উগ্রবাদ ও ইসলামী রাষ্ট্র গড়ার অঙ্গীকার ও শপথ নিয়ে গড়ে উঠা চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার গোবরাতলা ইউনিয়নের মহিপুর কলেজ মোড়ে কোন প্রকার অনুমোদন ছাড়াই প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের বিদ্যালয় ‘প্রত্যাশা ক্যাডেট স্কুল’ বন্ধ ও পরিচালক শাহ আলমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে অভিযোগ দায়ের হয় ২০২০ সালের জানুয়ারী মাসে। তদন্ত, পত্র প্রেরণসহ নানা পদক্ষেপের কথা জানা গেলেও ৩ বছর পার হয়েছে। এখন পর্যন্ত ওই ‘প্রত্যাশা ক্যাডেট স্কুল’ বন্ধ বা পরিচালকের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। উপরন্ত বিভিন্ন অফিস থেকে ফাইল গায়েভ হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। ফলে খুব আরামেই উগ্রবাদ ও ইসলামী রাষ্ট্র গড়ার কাজটি চালিয়ে যাচ্ছেন ‘প্রত্যাশা ক্যাডেট স্কুল’ কর্তৃপক্ষ। এনিয়ে এলাকার মানুষের মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। সরকারীভাবে দেয়া হচ্ছে বইসহ অন্যান্য সুবিধাও।
‘প্রত্যাশা ক্যাডেট স্কুল’ এর স্কুল ডায়রীতে পাওয়া যায় উগ্রবাদ ও ইসলামী রাষ্ট্র গড়ে তোলার অঙ্গীকার। ডায়রীতে লেখা রয়েছে “হে আল্লাহ আমাকে শক্তি দিন, আমি যেন বাংলাদেশের মানুষের সেবা করতে পারি এবং বাংলাদেশকে একটি ইসলামী রাষ্ট্র হিসাবে গড়িয়া তুলিতে পারি”। এদিকে, স্কুল পাঠদান কালে সাধারণ বই পড়ানো হলেও, গোপনে শিক্ষা দেয়া হয় উগ্রবাদী ও জিহাদী বই বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার গোবরাতলা ইউনিয়নের মহিপুর কলেজ মোড়ে কোন প্রকার অনুমোদন ছাড়াই প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের বিদ্যালয় ‘প্রত্যাশা ক্যাডেট স্কুল’ বন্ধ ও পরিচালক শাহ আলমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে অভিযোগ দায়ের করে স্থানীয় পার্শ্ববর্তী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকগণ। “প্রত্যাশা ক্যাডেট স্কুল” এ অবৈধভাবে শিক্ষার্থী ভর্তি, সরকারী বিনামূল্যে বই সরবরাহ, উগ্রবাদী শিক্ষা প্রদান করে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ভূল বুঝিয়ে জিহাদী শিক্ষা দেয়াসহ নানা অভিযোগে ২০২০ সালের জানুয়ারীতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কাছে একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়। অভিযোগ দায়েরকারী প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে, গোবরাতলা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি সাবেক চেয়ারম্যান মো. আরাফুল ইসলাম আজিজি ও প্রধান শিক্ষক মো. মজিবুর রহমান, মহিপুর এস এ এম উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি গোলাম মাসুম ও প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল আলম, বেহুলা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি মো. আমিনুল ইসলাম ও প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম, দিয়াড় ধাইনগর উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি মো. মুনিরুল ইসলাম ও প্রধান শিক্ষক মো. তালেবুর রহমান, সরজন আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. হাবিবুর রহমান। দায়েরকৃত অভিযোগে বলা হয়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার গোবরাতলা ইউনিয়নের মহিপুর কলেজ মোড়ে ২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠা হওয়া ‘প্রত্যাশা ক্যাডেট স্কুল’ নামে প্রতিষ্ঠান টির প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রদানের কোন অনুমতি নেই। তারপরও স্থানীয় অভিভাবকদের বিভিন্নভাবে প্রলোভন দেখিয়ে শিক্ষার্থীদের ভর্তি করে সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি উগ্রাবাদ ও জিহাদী শিক্ষা দিয়ে আসছে। বিষয়টি এলাকার মানুষ জানতে ও বুঝতে পেরে বেশ কিছুদিন থেকেই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে জানায়। ‘প্রত্যাশা ক্যাডেট স্কুল’ অবৈধ হলেও, সরকারী নীতিমালা মোতাবেক প্রতিষ্ঠা হওয়া প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে বিষদাগার ও মিথ্যা রটনা রটিয়ে অনেক ক্ষতি করে আসছে প্রতিষ্ঠানের পরিচালক জামায়াত-শিবির আদর্শের শাহ আলম। এছাড়াও শিক্ষার মান তেমন না থাকলেও, আন্তর্জাতিক মানের ও সরকারী তালিকাভূক্ত প্রতিষ্ঠান বলে অবৈধ স্কুলে সরকারী বই সরবরাহ, গোপনে প্রশ্নপত্র সরবরাহ করে অভিভাবকদের চোখে ভালো ফলাফলের প্রতারণা করে থাকেন ‘প্রত্যাশা ক্যাডেট স্কুল’ এর পরিচালক মো. শাহ আলম। এদিকে, প্রতিষ্ঠানের পরিচালকের বিরুদ্ধে অবৈধ প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে মোটা অংকের অর্থ উপার্জন ও নিজের জিহাদী আদর্শে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধ করারও অভিযোগ করেন অভিযোগকারীরা। ‘দৈনিক চাঁপাই দর্পণ’ সহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে ‘প্রত্যাশা ক্যাডেট স্কুল’ এর অনিয়ম ও উগ্রবাদ শিক্ষা দেয়ার বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রেক্ষিতে নড়েচড়ে বসে স্থানীয় শিক্ষানুরাগী ও জনপ্রতিনিধি এবং স্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিরা। স্থানীয়ভাবে প্রতিষ্ঠানের সভাপতি, প্রধানগণ ও এলাকাবাসী ‘প্রত্যাশা ক্যাডেট স্কুল’ বন্ধ করে এলাকার মানুষকে জিহাদী মানষিকতা তৈরীর কারখানা উপড়ে ফেলা ও পরিচালক শাহ আলমের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জোর দাবী জানান। উল্লেখ্য, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার গোবরাতলা ইউনিয়নের মহিপুর কলেজ মোড়ে কর্তৃপক্ষের কোনপ্রকার অনুমোদন ছাড়াই ২০১৬ সালে স্থানীয় মৃত রমজান আলীর ছেলে মো. সমসের আলীর জমির উপর গড়ে তোলে “প্রত্যাশা ক্যাডেট স্কুল” নামে প্রাথমিক স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। পরে সেটা নিম্ন মাধ্যমিক এবং মাধ্যমিক পর্যায়ে উন্নিত করা হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত প্রাথমিক বা মাধ্যমিক পর্যায়ে কোন উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নেই প্রতিষ্ঠানটির। তবে, শুধুমাত্র প্রাথমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের বই নেয়ার জন্য একটি কোড নম্বর ব্যবহার করছেন প্রতিষ্ঠানের পরিচালক। দীর্ঘদিন থেকেই কিন্ডার গার্টেন পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালিয়ে আসার পাশাপাশি উগ্রবাদ বিষয় শিক্ষা দেয়ায় স্থানীয় ও পার্শ্ববর্তী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান এবং সাধারণ মানুষ প্রতিবাদ করলেও কোন কর্নপাতই করেন নি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক শিবির নেতা শাহ আলম। সরকারী-বেসরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সম্পার্কে মিথ্যা ও বানোয়াট গল্প বানিয়ে এলাকায় “প্রত্যাশা ক্যাডেট স্কুল” এর আধিপত্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালাচ্ছেন পরিচালক। প্রতিষ্ঠানের অনুমোদনের বিষয়ে “প্রত্যাশা ক্যাডেট স্কুল” এর পরিচালক শাহ আলম প্রতিষ্ঠান চালানোর অনুমতি, শিক্ষা দেয়ার কৌশল, স্থানীয়দের অভিযোগ বিষয়ে কোন সদুত্তর না দিয়ে এলোমেলো উত্তর দেয়ার বৃথা চেষ্টা করেন এবং সঠিক তথ্য দেয়া থেকে বিরত থাকেন। এলাকাবাসীর জোর দাবী এভাবে ‘প্রত্যাশা ক্যাডেট স্কুল’ এ উগ্রবাদ ও ইসলামী রাষ্ট্র গড়ার অঙ্গীকার ও শপথ নিয়ে গড়ে উঠা এমন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার।