আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চাঁপাইনবাবগঞ্জ -২ (নাচোল-গোমস্তাপুর-ভোলাহাট) আসনে বর্তমান ও সাবেক সাংসদের মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বীতার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসায় চলছে শেষ মূহুর্তের প্রচার-প্রচারনা, জনসংযোগ ও পথসভা। এ আসনে মোট ৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দীতা করছেন। এর মধ্যে দলের মনোনয়ন বঞ্চিত স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক সাংসদ গোলাম মোস্তফা বিশ্বাস (ঈগল পাখি) ও বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী জিয়াউর রহমানের মধ্যেই মূল প্রতিদ্বন্দ্বীতা হবে। দুজনই একই দলের অনুসারী হওয়ায় এর উত্তাপ নির্বাচনে পড়বে বলে অনেকে মনে করছেন। এ আসনে চির রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দী আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও বর্তমান সংসদ সদস্য জিয়াউর রহমানের সাথে স্বতন্ত্র প্রার্থী (ঈগল পাখি) দশম সংসদের সাবেক সাংসদ ও গোমস্তাপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি গোলাম মোস্তফা বিশ্বাসের দ্বন্দ্ব পুরোনো। দলের দুই জন প্রার্থী মূল প্রতিদ্বন্দী হওয়ায় নেতা-কর্মীরা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছে। তারা ইতিমধ্যে নিজ নিজ অনুসারীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছেন। দলের নেতাকর্মীদের ভোটের পাশাপাশি বিএনপি ও জামায়াতের ভোটারদের কাছে টানতে প্রানপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন দুই প্রার্থী। তবে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী ভোট বর্জন করায় তাদের কর্মী সমর্থকরা ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার বিষয়ে ভোটারদের নিরুৎসাহিত করতে কাজ করছে। নির্বাচনী এলাকায় তারা গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি পালন করছে। এ আসনে অন্য তিন প্রার্থীরা হলেন, বিএনএফের আজিজুর রহমান (টেলিভিশন), জাতীয় পার্টির (লাঙ্গল) আব্দুর রশিদ ও বাংলাদেশ কংগ্রেসের (ডাব) আব্দুল্লাহ আল মামুন। তাদের প্রচার প্রচারণা নেই বললেই চলে। এই আসনে ভোটযুদ্ধে কাগজে-কলমে লড়াইয়ে ৫ প্রার্থীর নাম থাকলেও কার্যত মাঠে সক্রিয় রয়েছেন মু. জিয়াউর রহমান ও গোলাম মোস্তফা বিশ^াস। অন্যদের কথা ভোটাররা শুনেছেন এই পর্যন্ত। এরই মধ্যে এই সংসদীয় আসনে দলীয় পার্থীদের পোস্টার-ব্যানারে ছেয়ে গেছে নাচোল, গোমস্তাপুর ও ভোলাহাট উপজেলা। প্রচারপত্র বিতরণ, সভা-সমাবেশ, উঠান বৈঠক আর গণসংযোগে ব্যস্ত সময় পার করছেন নৌকার প্রার্থী মু. জিয়াউর রহমান ও ঈগল প্রতীকের প্রার্থী মুহা. গোলাম মোস্তফা বিশ^াস। কনকনে শীত উপেক্ষা করে তারা চালিয়ে যাচ্ছেন নির্বাচনী প্রচারণা। ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে নৌকা প্রতীক পেয়েছিলেন বর্তমান জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মু. জিয়াউর রহমান। ওই নির্বাচনে জিয়াউর রহমান জয়লাভ করেন। ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার টিকিট পেয়ে বিজয়ী হয়েছিলেন গোমস্তাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুহা. গোলাম মোস্তফা বিশ^াস। ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবার মু. জিয়াউর রহমান নৌকার টিকিট পেলেও বিএনপি প্রার্থীর কাছে পরাজিত হন। পরে বিএনপির সংসদ সদস্যরা পদত্যাগ করলে গতবছর ১ ফেব্রুয়ারি উপনির্বাচনে আবার নৌকার মনোনয়ন নিয়ে জিয়াউর রহমান বিজয়ী হন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবারো তিনি আওয়ামীলীগের মনোনয়ন পেয়ে নৌকা প্রতীকে লড়াইয়ে নেমেছেন। অন্যদিকে, এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঈগল প্রতীক নিয়ে ভোটযুদ্ধে নেমেছেন মুহা. গোলাম মোস্তফা বিশ^াস। তাই এ আসনের ভোটাররা মনে করছেন, নির্বাচনে ৫ জন প্রার্থী থাকলেও লড়াই হবে মূলত আওয়ামীলীগে-আওয়ামীলীগে অর্থাৎ এই দুজনের মধ্যে। স্থানীয় ভোটারদের মতে, এই আসনে এ দুই প্রার্থীর মধ্যে হাডাহাড্ডি লড়াই হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। আওয়ামীলীগের প্রার্থী মু. জিয়াউর রহমান বলেন, সরকারের নানা উন্নয়নের জন্য মানুষ নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখবে এবং জয়ের মালা পরাবে এই আসনের ভোটাররা বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এ বিষয়ে ঈগল প্রতীকের প্রার্থী মুহা. গোলাম মোস্তফা বিশ^াস বলেন, তিন উপজেলায় আমি ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। দলমত নির্বিশেষে জনগন আমাকে স্বতস্ফুর্তভাবে সমর্থন ব্যক্ত করছে, যদি এ সমর্থন অব্যাহত থাকে তাহলে আমি অবশ্যই জয়লাভ করবো ইনশাআল্লাহ। উল্লেখ্য, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে মোট ভোটার রয়েছেন ৪ লাখ ৩১ হাজার ৭১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ১৪ হাজার ৩৫৬ জন ও মহিলা ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ১৬ হাজার ৭১৫ জন। ভোট কেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়েছে ১৮২টি, নতুন ভোট কেন্দ্র ২৩টি এবং ভোটকক্ষ ৯৯৩টি ও অস্থায়ী ভোটকক্ষ ৩৩টি।