এক্সিম ব্যাংক কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্বাবধায়নে প্রথম বারের মতো চাঁপাইনবাবগঞ্জে সুর্যমূখী ফুলের চাষ করা হয়েছে। সদর উপজেলার ঝিলিম ইউনিয়নের বরেন্দ্র ভূমির ছোঁয়ায় হলুদের হাসিতে নতুন স্বপ্নের সম্ভাবনা দেখছেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির কৃষি অনুষদের গবেষক দল। এ দলে আছে বিশ্ব বিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়টির কৃষি অনুষদের ডীন ডক্টর মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে সুর্যমূখী গবেষণার কাজটি পরিচালিত হচ্ছে। গবেষকরা বলছেন, মানসম্মত শিক্ষার পাশাপাশি গবেষণার কাজে বেশি জোর দিচ্ছে এ প্রতিষ্ঠান।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শহর থেকে ১৩ কিলোমিটার পূর্বদিকে আমনুরা রোডের এক্সিম ব্যাংক কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব প্রায় দুই বিঘা জমিতে এ ফুলের চাষাবাদ। জমিতে সুর্যমূখী ফুলগুলো ফুটেছে, এ যেন হাসির মিলন মেলা। ফুলের সাথে সূর্যের মিল দেখতে দর্শনার্থীরা ভীড় জমিয়েছে ফুলের বাগানে। গবেষক দলের একজন কৃষি অনুষদের মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের সিনিয়র লেকচারার মেহেদী হাসান সোহেল। তিনি জানান, বিভিন্ন দেশ থেকে শতকরা প্রায় ৭০ ভাগ ভোজ্য তেল আমদানী করেন সরকার। তেলের আমদানী কমাতে দেশের মাটিতে তেলবীজ উৎপাদনে বেশি বেশি সরকার জোর দিচ্ছেন। ফলে চাঁপাইনবাবগঞ্জের এ বিশ্ববিদ্যালয়টির তত্বাবধায়নে পরীক্ষামুলক ভাবে সুর্যমূখীর চাষ করা হচ্ছে। তাই সুর্যমূখী চাষের উপর গুরুত্ব দিচ্ছেন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
সোহেল আরও জানান, পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে আগামীতে আরও বড় পরিসরে সুর্যমূখীর বীজ উৎপাদন করা হবে। গত বছরের ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে আরডিএস ২৭৫ (হাইব্রিড), ও বারি সূর্যমুখী-৩ (উচ্চ ফলনশীল) সূর্যমুখীর দুটো জাত জমিতে লাগানো করা হয়। প্রতি বিঘায় ১ কেজি ২০০ গ্রাম বীজ বোপণ করলে নূন্যতম ১৮-২০ হাজার টাকা লাভ করা যাবে। সুর্যমূখী চাষ করতে বিশেষ কোন খরচ নেই। বিঘা প্রতি চার থেকে সাড়ে ৫ হাজার টাকা খরচ করলে আশানুরূপ তৈলবীজ পাবেন চাষিরা। সূর্যমুখীর তেলের পুষ্টিগুণ নিয়ে গবেষকরা বলেন, অন্যান্য তেলবীজে যেসব ক্ষতিকারক উপাদান থাকে, সূর্যমুখীর তেলে তেমন নেই।
সূর্যমুখীর বীজে রয়েছে লিনোলিক এসিড যা স্বাস্থ্যের জন্যে খুব উপকারী। তাছাড়া এ তেলে ক্ষতিকারক ইরোসিক এসিড নেই। সূর্যমুখী তেলে মানবদেহের জন্য উপকারী ওমেগা-৬ ও ওমেগা-৯,আছে ফলিক এসিড। সূর্যমুখীর তেল হৃদরোগ, ডায়াবেটিস,উচ্চ রক্তচাপ,কিডনি রোগীর জন্যও সূর্যমুখীর তেল নিরাপদ। এদিকে, সুর্যমূখী চাষাবাদের কথা শুনে দর্শনার্থীরা ভীড় জমায়। এক্সিম ব্যাংক কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্রী সুমাইয়া আলম ঐশী। সে তার স্বামী জারিফ আর একমাত্র মেয়ে রোদসী হক অর্থীকে নিয়ে ছবি তুলছিলেন। প্রতিবেদককে জানালেন, আমার মেয়ে সূর্যমুখী ফুল খুব বেশি পছন্দ করে। মাঠজুড়ে এমন সূর্যমুখী ফুল কখনো দেখিনি। স্মৃতির পাতায় ধরে রাখতে এখানে ছবি তুলতে এসেছি। আমাদের ইউনির্ভারসিটি থেকে গবেষণার জন্য এমন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বিষয়টা জেনে গর্ব হচ্ছে এবং ভালোও লাগছে।