ফুটবলের রাজা পেলে আর নেই। ফুটবল প্রেমীদের মায়া কাটিয়ে পরপারে পাড়ি দিয়েছেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিলো ৮২ বছর। সাও পাওলোর আলবার্ট আইনস্টাইন হাসপাতালে বৃহস্পতিবার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন একমাত্র ফুটবলার হিসেবে তিনটি বিশ্বকাপ জয়ী পেলে। ফুটবল মাঠের মহানায়ক, সর্বজয়ী পেলে দুরারোগ্য ক্যান্সারের বিপক্ষে লড়াইয়ে হেরে গেলেন। থেমে গেল রঙিন পথচলা। পুরো নাম এদসন আরান্তেস দো নাসিমেন্তো। তবে বিশ্বের বুকে লাখো কোটি ফুটবলপ্রেমীর কাছে তিনি পেলে নামেই পরিচিত। তার নামের পাশে জ্বলজ্বল করছে ফুটবল বিশ্বের রেকর্ড এক হাজার ২৮১টি গোল, যা আজও ভাঙতে পারেনি কেউ। ফুটবলের রাজা পেলের মৃত্যুতে ব্রাজিলে ৩দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে। খালি পায়ে ফুটবল মাঠে পদচারণায় শুরু, বল পায়ে জাদুকরী ছোঁয়ায় গ্রাম-শহর ছাড়িয়ে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্বের বুকে আলো ছড়িয়ে কেবল ফুটবলেই নয়, ক্রীড়াজগতের সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে ওঠা এক নাম পেলে। জীবন-মৃত্যুর লড়াইয়ে হেরে গেলেন কিংবদন্তি। গত মাসের শেষদিন থেকে এই হাসপাতালেই চিকিৎসা চলছিল তার। হাসপাতালে তাকে ভর্তি করানোর সময় গণমাধ্যমে খবর আসে, তার অবস্থা গুরুতর। বিশেষ তত্ত্বাবধানে রাখা হয়েছে তাকে। তবে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তার মেয়ে কেলি না কেলি নসিমেন্তো জানান, নিয়মিত চিকিৎসার অংশ হিসেবে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে তার বাবাকে। এরপর থেকে মাঝেমধ্যে পেলের সন্তানরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাবার শারীরিক অবস্থার কথা জানায়। শুরুতে ফুটবল জাদুকর, পরে ফুটবল দূত হিসেবে প্রায় সাত দশকের ক্যারিয়ারে ফুটবলের মাঝেই ছিলেন পেলে। কিছুদিন আগে প্রকাশিত চিকিৎসকদের রিপোর্ট ও পরিবারের ভাষ্য থেকে জানা যায়, পেলের ক্যান্সারের অবস্থার অবনতি ঘটেছে। হাসপাতালে তার চিকিৎসা চলবে বলেও জানানো হয়। এবারের বড় দিনও কিংবদন্তির হাসপাতালেই কেটেছে। ব্রাজিল জাতীয় দল, সান্তোস ও নিউইয়র্ক কসমস; বর্ণাঢ্য কারিয়ারে কখনোই চোট বা অসুস্থতা সেভাবে ভোগাতে পারেনি তাকে। কিন্তু শেষ বয়সে এসে শারীরিক নানা সমস্যায় ভীষণ ভুগতে হলো তাকে। শারীরিক কিছু সমস্যা দেখা দেওয়ায় গত বছরের সেপ্টেম্বরের শুরুতে নিয়মিত পরীক্ষার অংশ হিসেবে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল পেলেকে। সেখানেই তার বৃহদান্ত্রে টিউমার ধরা পড়ে এবং অস্ত্রোপচার করা হয়। এরপর নিয়মিত চলছিল চিকিৎসা। এই মাসের শুরুতে চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে বলা হয়, কেমোথেরাপিতে তার শরীর আর সাড়া দিচ্ছে না। এতে তার সুস্থ হয়ে ওঠার আশা একরকম শেষই হয়ে যায়। তবে মাঠে হার মানতে না জানা পেলে হাসপাতালেও বিছানায় শুয়েও ছিলেন ভীষণ শক্ত। কাতার বিশ্বকাপ চলাকালীন নিয়মিত উত্তরসূরিদের শুভকামনা জানাতে, প্রেরণা জোগাতে দিয়েছেন বার্তা। এমনকি ফাইনালে ফ্রান্সের বিপক্ষে আর্জেন্টিনার রোমাঞ্চক জয়ের পর চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী অভিনন্দন জানাতে ভুল হয়নি তার। এতদিন নিজের যেই ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্ট থেকে ভক্ত-সমর্থক, বন্ধু-প্রিয়জনদের বার্তা দিতেন, সেই অ্যাকাউন্ট থেকেই বৃহস্পতিবার রাতে দেওয়া হলো শেষের খবর। অনুপ্রেরণা আর ভালোবাসাই ছিল রাজা পেলের যাত্রার পাথেয়, যিনি আজ শান্তিতে বিদায় নিয়েছেন। তার জীবনযাত্রায়, এদসন বিশ্ববাসীকে তার জাদুকরী ক্রীড়াশৈলী দিয়ে মন্ত্রমুগ্ধ করেছেন, একটা যুদ্ধ থামিয়েছেন, সারা বিশ্বে সামাজিক কর্মকাণ্ড চালিয়েছেন এবং ছড়িয়ে দিয়েছেন ভালোবাসা।