চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার চরবাগডাঙ্গায় মাদক সম্রাট ও সন্ত্রাসের গডফাদার শাহিদ রানা টিপু চেয়ারম্যান ও তাঁর সন্ত্রাসী বাহিনীর হাতে নৃশংসভাবে খুন হওয়া আব্দুল হাকিম পিন্টুর খুনিদের দ্রুত গ্রেফতার ও শাস্তির দাবীতে মানববন্ধন করেছে ভূক্তভোগী পরিবার ও নির্যাতনের শিকার এলাকাবাসী। রবিবার (৯ মার্চ) সকাল সাড়ে ১০টায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
কর্মসুচীতে চরবাগডাঙ্গার খুনের শিকার পিন্টুর পরিবার ও একই এলাকায় একাধিক হত্যাকান্ডের শিকার পরিবার এবং এলাকার নির্যাতিত-নিপীড়িত সাধারণ নারী-পুরুষ ও শিশুরা অংশ নেয়। মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, নিহত পিন্টুর বাবা মামলার বাদী মোঃ হুমায়ন, পিন্টুর বোন মোসাঃ জান্নাতুন খাতুন, চাচা রফিকুল ইসলাম ও রবিউল ইসলাম, আরেক হত্যাকান্ডের শিকার জিয়াউর রহমানের স্ত্রী বাদী মোসাঃ মিলিয়ারা, স্থানীয় শওকত আলীসহ অন্যরা।
বক্তারা বলেন, পিন্টু হত্যার প্রায় দেড়মাস পার হলেও পুলিশ মামলায় এপর্যন্ত ৩জনকে গ্রেফতার করলেও মূল হোতা শাহিদ রানা টিপু চেয়ারম্যান ও তাঁর সন্ত্রাসী বাহিনীর সক্রিয় সন্ত্রাসীরা এখনো গ্রেফতার হয়নি। অন্যদিকে, টিপু চেয়ারম্যান ও তাঁর সন্ত্রাসী বাহিনীর লোকজন মামলা তুলে নিতে নানাভাবে হুমকি দেয়া অব্যাহত রেখেছে। ভূক্তভোগী পরিবার আতংকে দিন কাটাচ্ছে। খুনিরা গ্রেফতার না হওয়ায় চরম হতাশা এবং নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে পরিবারগুলো। মাদক সম্রাট ও সন্ত্রাসের গডফাদার শাহিদ রানা টিপু চেয়ারম্যান ও তাঁর সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্য পিন্টু হত্যা মামলার আসামীদের দ্রুত গ্রেফতার ও কঠোর শাস্তির দাবী জানান বক্তারা।
মাদক সম্রাট ও সন্ত্রাসের গডফাদার চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এবং আওয়ামীলীগ নেতা চেয়ারম্যান শাহিদ রানা টিপুর নেতৃত্বে তাঁর সহযোগিরা চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নের গোয়ালডুবি মোন্নাপাড়ার বীর মুক্তিযোদ্ধা মৃত সাবের আলীর ছেলে মোঃ হুমায়ন (৬০) এর ছেলে আব্দুল হাকিম পিন্টুকে এবছর ১২ জানুয়ারী রাত আনুমানিক সাড়ে ৭টার দিকে চরবাগডাঙ্গার সোনাপট্টির পাশে লতিব মিনিস্টারের বাগানে কুপিয়ে-পিটিয়ে মৃত ভেবে ফেলে রেখে চলে যায়। ঘটনা জানতে পেরে পরিবার ও এলাকার লোকজন আব্দুল হাকিম পিন্টুকে প্রথমে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালে ভর্তি করে। অবস্থা আশংকাজনক হলে পিন্টুকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পিন্টুর অবস্থা বেগতিক হতে থাকে। শেষে ২৩ জানুয়ারী দুপুর ২ টার দিকে চিকিৎসাধিন অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যায়। রাজশাহী মেডিকেলে ময়নাতদন্ত শেষে লাশ নিয়ে এসে পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হয়। এঘটনায় বীর মুক্তিযোদ্ধা মৃত সাবের আলীর ছেলে মোঃ হুমায়ন চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানায় ২৩ জানুয়ারী দিবাগত রাতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
উল্লেখ্য, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নে ঘটছে একের পর এক খুনের ঘটনা। মাদক সম্রাট ও সন্ত্রাসের গডফাদার চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এবং আওয়ামীলীগ নেতা চেয়ারম্যান শাহিদ রানা টিপুর নেতৃত্বে এসব ঘটনা ঘটলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে টিপুসহ খুনের সাথে জড়িতরা। আওয়ামী পরিবারের হওয়ায় এবং অর্থের ক্ষমতার কাছে অসহায় এলাকার লোকজন। মাদক সম্রাট ও সন্ত্রাসের হোতা টিপুর বিরুদ্ধে কেউ কথা বললেই নেমে আসে নির্যাতন, হত্যাসহ নানা অত্যাচার। তার নিজস্ব আইনাঘরে নিয়ে চালান অমানবিক ও পৈষাচিক নির্যাতন। টিপু একদিকে যেমন চরাঞ্চলের মাদক সম্রাট ও সন্ত্রাসের গডফাদার, অন্যদিকে বালু সিন্ডিকেট, মাটি সিন্ডিকেটেরও গডফাদার।
এছাড়া, মাদক ব্যবসা করে অঢেল অর্থের মালিক হওয়ায় অর্থ দিয়ে প্রশাসন ও নেতাদের মুখ বন্ধ করে রেখেছেন বলেও অভিযোগ ভূক্তভোগী পরিবার ও এলাকাবাসীর। চরবাগডাঙ্গায় সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে অনেক ঘটনায় মামলার প্রধান আসামী হলেও তাকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। কয়েকটি খুনের মামলার ওয়ারেন্টভূক্ত আসামী হলেও টিপু চেয়ারম্যান গ্রেফতার হচ্ছে না। তার মূল সহযোগিরা সন্ত্রাস করেও প্রকাশ্যে ঘুরছে এবং খুন-সন্ত্রাস করে উল্টো হুমকি-ধামকি এবং প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছেন টিপু চেয়ারম্যান ও তার মূল সহযোগিরা এবং সন্ত্রাসীরা। সন্ত্রাসী টিপু চেয়ারম্যানসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ আসামীরা গ্রেফতার না হওয়ায় ভয়ের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে ভূক্তভোগী পরিবারের লোকজন ও এলাকাবাসী।
অন্যদিকে, আওয়ামীলীগ পরিবারের হওয়ায় দীর্ঘদিন এলাকায় সন্ত্রাসী কার্যক্রম ও মাদক ব্যবসা চালিয়ে গেলেও কোন বিচার না হওয়ায় রীতিমত স্তম্ভিত ও ক্ষুদ্ধ এলাকাবাসী। সন্ত্রাসের হোতা টিপুর বাবা আবু বক্কর ঝাটু ছিলেন চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নের ২ বারের সভাপতি, তার ভাই সাহারুল ইসলাম কালু বর্তমান চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি। এদিকে টিপু চেয়ারম্যান ও তার দোষররা মিথ্যা ও বানোয়াট প্রচারনা চালিয়ে পিন্টু হত্যাকান্ড ভিন্নখাতে প্রবাহের জন্য নানান চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তার মাদক ও সন্ত্রাসের রাজত্ব ঠিক রাখতে মাদক সম্রাট টিপু করছেন নানা কৌশল।
এদিকে, ৫ আগষ্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ সরকারের পতন হওয়ার পর ভোল্ট পালিয়ে বিএনপি-জামায়াত নেতাদের সাথে সৌখ্যতা গড়ে তুলেছেন এবং পুলিশ প্রশাসনকে ম্যানেজ করে রেখেছেন বলেও অভিযোগ এলাকার অনেক মানুষের। এছাড়া, আগের একটি হত্যা মামলার (জিয়া হত্যা মামলা) ওয়ারেন্টভূক্ত আসামী হয়েও ঘুরে বেড়িয়েছেন জেলা শহরের বিভিন্ন অফিসে। টিপু চেয়ারম্যান বিএনপি নেতাদের সাথে বসে দীর্ঘসময় আলাপ-আলোচনা করছেন, তার পক্ষে কাজ করার জন্য অর্থ ব্যয় করছেন। অজ্ঞাত কারণে টিপু চেয়ারম্যানসহ অন্যান্য মূল আসামীরা ধরা পড়ছেনা, এনিয়ে ক্ষুদ্ধ ভূক্তভোগী পরিবারগুলো ও সাধারণ মানুষ। তবে পুলিশ বলছেন, তারা যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু টিপুসহ অন্যান্য মূল আসামীদের পাওয়া যাচ্ছে না। এরই মধ্যে ২/৩জন আসামী ধরা হয়েছে। আদালতের আদেশে রিমান্ডেও নেয়া হয়েছে এক আসামীকে। এলাকার কোন সন্ত্রাসীকে ছাড় দেয়া হবেনা। আসামীদের ধরতে পুলিশি অভিযান চলমান রয়েছে।