চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা সরকারী হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এক বৃদ্ধকে। গত ৩০ অক্টোবর গভীর রাতে অসুস্থ হয়ে অচেতন অবস্থায় রাস্তায় পড়ে থাকলে ২ যুবক বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে এবং হাসপাতালে ভর্তি করে। তবে, ফেসবুক ও মিডিয়াকর্মীদের মাধ্যমে জানতে পেরে ওই বৃদ্ধ কে বুধবার বিকেলে নিয়ে গেছে ছেলে-মেয়েরা। হাসপাতালের ভর্তি রেজিষ্ট্রারে বৃদ্ধ’র নাম লেখা রয়েছে মোঃ মকবুল হক (৮০)। পিতা নাম শুকালু আলী। হাসপাতাল ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ ২৫০ শয্যা হাসপাতালের পুরুষ ওয়ার্ড সুত্রে জানা গেছে, গত ৩০ অক্টোবর দিবাগত রাত ১২.৫০ মিনিটে ২ যুবক ওই বৃদ্ধ কে অচেতন অবস্থায় নিয়ে এসে ভর্তি করে। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ভর্তি করা হয়। বৃদ্ধকে পাশর্^বর্তী রোগীর স্বজনরা দেখাশুনা করে এবং খাবার কিনে খাওয়াচ্ছেন।
সেবা করছেন। শহরের ওই ২ যুবক খোজ খবর রাখছেন। স্বাভাবিক জ্ঞান তাঁর নেই, তিনি ঠিকমত কথাও বলতে পারছেন না। মাঝে মাঝে স্বাভাবিক হলেও এলোমেলো কথা বার্তা বলছেন। পাশর্^বর্তী এক রোগীর স্বজন জানান, ৩১ অক্টোবর তিনি কিছুক্ষন স্বাভাবিক হয়ে কিছু কথা বলেছেন। সেসময় তিনি তাঁর বাড়ি নওগাঁ জেলার আত্রাই উপজেলার ভবানীপুর বাড়ি গ্রামে। তাঁর ছেলেরা সকল সম্পত্তি লিখে নিয়ে বাড়ি থেকে বের করে নিয়ে আসে। ৩০ অক্টোবর দুপুরের সময় নওগাঁ থেকে ট্রেনে রাজশাহীতে স্টেশনে এর জোর করে পাওরুটি খাওয়ায়। তারপর চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাসে উঠিয়ে দেয়। পাউরুটি খাওয়ার পর থেকে স্বাভাবিক জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন তিনি। তারপর কি হয়েছে তা তিনি বলতে পারেন নি। তবে তিনি তাঁর মেয়েকে খবর দেয়ার কথা বলেন। কিন্তু যোগাযোগের কোন ব্যবস্থা না থাকায় বৃদ্ধর মেয়ের সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি। সদর হাসপাতালের পুরুষ ওয়ার্ডে ভর্তি এক রোগীর স্বজন মহিলা জানান, ৩০ অক্টোবর রাতে ২ জন ছেলে এসে অচেতন অবস্থায় নিয়ে এসে বৃদ্ধ কে ভর্তি করে।
তিনি অসুস্থ অবস্থায় ভর্তি আছেন। ২ যুবক এবং আমরা উনার দেখাশোনা করছি। ঠিকমত খেতেও পারছেন না এবং কথাও বলতে পারছেন না তিনি। জেলা শহরের রামকৃষ্টপুরের মোঃ তৌফিকুর রহমানের ছেলে মোঃ বেলার হোসেন জানান, ৩০ অক্টোবর রাত সাড়ে ১১টার দিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শহরের সোনারমোড় হরটিকিতল এলাকায় অচেতন অবস্থায় রাস্তার ধারে পড়ে থাকতে দেখে বৃদ্ধ মকবুল হোসেনকে উদ্ধার করে প্রথমে সদর থানা পুলিশকে অবহিত করা হয়। পরে পুলিশের পরামর্শে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেয়া হয়। বিষয়টি ফেসবুক ও সংশ্লিষ্ট এলাকার বন্ধুদের জানালে এবং চ্যানেল ও আই ও ‘দৈনিক চাঁপাই দর্পণ’ এর প্রতিনিধির সহায়তায় বৃদ্ধ মকবুল হোসেনের পরিবারের লোকজন জানতে পারে। বুধবার দুপুরে মকবুল হোসেনের এক ছেলে ২ মেয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জে আসেন। বাবাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য ব্যবস্থা নেন। বেলাল আরও জানান, ছেলে দিনমজুর মজিবুর রহমানের দাবী, মকবুল হোসেন মানসিক ভারসাম্যহীন, ভিক্ষাবৃত্তি করে, তার মা কয়েকবছর আগে মারা যায়। এখন তার বাবা বিয়ে করতে চায়, ভিক্ষাবৃত্তি করে বেড়ায়, অন্য একটি বৃদ্ধা মেয়ের সাথে ভিক্ষা করে, ২-১দিন বাসায় যায় না। অন্য জমি নেই, ভিটেমাটিটুকুও লিখে দিয়েছে। এখন অন্যের পরামর্শে জমি বিক্রির উদ্যোগ নেয় এবং কাগজপত্র উদ্ধারের চেষ্টা করছিলো। তবে কিভাবে এখানে এসেছে সে ব্যাপারে কিছু বলতে পারেননি বৃদ্ধ মকবুল হোসেনের ছেলে মজিবুর। বুধবার বিকেলে বেলাল ও অন্যরা মকবুল হোসেনকে তার ছেলে-মেয়েদের হাতে তুলে দেন।