1. tohidulstar@gmail.com : sobuj ali : sobuj ali
  2. ronju@chapaidarpon.com : Md Ronju : Md Ronju
দিনাজপুরে সার ডিলার নিয়োগে অনিয়ম ও দূর্নীতি ॥ কৃষি ডিডি’র কোটি টাকা বাণিজ্য - দৈনিক চাঁপাই দর্পণ
মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫, ১১:৫১ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
৫০টি পিলারের উপর নির্মিত দেশের দীর্ঘতম যমুনা রেলসেতুর উদ্বোধন গুম কমিশনের মেয়াদ বাড়লো ৩ মাস গাইবান্ধা এলজিইডি প্রকৌশলীর জব্দকৃত ৩৭ লাখ টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমার নির্দেশ র‌্যাবের অভিযানে চাঁপাইনবাবগঞ্জে হেরোইনসহ আটক এক রহনপুরে উপজেলা প্রেসক্লাবের ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত বাড়ি বাড়ি গিয়ে রহনপুরে পৌরসভার ভিজিএফের তালিকা যাচাই এ ইউএনও! গোবিন্দগঞ্জে মাদ্রাসা শিক্ষকের প্রাণ কেড়ে নিলো চলন্ত ট্রাক কিডজ কারাভান শিশুসাহিত্য পাণ্ডুলিপি পুরস্কার ২০২৪ গোবিন্দগঞ্জে শিশু ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে এক ব্যক্তি গ্রেপ্তার চুয়াডাঙ্গায় বিজিবির অভিযানে ৬টি অবৈধ স্বর্ণের বারসহ এক যুবক আটক

দিনাজপুরে সার ডিলার নিয়োগে অনিয়ম ও দূর্নীতি ॥ কৃষি ডিডি’র কোটি টাকা বাণিজ্য

শাহ্ আলম শাহী-দিনাজপুর
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ, ২০২৫
  • ৪৩ বার পঠিত

দিনাজপুরে সার ডিলার নিয়োগে অনিয়ম ও দূর্নীতি ॥ কৃষি ডিডি’র কোটি টাকা বাণিজ্য

দিনাজপুরে বিএডিসি’র সার ডিলার নিয়োগে অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। উপজেলা পর্যায়ের যাচাই-বাছাইকৃত ৮১ জন সার ডিলারের মধ্যে কোটি টাকা বাণিজ্যের বিনিময়ে ৩০ জন জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। যাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তাদের অধিকাংশের নেই দোকান ঘর, সাইনবোর্ড বা ব্যবসার অস্তিত্ব। প্রকৃতরা বাদ পড়লেও নেওয়া হয়েছে আওয়ামীলীগের অনেককেই। এনিয়ে গত বৃহস্পতিবার দিনাজপুর জেলা প্রশাসক ও জেলা সার মনিটরিং কমিটির সভাপতিকে অভিযোগ দিয়েছেন বঞ্চিত সার ডিলার প্রত্যাশি-বীজ ডিলাররা। ৫১ জনকে কি কারণে নিয়োগ বঞ্চিত করা হলো, জেলা সার মনিটরিং কমিটির সভার সিদ্ধান্ত বহিতে তা উল্লেখ না থাকায় উদ্বেগ ও উত্তেজনা ছাড়িয়ে পড়েছে সার ডিলার প্রত্যাশিতদের মধ্যে। অভিযোগের তীর দিনাজপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণের সদ্য সাবেক উপপরিচালক মো. নুরুজ্জামানের বিরুদ্ধে। তবে, উপপরিচালক মো. নুরুজ্জামান দাবী, চাপের মুখে তাকে তা করতে হয়েছে। তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা থেকে শুরু করে রংপুর বিভাগীয় এবং কেন্দ্রীয় নেতারা এবং জেলা বীজ ডিলার এসোসিয়েশনের চাপের মুখে আমাকে এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। সিদ্ধান্ত ভুল হলে জেলা প্রশাসক তা বাতিল করতে পারবেন। অভিযোগ উঠেছে, বিএডিসি (সার) এর পিও মিজানুর ও বীজ ডিলার এসোসিয়েশনের কথিত কর্মকর্তা হাবিবের মাধ্যমে প্রায় কোটি টাকা বাণিজ্য করেছেন কৃষি সম্প্রসারণের সাবেক ডিডি তথা জেলা সার মনিটরিং কমিটির সদস্য সচিব মো.নুরুজ্জামান। দিনাজপুর থেকে বদলির আগের মূহুর্তে ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে ৩০ জনের সার ডিলার নিয়োগের তালিকা তৈরি করে পরের দিন অর্থাৎ ২৭ ফেব্রুয়ারি দিনাজপুর জেলা প্রশাসক তথা জেলা সার মনিটরিং কমিটির সভাপতি মো. রফিকুল ইসলামের স্বাক্ষর নিয়েছেন।

বীজ ডিলার থেকে সার ডিলার প্রাপ্তির আবেদন যাচাই-বাছাই শেষে দিনাজপুরের ১৩টি উপজলা সার মনিটরিং কমিটি ৮১ জনকে সার ডিলার নিয়োগের জন্য সুপারিশ করে জেলায় পাঠায়। দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে এই ৮১ জনের সার ডিলার নিয়োগ ফাইলবন্দী হয়ে ছিলো জেলায়। নিয়োগদাতাদের সঙ্গে লেন-দেনের হিসেব-নিকাশ না মিলায় এ সার ডিলার নিয়োগগুলো ফাইলবন্দী ছিলো বলে অভিযোগ করেছেন বীজ ডিলার এসোসিয়েশনসহ অনেকেই। তবে দুই দালালের মাধ্যমে কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালকের হিসেব মিলে যাওয়ায় জেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেই বদলির আগের মুহুর্তে তিনি ৩০ জনের সার নিয়োগ চুড়ান্ত করেই অন্যত্র চলে যায় বলে অভিযোগকারিরা জানায়। এজন্য সার ডিলার নিয়োগকৃত ৩০ জনের প্রত্যেকেই ৩ লাখ থেকে ৬ লাখ টাকা উৎকোচ গুণতে হয়েছে বলে দাবি করেছেন অভিযোগকারিরা। অভিযোগকারিরা জানায়, জেলা প্রশাসকের নিচের তলায় ৬ ফেব্রুয়ারি জেলা সার মনিটরিং কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। জেলা প্রশাসকের অনুপস্থিতিতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) এসএম হাবিবুল হাসান সভাপতিত্ব করেন ওই সভায়।


অন্যান্য দিনের মতো সার সরবরাহ ও বিপণনের বিষয়ে নানা আলোচনা হলেও সার ডিলার নিয়োগ বা কাদের নিয়োগ দেওয়া হবে তা নিয়ে সভায় কোন আলোচনা সিদ্ধান্ত হয়নি বলে অভিযোগকারিরা জানান। সভায় চার নং এজেন্ডার হিসেবে এবিষয়টি উল্লেখ করে কৃষি ডিডি তা কৌশলে এড়িয়ে যায়। এনিয়ে প্রতিবাদ করা হলে সভার সভাপতি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) এসএম হাবিবুল হাসানকে নিয়ে কৃষি ডিডি নুরুজ্জামান সভাস্থল ত্যাগ করে বারান্দায় গিয়ে দু’জনে কথা বলে কিছুক্ষণ পর ফিরে আসেন। অভিযোগকারিরা বলেন, বাছাইকৃত ৮১ জনের মধ্যে কোন ৩০ জনকে সার ডিলার নিয়োগ দেওয়া হলো এবং বাকি ৫১ জনকে কি কি কারণের বাদ দেওয়া হলো এর রেজুলেশন বা সিদ্ধান্ত ওই সভার মন্তব্য বহিতেও উল্লেখ নেই।
এবিষয়ে দিনাজপুর জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগকারি বীজ ডিলার মোছা. নুরে ফেরদৌসি জানান, আমাদের সঙ্গে বৈষম্য করা হয়েছে। আমরা দীর্ঘ বছর ধরে যারা কৃষকদের সেবা দিয়ে আসছি, তাদের বাদ দিয়ে অর্থের বিনিময়ে অধিকাংশ ভুয়া ব্যবসায়ীদের সার ডিলার লাইসেন্স দেয়া হলো। আর আমাদের বঞ্চিত করা হলো। এর বিচার কার কাছে চাইবো! আমরা এর সুষ্ঠু বিচার চাই। প্রকৃতদের সার ডিলার নিয়োগ চাই। তা নাহলে বৈষম্য তো থেকেই গেলো। বীজ ডিলার ওয়াহেদ বলেন, আমার খানসামায় ১১ জনের মধ্যে ৪ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৩ জনই আওয়ামীলীগের। বীজ ডিলার লিয়াকত ব্জানান, যাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তারা অনেকেই এই ব্যবসায় জড়িত নয়। অনেকের দোকান নেই। কেউ কেঊ অন্যের দোকানে সাইনবোর্ড লাগিয়ে রাখলেও এই ব্যবসা করেন না। যাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তাদের কাছে কারো কাছে ৩ লাখ আবার কারো কাছে ৬ লাখ টাকা নিয়েছে। এই সিষ্টেম করে দিয়েছে বিএডিসি’র মিজান এবং বীজ ও সার ডিলার হাবিব। এই টাকার ভাগ অনেকের কাছে পৌঁছেছে। আমরা চাই, প্রকৃত ব্যবসায়ী সবাইকে নিয়োগ দেয়া হোক। এবিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) এসএম হাবিবুল হাসানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। মুঠোফোনে তাঁকে ফোন দেওয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা সার মনিটরিং কমিটির অন্যমত সদস্য বিএডিসি’র আঞ্চলিক যুগ্ম পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, আমি লোক মুখে শুনেছি। তবে এ নিয়োগ বিষয়ে আমি কোন কিছুই অবগত নই। বাছাইকৃত ৮১ জনের মধ্যে কাদের বা কতজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তা আমি জানিনা। এ সংক্রান্ত চিঠি আমি এখনো পাইনি। যাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, কিভাবে দেওয়া হলো, যাদের বাতিল করা হলো কেনো বাতিল করা হলো- তা অবশ্যই সার মনিটরিং কমিটির সভার রেজুলেশনে উল্লেখ থাকার কথা। আমার দপ্তরের সার ডিলার লাইসেন্স হলেও আমি এই ৩০ জনের বিষয়ে কিছুই অবগত নই। কোন অনিয়ম হলে বা আমার দপ্তরের কেউ জড়িত থাকলে এর দায়-দায়িত্ব তারাই নিবেন। ২০১৪ সাল থেকে একই স্থানে কর্মরত দিনাজপুর বিএডিসি’র যুগ্ম পরিচালক (সার) এর ব্যক্তিগত সহকারি মো. মিজানুর রহমানের রিরুদ্ধে এই ৩০ জন সার ডিলার নিয়োগে অর্থ লেন-দেনের দালালীর অভিযোগ উঠলেও তিনি তা অস্বীকার করেছেন। বলেছেন, আমি এসবের কিছুই জানিনা। আমার শক্রুরা আমার নামে কুৎসা রটাচ্ছে। অবৈধভাবে ৩০ জন সার ডিলার নিয়োগে অর্থ লেন-দেনের দালালীতে আরেক অভিযুক্ত বীজ ও সার ডিলার আহসান হাবিব জানিয়েছেন, এসবের সঙ্গে আমি জড়িত নই। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা রটিয়ে একটি গ্রুপ সুবিধা নিতে চায়।
দিনাজপুর বীজ ডিলার এসোসিয়েশনের আহবায়ক লিয়াকত আলী বেগ লিটন জানিয়েছেন, কৃষি ডিডি নুরুজ্জামান মিথ্যা বলেছেন। আমরা কখনো তাকে চাপ প্রয়োগ করিনি। তিনি সভায় নিজেই চার নং গোপনীয় এজেন্ডা এনে এসব করেছেন। যাদের সার ডিলার নিয়োগ দেয়া হয়েছে, তাদের অধিকাংশের ব্যবসার কোন অস্তিত্ব নেই। এছাড়াও আওয়ামীলীগের বেশির ভাগ নিয়োগ পেয়েছে। কিভাবে পেলো এটা তিনি নিজেই বলতে পারবেন। জেলা সার মনিটরিং কমিটিতে থাকলেও আমরা কিছুই জানিনা। তবে এর আগে বিভিন্ন সভায় বিধি মতো সার ডিলার নিবন্ধনের দাবি জানানোয় আমাকে অপমানিত হতে হয়েছে। তিনি (ডিডি) নিজেকে বাঁচাতে সবাইকে জড়িত করছে। দিনাজপুর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহবায়ক একরামুল হক আবির এবিষয়ে জানিয়েছেন, কৃষি কর্মকর্তা নিজেকে বাঁচাতে হয়তো মিথ্যার আশ্রয় নিচ্ছেন। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের জড়াচ্ছেন। আমি কোন দিন তার অফিসে যাইনি। তাকে চিনিও না। তিনি কিভাবে বলেন, আমাদের চাপে পড়ে করেছেন? এব্যাপার তদন্ত পূর্বক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক-বলে আমরা মনে করছি।’
এবিষয় জানতে দিনাজপুর জেলা প্রশাসক ও জেলা সার মনিটরিং কমিটির সভাপতি মো. রফিকুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি রাষ্টীয় কাজে ব্যস্ত থাকায়, তা সম্ভব হয়নি।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ নুর-এ-আলমের কাছে এবিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমিও এবিষয়ে তেমন কিছুই জানিনা। তবে যাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, কিভাবে দেওয়া হলো, যাদের বাতিল করা হলো, কেনো বাতিল করা হলো- তা অবশ্যই সার মনিটরিং কমিটির সভার রেজুলেশনে উল্লেখ থাকার কথা। যদি কোন অনিয়ম হয়ে থাকে বিষয়টি আমি জেলা প্রশাসক মহোদয়কে জানাবো।’ দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সদ্য বদলিকৃত উপ-পরিচালক মো.স নুরুজ্জামানের সঙ্গে এবিষয়ে এ প্রতিবেদকের মুঠোফোনে কথা হয়।
মো. নুরুজ্জামান বলেন, ‘চাপের মুখে আমাকে তা করতে হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা থেকে শুরু করে রংপুর বিভাগীয় এবং কেন্দ্রীয় নেতারা এবং জেলা বীজ ডিলার এসোসিয়েশনের নেতারা আমাকে প্রতিনিয়ত চাপের মধ্যে ফেলে এই ৩০ জন সার ডিলার নিয়োগে বাধ্য করিয়েছেন। এখানে আর্থিক কি লেন-দেন হয়েছে, আল্লাহ্র কসম খেয়ে বলছি-তা আমি কিছুই জানি না। কেউ টাকা দিয়ে থাকলে, যারা নিয়েছে তারাই বুঝবে। আমি কিছুই জানিনা। তবে চিন্তার কোন কারণ নেই। যেহেতু নিয়োগ শুরু হয়েছে, ধাপে ধাপে ওই ৮১ জন প্রত্যেকেই নিয়োগ পাবে। আর যদি এ নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক হয়ে থাকে, তাহলে জেলা প্রশাসক ইচ্ছে করলেই তা বাতিল করতে পারবেন। কারণ, তিনি সার মনিটরিং কমিটির সভাপতি। তিনি এক্ষেত্রে সর্ব ক্ষমতার মালিক।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
Copyright All rights reserved © 2024 Chapaidarpon.com
Theme Customized BY Sobuj Ali
error: Content is protected !!