চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরে উজান থেকে নেমে আসে ঢলের পানিতে পূনর্ভবা নদীর পানি উপচে পড়ে বিলাঞ্চলে প্রবেশ করায় হাজার হাজার বিঘা জমির উঠতি ইরি-বোরো ধান পানির নিচে তলিয়ে গেছে। সম্প্রতি উপজেলার রাধানগর ইউনিয়নের বিল কুজাইন ও চন্দের বিল এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। গত কয়েক দিনের লাগাতার বৃষ্টিপাতের কারণে সীমান্ত নদী পূনর্ভবা নদীর পানি উপচে পড়ায় বিল দুটিতে পানি প্রবেশ করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। বুধবার ওই এলাকা সরজমিন পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, হঠাৎ করে হাওরাঞ্চলের মত পানি প্রবেশ করায় জমিতে কেটে রাখা ধান নিমজ্জিত হতে দেখে উপস্থিত কৃষকদের মধ্যে হাহাকার করতে দেখা যায়। চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলায় উজানের পানি এসে জমছে পূর্ণভবা নদীতে। ভরা নদীর পানি উপচে হাজার হাজার বিঘা জমির ধান পানির নিচে তলিয়ে গেছে। ধানের ফলন ভালো হয়েও, শ্রমিক সংকটে ভুগছে কৃষকরা। ফলে কয়েকশ কৃষকের কপালে চিন্তার ভাজ পড়েছে।
গোমস্তাপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণের তথ্য মতে, উজানের ঢলে পূর্ণভবা নদী ভরে গেছে। নদীর পানি উপচে উপজেলার রাধানগর ইউনিয়নের বিল কুজাইন, ভাটখোর, রোকনপুর এলাকার প্রায় তিন হাজারেরও বেশি বিঘা জমির ধান পানির নিচে তলিয়ে আছে। উপজেলায় এবারের ইরি-বোরো ধানের মৌসুমে ৪১ হাজার ৮৩২ বিঘা জমিতে বোরো ধানের চাষাবাদ হয়েছে। এর মধ্যে রাধানগর ইউনিয়নে প্রায় ১২ হাজার ৪৭৫ বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষাবাদ করে কৃষকরা।
রোকুনপুরগঞ্জের এলাকার ধাম চাষি মোসলেম উদ্দিন জানান, বিল কুজাইন এলাকায় ৫ বিঘা জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেছিলাম। প্রথম থেকে আবহওয়া ভালো হওয়ায় ফলনও ভালো হয়েছে। গত চার-পাঁচ দিন ধরে বিল কুজাইন এলাকার জমিগুলো উজানের ঢলে ডুবে গেছে। আমাদের এলাকার পূর্ণভবা নদীর গভিরতা কম। খুব দ্রুত উজানের ঢলে নদী ভরে গেছে। নদীর পানি উপচে এলাকার সব ফলস ডুবে গেছে। পূর্ণভবা নদী খনন করে গভিরতা বাড়ালে ধান কাটার সময় পেতাম। আফসোস থাকতো না। এখন আমরা ধান নিয়ে চরম হতাশাগ্রস্থ।
ধান চাষি মাইনুল ইসলাম জানান, রোকনপুরগঞ্জ এলাকায় আমাদের ছয় ভাইয়ের প্রায় ২০ বিঘা জমিকে ধান চাষাবাদ করেছি। কয়েকদিন ধরে উজানের ঢলে পূর্ণভবা নদীর পানি উপচে এসব এলাকার ধানি জমিগুলোর তলিয়ে গেছে। আর কয়েকদিন মাঠে থাকলে ধান কেটে গোলায় ভরতে পারতাম।
এ খারাপ সময়ে ধান কাটার শ্রমিক সংকটও। আর যারা ধান কাটতে চায়, তারা অনান্য সময়ের চেয়ে পারিশ্রমিক বেশি নিতে চায়। ধানগুলো সঠিক সময়ে না কাটতে পারলে, বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। গতবছরেও জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে উজানের ঢল এলাকায় ঢুকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলাম। কিন্তু এবার জুনের আগেই এলাকাগুলো ডুবে কয়েকশ কৃষক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। রাধানগর ইউপির উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফুয়াদ আলী প্রতিবেদককে জানান, রাধানগর ইউপির তিন মৌজায় প্রায় তিন হাজার বিঘা জমির কৃষকের ধান ডুবে গেছে। যতদ্রুত সম্ভব এ সমস্যার সমাধানের লক্ষে কৃষি বিভাগসহ পানি উন্নয়ন বোর্ড কাজ করছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তানভির আহমেদ সরকার জানান, উজানের ঢলে তিন এলাকাজুড়ে কয়েক’শ কৃষকের প্রায় তিন হাজারেরও বেশি বিঘা জমির ধান তলিয়ে গেছে। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করছি। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের কত পরিমাণ জমিন ধান নষ্ট হলো, আমরা খুব শিগগির জানতে পারবো। বিলের ধানগুলো পানিতে তলিয়ে যাওয়া কয়েকদিন হয়ে গেল। এ অবস্থা চলতে থাকলে ধানগুলো রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে।