দেশের ৩১ হাজার ৪৬১টি মন্দির ও মণ্ডপে এবার পূজা হচ্ছে। গতবছর এই সংখ্যা ছিল ৩২ হাজার ৪০৮টি। এর মধ্যে ঢাকা মহানগরে এবার ২৫২টি পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে, গত বছর হয়েছিল ২৪৮টিতে। মাতৃশক্তির বন্দনা করে শারদীয় দুর্গোৎসবের অষ্টমী তিথিতে কুমারী রূপে দেবী দুর্গার আরাধনা করেছেন বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। প্রতি বছরের মতো এবারও সবচেয়ে বড় পরিসরে কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে ঢাকার গোপীবাগে রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠে। শাস্ত্র মতে, মানববন্দনা, নারীর সম্মান ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠা এবং ঈশ্বরের আরাধনাই কুমারী পূজার শিক্ষা। যে ত্রিশক্তিতে বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টি-স্থিতি ও লয়ের চক্রে আবর্তিত হচ্ছে, সেই শক্তি কুমারীতে বীজ আকারে আছে বলে বিশ্বাস করেন সনাতন ধর্মানুসারীরা। এই বিশ্বাসেই তারা কুমারীকে দেবীদুর্গা হিসেবে আরাধনা করেন। সাধক রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব বহু বছর আগে নিজের স্ত্রী সারদা দেবীকে মাতৃজ্ঞানে যে পূজা করেছিলেন, তারই ধারাবাহিকতায় উপমহাদেশের মিশন ও মঠগুলোতে কুমারী পূজা হয়ে আসছে। পূজার আগে কুমারীকে স্নান করিয়ে নতুন লাল শাড়ি, গয়না, পায়ে আলতা, ফুলের মালা এবং অলঙ্কারে সাজানো হয় দেবীরূপে। পদ্মফুল হাতে দেবী পূজার আসনে বসার পর মন্ত্রপাঠ আর স্তুতিতে তার বন্দনা করা হয়।
যেকোনো জাতের মেয়েকেই কুমারী রূপে পূজা করা যেতে পারে উল্লেখ করে পূর্ণাত্মানন্দ বলেন, “তবে স্বত্ত্বগুণসম্পন্না, শান্ত, পবিত্র, সত্যশীল এসব দৈবী সম্পদের অধিকারিণী কুমারীই জগজ্জননীর প্রতিমারূপে গ্রহণের বিধি আছে। শুক্রবার সকাল থেকেই দেবীর ভক্তরা জড়ো হতে থাকেন রামকৃষ্ণ মিশনে। সকালে নবপত্রিকাস্নানসহ পূজার অন্যান্য রীতি পালনের পর বেলা সাড়ে ১০টায় যখন কুমারী পূজা শুরু হয়, তখন মণ্ডপের প্যান্ডেলে তিঁল ধারণের জায়গা ছিল না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তৎপর দেখা যায়। ঢাকের বাদ্য, কাঁসার ঘণ্টা, শঙ্খের আওয়াজ আর উলুধ্বনিতে মুখরিত হয় পূজা প্রাঙ্গণ, চলে ভক্তি গীতি। এছাড়া সকাল থেকেই দেবী দুর্গার আরাধনায় মণ্ডপে চলে পূজা আর চণ্ডীপাঠ। রামকৃষ্ণ মিশনে বেলা সাড়ে ১০টায় শুরু হয় কুমারী পূজা, বেলা সাড়ে ১১টায় অঞ্জলি প্রদান ও প্রসাদ বিতরণের মধ্য দিয়ে পূজার আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়।
রামকৃষ্ণ মিশনের অধ্যক্ষ পূর্ণাত্মানন্দ বলেন, কুমারী পূজা যে কেবল রামকৃষ্ণ মঠই করে থাকে, তা নয়। দুর্গাপূজার অঙ্গরূপে এ পূজা অনেক আগে থেকেই প্রচলিত। কুমারীকে সমগ্র মাতৃজাতির শ্রেষ্ঠ শক্তি উল্লেখ করে তিনি বলেন, পবিত্রতা, সৃজনী ও পালনীয় শক্তি, সকল কল্যাণী শক্তি সূক্ষ্মরূপে রয়েছে কুমারীর মাঝে। তাই কুমারী পূজা। কুমারী প্রতীকে জগজ্জননীর পূজাতে পরম সৌভাগ্য লাভ হয়। সাধারণত এক থেকে ১৬ বছরের মেয়েরা কুমারী পূজার উপযুক্ত। তবে তাদের অবশ্যই ঋতুমতী হওয়া চলবে না বলেও জানান পূর্ণাত্মানন্দ। সনাতন ধর্মের বিশ্বাস অনুযায়ী, মহালয়ার দিন ‘কন্যারূপে’ ধরায় আসেন দশভুজা দেবী দুর্গা; বিসর্জনের মধ্য দিয়ে তাকে এক বছরের জন্য বিদায় জানানো হয়। তার এই আগমন ও প্রস্থানের মাঝে আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী থেকে দশমী তিথি পর্যন্ত পাঁচ দিন চলে দুর্গোৎসব। এ বছর দেবীদুর্গার আগমন হয়েছে দোলায় বা পালকিতে এবং দেবী স্বর্গে গমন করবেন ঘোটকে বা ঘোড়ায়। পঞ্জিকা মতে, এবার মহানবমী পূজার পরই দশমীর বিহিত পূজাও হবে। তবে বিজয়া দশমী উদ্যাপন হবে রোববার এবং ওইদিন বিকালে প্রতিমা বিসর্জনের জন্য বিজয়ার শোভাযাত্রা বের করা হবে। পূজা উদ্যাপন পরিষদ জানিয়েছে, দেশের ৩১ হাজার ৪৬১টি মন্দির ও মণ্ডপে এবার পূজা হচ্ছে। গতবছর এই সংখ্যা ছিল ৩২ হাজার ৪০৮টি।