্যাক্তি, তাঁকে দিয়ে জালজালিয়াতি করার মূল হোতা হচ্ছে ভূমিদস্যু মোজাম্মেল। আকবর এবং মোজাম্মেলের কারনে উভয়পক্ষের মধ্যে যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। তাতে যে কোন সময় আইন শৃঙ্খলার অবনতি ঘটতে পারে। আব্দুল গণি বলেন, এটা সত্য দু গ্রুপের মধ্যে জমির দখল নিয়ে হট্টগোল, গন্ডগোল হতে পারে। আকবর বা মোজাম্মেল জমির কোন মালিক না এরা ভূমিদস্যু। জোরপূর্বক এরা জমি জাল করে বেড়াই। আমি কাউন্সিলর থাকা অবস্থায় যা দেখেছি এরা জমি জাল জালিয়াতি করে বেড়ায়। এদুজনের বিষয়ে অনেক অভিযোগ আছে। আকর আলী ও ভূমিদস্যু মোজাম্মেলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি ও জানান সাবেক এ কাউন্সিলর আব্দুল গণি।
আকবর আলী ও ভূমিদস্যু মোজাম্মেল হকের অত্যচারে আতঙ্কিত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধীক এলাকাবাসী বলেন, ব্রেন শর্টের অভিনয়কারী আকবর ও ভূমিদস্যু মোজাম্মেল আমাদের জমির উপর লোভ করতে তাদের দিধা আসবে না। তাদের কাজই হচ্ছে মানুষের জমির কাগজ তুলে বেড়া, আর নামের সাথে মিল থাকলেই ওয়ারেশ দাবি করে আদালতে ভূয়া কাগজপত্র দিয়ে মামলা করে বছরের পর বছর ধরে হয়রানী ও আর্থিক ক্ষতি করা। মামলায় হেরে গেলে খরচ হিসেবে চাঁদা দাবি করে।
মোজাম্মেল হক এলাকায় ভূমিদস্যু হিসাবে পরিচিত। মোজাম্মেল ও আকবর কে আইনের মাধ্যমে শাস্তি হলে এরা ঠিক হতে পারে। প্রশাসনের দৃষ্টি আর্কশন করে এলাকাবাসী বলেন, আকবর ও মোজাম্মেল এরা দুজনেই লোখা পড়া জানে না। আকবর আলী টিপ স্বাক্ষর করে আর মোজাম্মেল কোন রকম স্বাক্ষর জ্ঞান নিয়েই কি এসব করছে? নাকি তাদের সাথে গোপনে অন্য কেউ জড়িত আছে। প্রশাসনের মাধ্যমে এদের ব্যপারে একটা সঠিক তদন্ত হলে আসল রহস্য বেরিয়ে আসতে পারে।