দীর্ঘ প্রায় ১০ বছর পর এবছর আমের সর্বোচ্চ দাম পেয়ে খুশি চাঁপাইনবাবগঞ্জের চাষি ও ব্যবসায়ীরা। বিগত বছর গুলোতে আমের ফলন ভালো হলেও নায্য দাম পাইনি তারা। চাঁপাইনবাবগঞ্জে আমের নানা অপপ্রচারের প্রভাব পড়েছিল আম বাজারে। এ কারণে অন্য জেলার মানুষ এ জেলার আম তেমন পরিমাণে কিনে খেতো না। ঘরের আম ঘরেই পঁচে নষ্ট হতো। আমের মৌসুম প্রায় শেষ। কানসাটের আম বাজারে এখন শুধু বিলম্বিত আশ্বিনা ও কাটিমন জাতের আম পাওয়া যাচ্ছে। এই দুটো জাতের আমের দামও অনেক বেশি। প্রতিমন বিক্রি হচ্ছে ১৩ থেকে ১৪ হাজার টাকার পর্যন্ত। সব মিলিয়ে বাজারে এখন প্রতিদিন প্রায় এক-দেড়শ মণ আম বিক্রি হয়। জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ২০১২ সালে শেষ বারের মতো আমের দাম ছিল সবচেয়ে বেশি। তারপর আর আমের দাম বাড়েনি। আমের নায্য দাম না পাওয়ায় অনেক চাষি পুরাতন বাগানের বড় বড় আম গাছ কেটে ফেলেছে। যদিও পরে ওই বাগানগুলোতে নাবিসহ বিভিন্ন জাতের আম গাছ লাগিয়েছে চাষিরা। মহাসড়কের পাশের আম বাগানগুলো কেটে প্লট আকারে জমি বিক্রি করেছেন ওই বাগান মালিকরা। রেজাউল করিম নামের এক আম বাগানি বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম চাষিরা নিরাপদ আম উৎপাদন করেন। বাহিরের জেলার ব্যবসায়ীরা এখানে এসে আমের বাগান কিনেন। বেশি লাভের আশায় কিছু ব্যবসায়ী অপরিক্ক অবস্থায় আম পেড়ে নেন। ঢাকায় গিয়ে ফরমালিন মিশিয়ে আম পাঁকায়। বাজারে বিক্রির সময় চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম বলে বিক্রি করেন তারা। ফলে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমে ফরমালিন মেশায় এমন গুজব থেকে অনেকেই আর আম কিনতে চাইনা। এরই প্রভাব পড়ে এ জেলার আমের উপর। জেলার আরেক আম ব্যবসায়ী মনিরুল ইসলাম বলেন, স্বাদ আর সুগন্ধে চাঁপাই এর আমই সেরা। নিরপদ আম উৎপাদনে এখানকার আমচাষিরা কয়েক বছর ধরে ফ্রুট ব্যাগের ব্যবহার করেন। যার ফলে আমের আকার আকৃতি ও স্বাদ আর গায়ের রঙ উজ্জল থাকে। নিরাপদ আম উৎপাদনের জন্য এ জেলার চাষিরা অনেক পরিশ্রম করে। কানসাট আড়ৎদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক টিপু বলেন, আমের মৌসুম প্রায় শেষ। বাজারে আশ্বিনা ও কাটিমন ছাড়া অন্য কোন আম নেই। এখন বাজারে প্রতিদিন এক ট্রাক আম বাহিরে সরবরাহ হয়। এ বছরে বর্ষা না হওয়ায় আম তেমন নষ্ট হয়নি। চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম জানান, এই বছরে আম উৎপাদন কম। প্রথম থেকেই চাষিরা চড়া দামে আম বিক্রি করেছে, অনেক বছর পর জেলার আম চাষিরা কাঙ্খিত দাম পেয়ে খুশি। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. পলাশ সরকার বলেন, জেলায় এবার পুরাতন গাছে আম তেমন ছিলনা। সবচেয়ে ছোট গাছের বাগানগুলোতে বেশি আমের ফলন হয়েছিল। এবছরে চাষিরা তাদের কাঙ্খিত মূল্য পেয়েছেন। উল্লেখ্য, চাঁপাইনবাবগঞ্জে এই বছর প্রায় ৩৮ হাজার হেক্টর জমিতে আম চাষবাদ করেছে বাগানিরা। আম উৎপাদনের লক্ষমাত্রা ছিলো ৩ লাখ ১৫ হাজার মেট্রিক টন।