পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডে (পাউবো) বিপুল পরিমাণ টাকাসহ দুই উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলীকে আটক করেছে পুলিশ। উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যায় ঠিকাদার রাজিব ও কনকসহ কয়েকজন। এসময় ৫ লাখ ৭০ হাজার টাকা জব্দ করা হয়। মঙ্গলবার দুপুরে পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলীর কার্যালয় থেকে তাদের আটক করা হয়। দিনভর নানা তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ ও জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সন্ধ্যায় তাদেরকে পাবনা সদর থানা পুলিশী হেফাজতে নেয়া হয়। আটককৃতরা হলেন-দাপুনিয়া ইউনিয়নের টিকশাইল গ্রামের মিনহাজুল ইসলামের ছেলে পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) মাসুদ রানা (২৯) এবং কুমিল্লার মেঘনা থানার শিবনগরের আনোয়ার হোসেনের ছেলে পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) মোশাররফ হোসেন (৪২)। প্রত্যেক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার সকালে ঠিকাদার ও কর্মকর্তাদের যোগসাজশে ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডে অনুসন্ধ্যানের কাজে যান কয়েকজন সাংবাদিক। উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মাসুদ রানার কক্ষে গেলে ওই কক্ষ ভেতর থেকে বন্ধ পাওয়া যায়। কয়েকবার নক করার পর মাসুদ রানা দরজা খুলেন। ভেতরে ঠিকাদার ও স্থানীয় কমিশনার আরিফুজ্জামান রাজিব ও উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মোশাররফসহ কয়েকজনকে দেখা যায়। এ সময় টেবিলে বিপুল অর্থও দেখতে পান সাংবাদিকরা। এরপরই আরেক ঠিকাদার কনক হাজির হন। সরকারি অফিসে ঠিকাদারের সঙ্গে বন্ধ কক্ষে কিসের অর্থ লেনদেন হচ্ছে জানতে চান সাংবাদিকরা। কিন্তু কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি তারা। বিষয়টি সন্দেজনক মনে হওয়ায় পুলিশকে জানায় ওই সাংবাদিকরা। পুলিশ এসে পৌছানোর আগেই দুই ঠিকাদার পালিয়ে যান। পরে পুলিশ এসে দুই প্রকৌশলীকে আটক করে এবং দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদককে খবর দেন। সেখানেই দিনভর জিজ্ঞাসাবাদ করে তাদের কাছ থেকে নানা তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেন দুদক ও পুলিশ। পরে সন্ধ্যার দিকে তাদের আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। আনিছুর রহমান মারুফ আরেক ঠিকাদার বলেন, ‘প্রত্যেক অফিসের কাজে কর্মকর্তাদের বিশেষ কমিশন দিতে হয়। কাজের শুরু থেকে ধাপেধাপে এসব টাকা দিতে হয়। না দেয়া হলে কাজে বিল আটকে দেওয়া হয়।’ পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সুধাংশু কুমার সরকার বলেন, ঘটনাটি জানতে পেরেছি। দুদক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিষয়টি দেখছেন। কোথাকার টাকা, কীভাবে লেনদেন হলো সে বিষয়ে খোঁজ নিয়ে সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। পাবনা সদর থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ রওশন আলী বলেন, ‘পাবনা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সৈকত আফরোজ ভাই আমাদের ফোন করে জানান, সেখানে ঘুষের টাকা লেনদেন হচ্ছে। এমন খবর পেয়ে আমরা সেখানে গিয়ে ৫ লাখ ৭০ হাজার টাকাসহ তাদের আটক করে থানায় নিয়ে আসি। তাদের আরও জিজ্ঞাসাবাদ করে সত্যতা পেলে দুই প্রকৌশলী এবং ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে, এবিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন, পাবনা শাখার কর্মকর্তারা কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।