চাঁপাইনবাবগঞ্জের পদ্মা নদীর বাঁধ রক্ষা ও মোহনা পার্ক সংলগ্ন অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জে। বুধবার দুপুরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ কোর্ট চত্বর থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার চরাঞ্চলের চর-আলাতুলি, দেবিনগর ও শাহজাহানপুর ইউনিয়নের সাধারণ মানুষ। মানববন্ধন শেষে বালুমহাল ইজারা বাতিল ও অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করে ফসলি জমি ও বসত-ভিটা রক্ষার জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মো: মোখলেসুর রহমান। মানববন্ধন কর্মসূচিতে নবীর আলীর সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন আফসারুল আলম, মাওলানা কাওসার আলী, ফয়সাল হোসেন, আব্দুল জলিলসহ অন্যরা। পরে জেলা প্রশাসকের হাতে স্মারকলিপি তুলে দেন ভুক্তভোগীরা। বক্তারা বলেন, শাহজাহানপুর ইউনিয়নের মোহনা পার্ক সংলগ্ন দুর্লভপুর-হাকিমপুর এলাকায় পদ্মা নদীর তীর ঘেঁষে প্রতিদিন ড্রেজার মেশিন দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে। এতে নদীর তীর ও বাঁধ ভেঙে কয়েক হাজার বিঘা ফসলী জমি, স্থাপনা, বসতবাড়ী ও প্রতিষ্ঠান নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। চর-আলাতুলি, দেবিনগর ও শাহজাহানপুর ইউনিয়নের নদী তীরবর্তী কয়েকশ বাড়িঘর এখনও হুমকির মধ্যে রয়েছে। নদী ভাঙন থেকে রক্ষার জন্য অবিলম্বে বালু উত্তোলন বন্ধের জোর দাবি জানান।
মানববন্ধন কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, ক্ষমতাচ্যুত সরকারের একটি প্রভাবশালী মহল শাহজাহানপুর ইউনিয়নের মোহনা পার্ক সংলগ্ন দুর্লভপুর-হাকিমপুর এলাকায় পদ্মা নদীর তীর ঘেঁষে প্রতিদিন ড্রেজার মেশিন দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে। এতে নদীর স্বাভবিক গতি বিঘ্নিত হয়ে তীর ও বাঁধ ভেঙে কয়েক হাজার বিঘা ফসলী জমি, স্থাপনা, বসতবাড়ী ও প্রতিষ্ঠান নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। চর-আলাতুলি, দেবিনগর ও শাহজাহানপুর ইউনিয়নের নদী তীরবর্তী কয়েকশ বাড়িঘর এখনও হুমকির মধ্যে রয়েছে। এছাড়াও, চাঁপাইনবাবগঞ্জের অন্যতম বিনোদনকেন্দ্র মোহনা পার্কও চরম হুমকির মধ্যে রয়েছে। বক্তারা আরো বলেন-সরকার প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনে বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন ২০১০ এ বালু উত্তোলন সংক্রান্ত বিধানের ৫(২) এ বালু উত্তোলনের যেসকল নীতিমালা রয়েছে, তার তোয়াক্কা না করে অবৈধধভাবে বালু তোলা হচ্ছে। মানববন্ধন কর্মসূচিতে পদ্মা নদীর ভাঙনে ভুক্তভোগী অংশগ্রহণকারী কৃষক-শ্রমিক, পেশাজীবী, ছাত্র জনতা বালুমহাল বন্ধের দাবিতে বিভিন্ন শ্লোগান দিতে থাকে। শ্লোগানে তাঁরা বলেন- ‘অবৈধ বালু উত্তোলন, মানি না মানব না, স্বৈরাচারের দালালেরা-হুশিয়ার সাবধান, পালিয়ে গেছে হাসিনা-বালু উত্তোলন মানি না, প্রশাসন যেওনা ভুলি-রক্ষা করি আলাতুলি, বালুমহাল বাতিল চাই-বাতিল করো করতে হবে, বালু উত্তোলনে জড়িতদের-শাস্তি চাই দিতে হবে, ভেঙে যাওয়া বাঁধের-সংস্কার চাই করতে হবে।’
বক্তারা আরও বলেন-গত ৫ আগস্ট দেশে ছাত্রজনতার বিপ্লবের মাধ্যমে স্বৈরাচার-ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের দীর্ঘ ১৫ বছরের ক্ষমতার অবসান ঘটে। শেখ হাসিনা ও তার পেটোয়া বাহিনী ক্ষমতা ও অর্থের লোভে দেশকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। ক্ষমতার অপব্যবহার ও পেশি শক্তির বলে সৈরাচার আওয়ামীলীগ সরকার দেশের অন্যান্য জায়গার মতো চাঁপাইনবাবগঞ্জেও ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। তারই অংশ হিসেবে তারা পদ্মা নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে নদীর গতিপথ পরিবর্তন করেছে। এতে তীর রক্ষা বাঁধ ভেঙ্গে শাহজাহানপুর, দেবিনগর ও চর আলাতুলি ইউনিয়নের পদ্মা নদীর তীরবর্তী মানুষ হুমকির মধ্যে পড়ে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার রানীনগর, হাকিমপুর ও দুর্লভপুর এলাকায় পদ্মা নদী থেকে বিভিন্ন সময় অবৈধভাবে বালু তোলা হচ্ছে। এতে ভাঙছে পদ্মা নদীর তীর, বিলীন হচ্ছে জনপদ, রক্ষা পায়নি তীর রক্ষা বাঁধও। ইজারা সীমার বাহিরে কয়েক বছর থেকে ক্ষমতার দাপটে শাহজাহানপুর ইউনিয়নের মোহনা পার্ক সংলগ্ন নদীর তীর ঘেষে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছিলো এবং পাশর্^বর্তী হাকিমপুর বিওপি ক্যাম্পে অভিযোগ জানালেও তারা সহযোগিতা না করে উল্টো আমাদেরই হুমকি দেন। কিন্তু সম্প্রতি ২০২৪ এ ছাত্রজনতার বিপ্লবের পর মূল মালিক পলাতক। বর্তমানে শাহজাহানপুর ইউনিয়নের কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি প্রশাসনের আইন অমান্য ও স্থানীয় সাধারণ জনগণের বাধা উপেক্ষা করে প্রভাব খাটিয়ে আওয়ামীলীগ নেতা, সাবেক চেয়ারম্যান ও অন্যান্য নেতাদের যোগসাজসে অবৈধভাবে নদীর কোল ঘেষে বালু উত্তোলন করছে। এরই মধ্যে নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে চর-আলাতুলি, দেবিনগর ও শাহজাহানপুর ইউনিয়নের কয়েক হাজার বিঘা ফসলী জমি, স্থাপনা, বসতবাড়ী ও প্রতিষ্ঠান।
এখনও হুমকির মধ্যে রয়েছে কয়েকশ বাড়িঘর। স্বৈরাচারের মদদপুষ্ট বালুমহাল ইজারা গ্রহণকারী মূল মালিক পলাতক হওয়ায় শাহজাহানপুর ইউনিয়নের প্রভাশালী কয়েকটি গ্রুপ নতুন করে দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আবার বালু উত্তোলন শুরু করেছে। স্থানীয় জনগন বাধা দিলে তারা প্রাণ নাশের হুমকি দিয়েছে। শাহজাহানপুর ইউনিয়নের নরেন্দ্রপুর, হরিশপুর ও হুররো পাড়ায় ভুক্তভোগী দুর্লভপুর-রানীনগর গ্রামের বাসিন্দাদের কয়েকবার আটকে রেখে হুমকি দিয়েছে এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখেছে। এ বিষয়ে উপজেলা প্রশাসন ও থানায় অভিযোগ করলে এবং গ্রামবাসীর তীব্র বাধায় কয়েকদিন বালু উত্তোলন বন্ধ থাকলেও পরবর্তীতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-রাজশাহী থেকে সন্ত্রাসী এনে আবার অবৈধভাবে বালু উত্তোলন শুরু করে। গত ১২ অক্টোবর অস্ত্রসহ মোহনা পার্কে সন্ত্রাসীরা আসলে জনগণের বাধার মুখে পালাতে বাধ্য হয়। এখনও তারা বিভিন্ন মাধ্যমে হুমকি দিচ্ছে এবং যেকোন মূল্যে অবৈধভাবে বালু তুলতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।
শেষে স্মারকলিপি প্রদানকালে জেলা প্রশাসক অবৈধ বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আশ^স্ত করেন। জেলা প্রশাসক মোঃ আব্দুস সামাদ বলেন, সরেজমিনে জেলা প্রশাসন তদন্ত করে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিবেন। যে কোন মূল্যে ফসলী জমি, বাঁধ ও নদীর তীর রক্ষা করা হবে। প্রয়োজনে পদ্মা নদীতে বালুমহাল ইজারা বাতিল করা হবে।