অনেক বাধা উপেক্ষা করে জনগনের টাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। পদ্মাসেতু নির্মাণ করতে গিয়ে অনেক ঝড়ঝাপটা হয়েছে সহ্য করতে হয়েছে। সাধারণত কোনও প্রকল্প শেষ হলে-শেষ হওয়ার অনুষ্ঠান হয় না। কখনো করা হয় না, শেষ হয়ে যায়। সবাইকে ধন্যবাদ জানাতেই পদ্মাসেতুর সমাপনী অনুষ্ঠানের আয়োজন। শুক্রবার (৫ জুলাই) বিকেলে পদ্মা সেতুর মাওয়াপ্রান্তে পদ্মাসেতুর প্রকল্পের সমাপনী উপলক্ষে সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, পদ্মাসেতুর সাথে যারা জড়িত, যারা জমি দিয়েছেন, তাদের প্রতি ধন্যবাদ জানাতে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছি। এটি সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানানোর অনুষ্ঠান। পদ্মাসেতুর সমাপনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সেতু বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. মনজুর হোসেন। প্রকল্পের বিস্তারিত তুলে ধরেন পদ্মা বহুমুখী সেতুর প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম। অনুষ্ঠানের শুরুতেই পদ্মাসেতুর থিমসং প্রচার করা হয়। এছাড়া পদ্মাসেতুর ওপর একটি প্রামাণ্য চিত্র দেখানো হয়। সুধী সমাবেশে সেতুমন্ত্রীর ও সেতু মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা স্মারক প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতু বিভাগের বিভিন্নস্তরের কর্মকর্তা, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও সেতুৃ সংশ্লিষ্টরা এবং আমন্ত্রিত অতিথিগণ। উল্লেখ্য, পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছে গত ৩০ জুন। সে উপলক্ষে একটি সমাপনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সেতু বিভাগ। পদ্মা সেতুর উত্তর থানা সংলগ্ন মাঠে এই সমাপনী অনুষ্ঠান ও সুধী সমাবেশের আয়োজন করা হয়। এই একই মাঠে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন ও রেল সংযোগ প্রকল্পের অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সুধী সমাবেশে অংশ নেওয়ার জন্য দুই থেকে আড়াই হাজার সুধীজনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। এছাড়া বিভিন্ন পর্যায়ের অতিথিসহ প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত আছেন।
এর আগে, গত ৩ জুলাই পদ্মা বহুমুখী সেতুর সমাপনী অনুষ্ঠানের জন্য ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে হাতে নেওয়া কার্যক্রমগুলোর ব্যয় সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে করার অনুমোদন দেয় অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।
২৩ বছর আগে ২০০১ সালের ৪ জুলাই মাওয়ায় ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর সেখানেই প্রকল্পের সফল সমাপ্তি ঘোষণা করলেন প্রধানমন্ত্রী। এখন দিনরাত পদ্মার বুক চিরে চলছে ট্রেন ও যানবহন। যে স্বপ্ন ধারণ করে গড়ে উঠেছিল পদ্মা সেতু, সেই স্বপ্নের বাস্তবতা এখন প্রচণ্ডভাবে দৃশ্যমান পদ্মার বুকে। সেতুর দুই তীরে গড়ে ওঠা পর্যটন কেন্দ্র, শিল্প স্থাপন এবং সহজ যাতায়াত ব্যবস্থার কারণে মানুষের জীবনযাত্রায় এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে।
মুন্সীগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপক সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি বলেন, বাঙালির সক্ষমতার স্মারক পদ্মা বহুমুখী সেতু। সেতুর সড়ক ও রেল পথের সুফল ছাড়াও হাইভোল্টের লাইনে রামপাল ও পায়রার বিদ্যুৎ আসছে রাজধানী ঢাকায়। মিলছে দ্রুতগতির ইন্টারনেট এবং ফোন সুবিধাও। নদী শাসনে বন্ধ এখন পদ্মার ভাঙন। দ্যুতি ছড়াচ্ছে সেতুর ৫টি পুনর্বাসন কেন্দ্র। আর সেতু জুড়ে ৭৬০ মিলিমিটার ব্যসের গ্যাস লাইনও প্রস্তুত। সব কাজই সম্পন্ন এখন। সাগুফতা ইয়াসমিন বলেন, পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজে চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ করেছে। তাদের সাথে চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ায়, তারা এখন দেশে চলে যাবেন। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা মুন্সীগঞ্জবাসীকে অনেক দিয়েছেন, আরও দিতে চেয়েছেন। মুন্সীগঞ্জবাসী প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞ। তিনি আমাদের পদ্মা সেতু দিয়েছেন। মুন্সীগঞ্জে রেল চলবে, এটা কেউ স্বপ্নেও ভাবেনি। এখন আমাদের সব স্বপ্ন সত্য হয়েছে। ২০০১ সালের ৪ জুলাই মাওয়ায় ভিত্তিপস্তর স্থাপন ও নিজস্ব অর্থায়নে নির্মাণ শেষে ২০২২ সালের ২৫ জুন এই স্থানে পদ্মা সেতুর শুভ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।